আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশুর রোগ বালাই এর সীমা নেই। শিশুর কোমল শরীর খুব অল্পতেই অসুস্থ হয়ে যায়। তাই শিশুর পরিচর্যার বেলাতেও কোন কমতি হওয়া যাবে না। যারা অতি সম্প্রতি মা হয়েছেন তাদের জন্যে আশা করি এই লেখাটি খুবই দরকারি হবে। শিশুকে সঠিক সময়ে সব গুলো টিকা দিন। সরকার বছরে একদিন জাতীয় টিকা দান দিবস হিসেবে পালন করে। পাশাপাশি আরও একদিন টিকা দেয়া হয় যাতে একটি শিশুও বাদ না যায়।
WHO (world health organization) শিশুদের রোগ প্রতিরোধের জন্যে EPI (expanded progam on immunization) ১৯৭৪ সালের মে মাসে চালু করে। এর ১০ বছর পরে, ১৯৮৪ সালে আসল টিকাগুলোর জন্যে (BCG, Diphtheria-tetanus-pertussis, oral polio and measles) টিকা শিডিউল তৈরি হয়। বর্তমানে আরও নতুন কিছু টিকা সংযোজন করা হয়েছে , hib (haemophilus influenzae type b and hepatitis B)। কোন টিকা কোন সময়ে টিকা দিতে হবে তাই নিয়ে এখন কথা বলব।
বিসিজি টিকাঃ
শিশুর জন্মের সাথে সাথে সেই দিনই দিতে হবে। এটি একবারই দেয়া হয় অর্থাৎ এর ডোজ একটিই। বাম হাতের কাধের কাছের হাতের অংশের চামড়ার নীচে দেয়া হয়। এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে, যেমন ক্ষত হয়ে যাওয়া, লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া।
পোলিও টিকাঃ
এটি বিসিজির মত ইঞ্জেকশন নয় বরং এটি মুখে খাওয়ানো হয়। এর সাথে সরকার একটি ভিটামিন এ ক্যাপসুল ও খেতে দেয়। এর ডোজ ৪ টি । ৬ , ১০, ১৪ সপ্তাহ, ৯ম মাস । পোলিও খুব মারাত্মক ব্যাধি, এক কথায় একটি পরিবারের জন্যে অভিশাপ সরূপ । খুব সহজেই এটি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব ।
এমএমআর টিকা (মাম্পস, মিজলস, রুবেলা)
চামড়ার নীচে বা মাংস তে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে দেয়া হয়। ১২ থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দিতে হবে। এর মধ্যে মিজলস বা হামের টিকা দিতে হবে ৯ম মাসে। ৪ থেকে ৬ বছরে একটি বুস্টার ডোজ দিতে হবে। এর খুবই বিরল কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে। অ্যালার্জি , চামড়ায় র্যাশ হওয়া, টিকা স্থানে ব্যথা ও লাল হওয়া, ফুলে যাওয়া।
ডিপথেরিয়া, টিটেনাস ও পারটুসিসঃ
তিনটি ডোজ, ৬, ১০ ও ১৪ তম সপ্তাহে। পারটুসিস ( হুপিং কাশি ) টিকা দেয়ায় অনেকে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। এর প্রতিক্রিয়া বেশি। যাদের এই প্রবনতা বেশি বা শরীর দুর্বল তাদের শুধু প্রথম দুটির জন্যে টিকা দেয়া হয়। টিটেনাস বা ধনুষ্টংকার হলে মানুষ তার দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজও আর করতে পারে না। তাই এই টিকা খুবই জরুরী।
হেপাটাইটিস বি ও হিব টিকাঃ
তিনটি ডোজ, ৬, ১০ ০ ১৪ সপ্তাহে দিতে হবে। হেপাটাইটিস টিকা বড় হয়ে লিভার ক্যান্সার হওয়া কে প্রতিরোধ করে। আর হিব টিকা নিউমোনিয়া ও মেনিনজাইটিস কে প্রতিরোধ করে।
এছাড়াও বাচ্চাদের আরও কিছু অসুখের প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়েছে। রোটা ভাইরাস এর প্রতিষেধক দিতে হবে। বাচ্চাদের ডায়রিয়ার প্রধান কারণ রোটা ভাইরাস। প্রতি বছর অনেক শিশু এই ভাইরাসের ইনফেকশনে মারা যায়। Rotarix (glaxosmithkline) ও Rotateq(Merck) রোটা ভাইরাসের দুটি কার্যকরী প্রতিষেধক। ২০০৯ সালের ৫ জুন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সকল টিকা কর্মসূচিতে রোটা টিকা দেয়ার জন্যে পরামর্শ দিয়েছে। Rotateq এর তিনটি ডোজ। প্রথম ডোজ ৬ থেকে ১২ সপ্তাহে এবং পরবর্তী ডোজ গুলো ৪ থেকে ১০ সপ্তাহ অন্তর অন্তর এবং শেষ ডোজ অবশ্যই ৩২ সপ্তাহের পরে দেয়া যাবে না। এগুলো সবই মুখে খাওয়ার জন্যে তরল প্রিপারেশন।
আরেকটি টিকা দিলে ভালো – Pneumococcal vaccine; আজকালকার সচেতন বাবা মায়েরা দিচ্ছেন। ছোট বাচ্চাদের মারা যাওয়ার কারণ হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বর্তমানে নিউমোনিয়া বা Acute respiratory tract infection কে এক নম্বর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পূর্বে বাচ্চারা ডায়রিয়া তে সবচেয়ে বেশি মারা যেত।
প্রেগন্যান্ট অবস্থায় টিটি টিকা নিতে হবে যেন বাচ্চার ধনুষ্টংকার না হয়।
যদি আগে কোন টিকা নেয়া না থাকে তবে সবগুলোই দিতে হবে। জানা না থাকলে কমপক্ষে দুটি ২য় ও ৩য় ট্রাইমেস্টারে দিতে হবে। ১৫-৪৯ বছরের মহিলাদের গর্ভধারণের পূর্বেই ৫ টি টিটি ডোজ নিতে হবে। ১ম টির ১ মাস পরে ২য় টি, তারও ১ মাস পরে ৩য় টি, তার ৬ মাস পরে ৪র্থ টি ও শেষ ডোজ তার ১ বছর পরে দিতে হবে।
শেষকথা হিসেবে কিছু জরুরী কথা বলতে চাই। একটি সন্তানের জন্যে সবচেয়ে বড় প্রতিষেধক হচ্ছে মায়ের দুধ। মায়ের দুধে অনেক প্রয়োজনীয় উপাদান আছে যা বাচ্চাকে অসুখ থেকে দূরে রাখে। প্রথম ৬ মাস বাচ্চাকে শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। ৬ মাসের পর থেকে অল্প অল্প করে নরম খিচুড়ি, ভাতের মাড়, নরম শাকসবজি, মাছ মাংস খাওয়াতে হবে।
লিখেছেনঃ শারমিন আখতার চৌধুরী
ছবিঃ পিপারস্যুপ.অর্গ