ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে আমরা কে না চাই! আর এই উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে গিয়ে আমরা ব্যবহার করি নানা ধরনের কেমিক্যাল প্রোডাক্ট, যা অনেক সময় উপকার করার থেকে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এইসব ক্ষেত্রে ভেজিটেবল পিল ফেসিয়াল প্যাক সবচেয়ে নিরাপদ। এখন ভাবছেন ভেজিটেবল পিল মাস্ক কিভাবে ব্যবহার করবেন? চলুন জেনে নেওয়া যাক ভেজিটেবল পিল ফেসিয়াল-এর কিছু উপকারিতা ও ব্যবহার পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত!
ভেজিটেবল পিল ফেসিয়াল-এর উপকারিতা
- দাগ দূর করে– যাদের মুখে ব্রণের দাগ বা অন্য কোন দাগ আছে, যাদের পিগমেন্টেশন (pigmentation)-এর সমস্যা আছে তাদের জন্য এই ফেসিয়াল-টি জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।
- শুষ্কতা– এই ফেসিয়াল ত্বকের শুষ্কতা দূর করে।
- ব্রণ কমায়– যাদের ব্রণের সমস্যা আছে তাদের ব্রণ হওয়ার প্রবণতা কমিয়ে দেয়।
- দূষণ মুক্ত করে– ত্বককে এক্সফলিয়েট (Exfoliate) করে এবং ত্বকের সব দূষিত পদার্থ বের করে আনে।
ভেজিটেবল পিল ফেসিয়ালের ৩টি ধাপ
১) ক্লিঞ্জিং ও এক্সফলিয়েটিং
ভেজিটেবল পিল ফেসিয়াল (peel facial)-এর উপকারিতা ভোগ করার জন্য ত্বককে প্রথমে তৈরি করে নিন। ভালো মানের কোন ক্লিনজার (cleanser) নিন। মুখে এবং গলায় হালকা হাতে সার্কুলার মোশন-এ (Circular Motion) ম্যাসাজ করুন। তারপর কিছুটা সময় মুখে ঐভাবে রেখে দিন। এতে ক্লিনজার আপনার ত্বকের উপর কাজ করবে আর ব্লাড সারকুলেশন (blood circulation)-এর গতিকে আরও ত্বরান্বিত করবে। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এরপর এক্সফলিয়েট জরুরী। এতে আপনার ত্বকের সব মরা কোষ (Dead Cell) দূর হবে আর যে মাস্ক দেয়া হবে তার উপকারিতা সম্পূর্ণ রূপে পাওয়া যাবে। তারপর উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
২) স্টিমিং
আপনার ত্বককে গভীর থেকে পরিষ্কার করার জন্য স্টিম (Steam) নেয়া জরুরী। ১০-১৫ মিনিট ধরে গরম পানির ভাপ নিন মুখে।
৩) ফেসিয়াল মাস্কের ব্যবহার
উপরের দুটি ধাপ সম্পন্ন করে ফেসিয়াল মাস্ক লাগাতে হবে। নীচের রেসিপিগুলো থেকে আপনারা আপনাদের পছন্দমত বা ত্বকের সাথে মানানসই রেসিপিটি বেছে নিতে পারেন।
১. কিউকাম্বার পিল মাস্ক
একটি ছোট শসা (Cucumber) নিন। শশাটি খোসাসহ ছোট ছোট টুকরো করে নিন। তারপর ব্লেন্ডার-এ ব্লেন্ড করুন। এই পিউরি-টিকে একটি পরিষ্কার কাপড়ে নিয়ে ঝুলিয়ে দিন যেন অতিরিক্ত পানি ঝরে যায়। এবার এর সাথে অ্যালোভেরা জেল, গ্রীন টি আর জেলাটিন (Gelatin) মেশান। শসা এবং অ্যালোভেরাতে আছে প্রাকৃতিক অ্যাসট্রিনজেন্ট (Astringent), যা ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করে। এবার মিশ্রণটি একটি সস প্যানে ঢেলে নাড়তে থাকুন যতক্ষণ না জেলাটিন গলে মিশে যায়। মিশ্রণটিকে ফ্রিজে রাখুন ৩০ মিনিট। এখন অ্যাপ্লাই করার পালা। কিউকাম্বার পিল মাস্ক মুখে এবং গলায় লাগিয়ে ২৫ মিনিট অপেক্ষা করুন তারপর ধুয়ে ফেলুন।
২. পাম্পকিন পিল মাস্ক
মিষ্টি কুমড়ার খোসা ছাড়িয়ে পিস করে নিন। তারপর ১/৪ কাপ পানিতে টুকরোগুলো দিয়ে মাইক্রোওয়েভে হাই দিয়ে ৩ মিনিট রাখতে হবে। যদি মাইক্রোওয়েভ না থাকে তাহলে চুলায় জোরে আঁচে ৬ মিনিট রাখুন। তারপর ঐ সেদ্ধ কুমড়া, ২ টুকরো আনারস, ১ চা চামচ বাদামের তেল, ১ টেবিল চামচ ওটস একসাথে মিশিয়ে ব্লেন্ড করে বানিয়ে গেলুন পাম্পকিন পিল মাস্ক। এখন মাস্কটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রাখুন। তারপর ফেইসওয়াশ ও উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ভালো কোন ময়েশ্চারাইজার (Moisturizer) লাগিয়ে ফেলুন।
৩. টমেটো পিল মাস্ক
একটি মাঝারি সাইজের পাকা টমেটো ব্লেন্ডার-এ লো স্পীডে কয়েক সেকেন্ড ব্লেন্ড করে বানিয়ে ফেলুন টমেটো পিল মাস্ক। মাস্ক-টি মুখে লাগিয়ে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৪. সাইট্রাস পিল মাস্ক
সাইট্রাস পিল-এ (Citrus Peel) আছে গ্লাইকোলিক এসিড (Glycolic Acid), এই এসিড রিঙ্কেল (Wrinkle) এবং ওভার সাইজড পোর (Pore) অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। এবার আসুন রেসিপি-টির তৈরির পদ্ধতি জেনে নেওয়া যাক। খোসা ছাড়ানো একটি লেবুর অর্ধেক নিন। খোসাসহ কাঁচা পেঁপে নিন আধা কাপ। এর সাথে একে একে মিশান এক চামচ মধু ও টকদই এবং সব একসাথে ব্লেন্ড করে তৈরি করুন সাইট্রাস পিল মাস্ক। এই মাস্কটি মুখে লাগিয়ে অপেক্ষা করুন ২০ মিনিট। হয়ে গেল আপনার পিল ফেসিয়াল ! এই ফেসিয়াল করার পর ত্বক এত নরম আর মসৃণ হয়ে যায় যে বারবার নিজের ত্বক ছুঁতে ইচ্ছে করবে। এই পাওয়ারফুল অ্যান্টি–অক্সিডেণ্ট ট্রিটমেন্ট-এর (Anti-oxidant treatment) কারণে ত্বক হবে উজ্জ্বল, দ্যুতিময়।
এবার তাহলে আর পার্লার কেন, ঘরেই করুন ভেজিটেবল পিল ফেসিয়াল! থাকুন সবসময় সুন্দর থাকুন আর বাড়ান আত্নবিশ্বাস!
ছবি- সংগৃহীত: হাইল্যান্ডসনর্থস্পা.কম, সাটারস্টক