শীতে গোসল করাটা একটা বিশাল ডিসিশন মেকিং-এর ব্যাপার। অনেকেই আছেন, শীতে না পারতে গোসলের ধারে কাছেও যান না। হাত পা ধুয়ে কাপড় পালটে বডি স্প্রে দিয়ে কাজ সারতে চান। কিন্তু এগুলোর ক্ষতিকর দিকগুলো ভাবেন না। বলেন, “ধুর গোসল না করলে কিচ্ছু হয় না!” ব্যস! ১৫ দিনের জন্য গোসল বন্ধ! তাহলে এখন জেনে নিন শীতে নিয়মিত গোসল না করার ক্ষতিকারক ৫টি দিক সম্পর্কে।
শীতে নিয়মিত গোসল না করার কুফল
১. জার্ম ইনফেকশন
প্রথমেই আসে জার্ম ইনফেকশন-এর বিষয়। সারাদিন ধরে আমরা নানা ধরনের জিনিসের সংস্পর্শে আসি, হাত দিয়ে ধরি, যেমন- সেলফোন, কি বোর্ড, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, টাকা… আরো নানান জিনিস। এগুলো খুব সহজেই এসব থেকে জীবাণু আমাদের হাত থেকে শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও চলে যায়। তার ওপর যদি কোথাও কোন কাটা ছেঁড়া থেকে থাকে, তাহলে সেখান থেকে জীবাণু রক্তের সাথে মিশে খুব সহজেই আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। সুতরাং, দিন শেষে গোসল না করলে একটা বড় হেলথ রিস্ক থেকেই যায়। ঠাণ্ডার ভয়ে গোসল না করে শেষে দেখবেন, এমনিতেই জ্বর, সর্দি, কাশি বাধিয়ে ফেলেছেন। কারণ এই সিজনে এইসব অসুখের জীবাণু চারপাশে ঘুরে বেড়ায়। তাই বেষ্ট অপশন- রেগ্যুলার শাওয়ার নিন।
২. ত্বকের নানাবিধ সমস্যা
প্রতিদিন গোসল না করলে সারদিনের ধুলোবালি, ঘাম, ডেড স্কিন সেল- এগুলো জমে যায় শরীরে। যাদের একনে প্রবলেম আছে, তাদের জন্যে এই ব্যাপারটা আরো খারাপ হয়ে যায়। একনি ছাড়াও অন্যান্য স্কিন প্রবলেম-এর ঝুঁকিও বেড়ে যায়। স্কিন অনেক বেশি ড্রাই হয়ে ফেটে যায়, একনে, পিম্পল এবং সেগুলো থেকে হয় ব্লেমিশেস।
৩. ত্বকে কালচে ময়লাভাব সৃষ্টি
পর পর কয়েকদিন গোসল না করলে ঘাম আর ধুলো মিশে ত্বকে একটা কালচে ময়লাভাব বা ডিসকালার প্যাচ দেখা যায়, এটা যতই লোশন মাখা হোক না কেন যাবে না। একবার এটা হয়ে গেলে তখন প্রচুর সাবান ঘসাঘসি ছাড়া কোন উপায় থাকে না। এরচেয়ে এটাই ভালো নয় কি যে প্রতিদিন না হোক, অন্তত একদিন পরপর হলেও গোসল করা? ভেবে দেখুন ব্যাপারটা!
৪. ঘামের দুর্গন্ধ
অনেকে বলবেন শীতে তো আমরা ঘামি না, তাই শরীরে ঘামের দুর্গন্ধ আসবে কোথা থেকে? বিষয়টা মোটেও এরকম নয়, শীতে আমরা গরমের সিজনের মত ঘামি না ঠিক। কিন্ত আমাদের ত্বক এবং চুলে থাকা ব্যাকটেরিয়া শরীরের প্রোটিন এবং ফ্যাটি অ্যাসিডকে মেটাবলাইজ করে যেটা আমাদের শরীরে একটা বাজে বডি ওডর তৈরি করে, অনেক সময় আমরা যেটা হয়তো নিজেরা টের পাই না।
৫. শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি
হেলথ রিস্ক-এর পাশাপাশি শীতে নিয়মিত গোসল না করার অন্য সমস্যাও আছে। শীত শীত করে গোসল না করলে আপনার আরো বেশি ঠাণ্ডা লাগবে, কাজে জড়তা আসবে, ঝিমিয়ে পড়বেন, এনার্জি লেভেল কমে যাবে। সারা দিনের পরে একটু উষ্ণ পানি দিয়ে গোসল আপনার শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি দু’টোই দূর করবে। মন ভালো থাকবে এবং অনেক বেশি রিফ্রেশিং ফিল করবেন।
শীতে নিয়মিত গোসল করার কিছু টিপস
অনেক তো হল, শীতে নিয়মিত গোসল না করলে কী কী হতে পারে সেগুলো নিয়ে কথা! এখন এই শীত কাটিয়ে কিভাবে গোসল করবেন, সেটার দু একটা উপায় বলি-
১. পুরনো আমল থেকে চলে আসছে গোসলের আগে তেল মালিশের পদ্ধতি। লোশনের যুগে আমরা সেসব ভুলেই গেছি। তেল মালিশে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, প্লাস স্কিন টাও ময়েশ্চারাইজড হয়ে যায়।
২. এছাড়াও গোসলের আগে হালকা ব্যায়াম করে নিতে পারেন। এতে বেশ ভালো ওয়ার্ম আপ হবে। শরীরের জরতা দূর হবে। তখন বরং নিজেরই ইচ্ছে করবে শাওয়ার নিতে।
৩. গোসলের আগে তোয়ালেটাকে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে গরম করে পেঁচিয়ে রেখে দিন, গোসল শেষে এই গরম তোয়ালে আপনাকে অসম্ভব আরামদায়ক একটা অনুভুতি দেবে।
তাই শীতে নিয়মিত গোসল করুন। ভালো থাকুন, সুস্থ ও সুন্দর থাকুন।
হ্যাপি উইন্টার…।।
ছবি- সংগৃহীত: সাটারস্টক