“অলিভ অয়েল” নামটার সাথে আমরা সবাই পরিচিত, তাই না? সেই ছোটবেলা থেকেই হাত, পা, গায়ে অলিভ অয়েল ব্যবহার করে আসছি আমরা। আমার অলিভ অয়েল এর নাম শুনলেই মনে পড়ে ছোটবেলায় টিনের কৌটা থেকে মা আমাকে অলিভ অয়েল লাগিয়ে দিতো রোজ গোসলের পর। এখন অবশ্য বিভিন্ন রকম প্যাকেজিং আর ব্র্যান্ড এসেছে বাজারে। অলিভ অয়েল বা জলপাই তেল বহু বছর ধরে রূপচর্চায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সেলফ কেয়ার প্রোডাক্টস তৈরির জন্যও এই তেল বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন প্রোডাক্টে ইনগ্রেডিয়েন্ট হিসাবে আমরা এই উপাদানটি দেখে থাকি। অলিভ অয়েল দিয়ে বিউটি হ্যাকস সম্পর্কে জানা আছে কি? এই একটি তেল যে কতভাবে বেনিফিট দিতে পারে, সেটা কিন্তু অনেকেরই অজানা।
অলিভ অয়েলের ম্যাজিকাল সল্যুশন
অলিভ অয়েলে আছে প্রচুর পরিমাণে মিনারেলস, ভিটামিনস এবং ফ্যাটি অ্যাসিড যা স্কিনের ফাইন লাইনস এবং রিংকেলস কমানোর জন্য খুব ভালো কাজ করে। এই তেল ত্বককে রিজুভিনেট করে এবং নারিশড করে। অলিভ অয়েল আমাদের ত্বকের ইলাস্টিসিটি এবং সফটনেস ধরে রাখতে সাহায্য করে। আমাদের ত্বক, চুল এবং নখের জন্য অলিভ অয়েল খুবই উপকারী। চুলের কিউটিকলগুলোকে মসৃণ করে আগা ফাটা রোধ করে চুলকে মোলায়েম ও হেলদি রাখতে অলিভ অয়েলের জুড়ি নেই!
স্কিন ও হেয়ার কেয়ারে অলিভ অয়েলের ম্যাজিকাল সল্যুশন সম্পর্কে তো আমরা জেনে নিলাম, এখন নিশ্চয়ই ভাবছেন কীভাবে ব্যবহার করবেন এই তেল। আর ভাবতে হবে না! আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো অলিভ অয়েল ব্যবহার করার ৫টি দারুণ উপায়। ছোট থেকে বড়, পরিবারের সবাই এই তেলটি ব্যবহার করতে পারেন। চলুন তাহলে জেনে নেই অলিভ অয়েল দিয়ে বিউটি হ্যাকস, যেগুলো ট্রাই না করলেই কিন্তু নয়!
অলিভ অয়েল দিয়ে বিউটি হ্যাকস
১. বডি ময়েশ্চারাইজার হিসেবে
বডি ময়েশ্চারাইজার হিসাবে অলিভ অয়েল কিন্তু বেশ ভালো অপশন। এটি লং টাইম ধরে আপনার স্কিনে ময়েশ্চার ধরে রাখতে হেল্প করবে। কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল আপনার পছন্দের বডি লোশনের সাথে মিক্স করে দুই হাতের তালু একসাথে রাব করে বা ঘষে নিয়ে গোসলের পরে আপনার পুরো শরীরে লাগাতে পারেন। নিয়মিত ব্যবহারে আপনার স্কিন হয়ে উঠবে মসৃণ ও কোমল। আবার গোসলের পানিতে কয়েক ড্রপ অলিভ অয়েল দিয়ে নিতে পারেন। এতে শাওয়ারের সময় আপনার স্কিনের ন্যাচারাল অয়েল লেভেল ঠিকঠাক থাকবে, ড্রাই ফিল হবে না, স্কিন সফট থাকবে। এটি স্কিনকে হেলদি রাখার একটি সহজ ও কার্যকরী উপায়।
২. চুলের যত্নে অলিভ অয়েল
ঘন, কালো, লম্বা চুল কে না চায়? এই ঘন লম্বা চুলের কথা মনে হলেই আমার একটা লাইন মনে পড়ে “কন্যার ছিল দীঘল চুল, তাহার কেশে জবা ফুল!” কিন্তু এই সুন্দর ঘন চুলের জন্যও তো একটু যত্ন করতে হয়। চুলের যত্নে অলিভ অয়েল খুবই ভালো কাজ করে। বিভিন্নভাবে এই তেল আপনি হেয়ার কেয়ারে ইউজ করতে পারেন।
ক) হট অয়েল ট্রিটমেন্টে
কয়েক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল নিয়ে সেটা হালকা গরম করে আপনার চুল এবং মাথার তালুতে লাগিয়ে আলতো হাতে ৫ মিনিট ম্যাসাজ করুন। ৩০ মিনিট রেখে মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করে আপনার চুল ধুয়ে ফেলুন। এই হট অয়েল ট্রিটমেন্ট চুলের গোড়া স্ট্রং করবে, চুলকে ভেতর থেকে মজবুত করে তুলবে। ধীরে ধীরে এক্সেস হেয়ার ফলের প্রবলেমও কমে আসবে।
খ) নারিশিং হেয়ার মাস্ক হিসাবে
চুলের লেন্থ অনুযায়ী পরিমাণমতো অলিভ অয়েল নিয়ে সাথে এক চা চামচ লেবুর রস, এক চামচ মধু এবং একটি ডিমের কুসুম মিক্স করে একটি হেয়ার মাস্ক বানিয়ে নিতে পারেন। এবার এই প্যাক আপনার চুল এবং মাথার ত্বকে লাগিয়ে প্রায় ৩০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। এবার মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে আপনার চুল ধুয়ে ফেলুন। এই হেয়ার মাস্ক সপ্তাহে একদিন লাগালে আপনার চুল হয়ে উঠবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও ঝলমলে।
৩. আই ক্রিমের সাথে অলিভ অয়েল
অলিভ অয়েলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকার কারণে এটা চোখের চারিদিকের ফাইন লাইনস এবং রিংকেলস কমাতে হেল্প করে। চোখের আশেপাশের স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড রাখে। ভালো রেজাল্ট পাবার জন্য রোজ রাতে ঘুমাতে যাবার আগে দুই ফোঁটা অলিভ অয়েল নিয়ে চোখের চারিদিকে ব্যবহার করুন। সকালে ফেইস ওয়াশ দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। আরেকটি কাজ করতে পারেন, এক্সট্রা নারিশমেন্টের জন্য আপনার রেগুলার আই ক্রিমের সাথে এক ফোঁটা অলিভ অয়েল মিক্স করে চোখের এরিয়াতে অ্যাপ্লাই করে নিন।
৪. ফাটা গোড়ালি রিপেয়ারে অলিভ অয়েল দিয়ে বিউটি হ্যাকস
অনেকের সারা বছরই পায়ের গোড়ালি ফাটার সমস্যা দেখা দেয়। অলিভ অয়েল দিয়ে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন খুব সহজেই। পায়ের ফাটা অংশে অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করে নিন। এরপর মোজা পড়ে নিতে পারেন যাতে তেল ফ্লোর বা অন্যকিছুতে না লাগে। এভাবে নিয়মিত অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে খুব দ্রুত গোড়ালি ফাটার সমস্যা কমে যাবে। বাসায় বসে DIY ফুট ম্যাসাজ ক্রিম বানিয়ে নিতে পারেন এই অলিভ অয়েল দিয়েই। মধু, চিনি, অলিভ অয়েল ও লেবুর রস ভালোভাবে মিক্স করে পায়ের পাতায় ম্যাসাজ করে নিন। এতে ডেড সেলস ক্লিন হয়ে যাবে। এই প্রসেসে সপ্তাহে ১ দিন ফুট ম্যাসাজ করলে গোড়ালি ফাটা রিপেয়ার হবে ও সেই সাথে পায়ের ত্বক ময়েশ্চারাইজড থাকবে!
৫. নখের যত্নে অলিভ অয়েল
মেনিকিওরের সময় অনেকেই ন্যাচারাল অয়েল ইউজ করতে পছন্দ করেন। অনেক সময় হাত, পায়ের নখ শুষ্ক হয়ে যায় অথবা একটু বড় হলেই ভেঙে যায়। যারা দ্রুত নখ বড় করতে চান তারা অলিভ অয়েল হালকা গরম করে হাত-পায়ের নখে ২ মিনিট ম্যাসাজ করে নিতে পারেন। এতে নখ হেলদি হবে, ভেঙে যাবার সমস্যা থাকবে না। সপ্তাহে তিন চারদিন এটা করতে পারেন, তাহলে খুব তাড়াতাড়ি ফলাফল পাবেন আশা করি।
তাহলে জেনে নিলেন অলিভ অয়েল দিয়ে বিউটি হ্যাকস যেগুলো ট্রাই না করলেই নয়! সারা বছরই অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যায়। কিন্তু শীতকালে এর চাহিদা যেন একটু বেশিই থাকে, তাই না? ছোট্ট সোনামণির বডি ম্যাসাজেও অলিভ অয়েল নিশ্চিন্তে ব্যবহার করা যায়। আমি রিসেন্টলি রাজকন্যা অলিভ অয়েল ব্যবহার করছি, খুবই ভালো লেগেছে। এর আগে স্কিন ক্যাফে অলিভ অয়েল ইউজ করেছি, সেটাও একদম পিওর ও ন্যাচারাল। আপনি চাইলে আপনার পছন্দমতো প্রোডাক্ট কিনতে পারেন অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে। আবার যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার এবং উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) এ অবস্থিত সাজগোজের চারটি ফিজিক্যাল শপ থেকেও কিনতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি!
ছবি- সাজগোজ