এই তো সেইদিন হাসপাতাল থেকে তোয়ালেতে মুড়িয়ে বাসায় নিয়ে আসলাম ছোট্ট বাবুটিকে। আর আজকে সে কাঁধে ছোট্ট স্কুলব্যাগ নিয়ে হাঁটি হাঁটি পা করে প্রথমবার স্কুলে যাচ্ছে। এই ৩-৪ বছরের ছোট্ট মানুষটির সামনে এখন নতুন এক রঙিন অধ্যায় অপেক্ষা করছে। প্রথমবার অপরিচিত পরিবেশে যাওয়া, একটু একটু করে নিত্যনতুন অনেককিছু শেখা, নতুন নতুন বন্ধু তৈরি হওয়া, এবং স্কুলে গিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে সব বাচ্চারা একসাথে বসে টিফিন খাওয়া।
কী দেয়া যায় ছোট্ট সোনামণির স্কুলের প্রথম দিকের টিফিনে? যেটা দেখতে সুন্দর হবে, খেতে মজাদার হবে, এবং সেই সাথে শিশু নিজের হাতে অন্যের সাহায্য ছাড়া messy না করে খেতে পারবে? অনেক প্যারেন্টস-ই কমপ্লেইন করেন যে তাদের আদরের বাবুটি সুন্দর মতো ভরা টিফিনবক্সটি বাসায় ফেরত নিয়ে এসেছে। রোজকার কাহিনী!
[picture]
সকাল সকাল ঘুম থেকে চটজলদি তৈরি করে ফেলা যায় এমন মজাদার কিছু স্ন্যাক্স/টিফিনের রেসিপি শেয়ার করছি। আশা করি যারা তাদের বেবিকে সদ্য স্কুলে পাঠাচ্ছেন বা পাঠাবেন, অথবা যাদের Toddler আছে, তাদের কিছুটা হলেও উপকারে আসবে।
(রেসিপি ০১) ফ্রেঞ্চ টোস্ট উইথ চিজি সসেজ টপিং
- ২ পিস পাউরুটি
- ১টি ডিম
- ১ চা চামচ গুঁড়ো দুধ
- ১ স্লাইস চীজ/ অল্প ঢাকাই পনির
- ১ পিস সসেজ (সেদ্ধ করে অল্প তেলে ভেজে ঠাণ্ডা করে চিকন করে স্লাইস করে নেয়া)
- ১ চিমটি লবন
- ১ চিমটি সাদা গোলমরিচের গুঁড়ো (ঐচ্ছিক)
- ভাজার জন্য তেল
একটি ডিম ভেঙে তাতে ১ চিমটি লবন, ১ চিমটি সাদা গোলমরিচের গুঁড়ো আর ১ চা চামচ গুঁড়ো দুধ দিয়ে ভালোভাবে ফেটিয়ে নিন। পাউরুটির দুই পিঠ ডিমে মাখিয়ে নিন। চুলায় একদম কম আঁচে প্যান/কড়াইয়ে অল্প তেল দিয়ে পাউরুটির পিস ছেড়ে দিয়ে উপরের পিঠে স্লাইস করা সসেজ-গুলো ডিমের মিশ্রণের উপর ছড়িয়ে দিন, তার উপরে এক স্লাইস চীজ দিয়ে পাউরুটিটা উল্টে দিন। ৪০-৪৫ সেকেন্ড পর পাউরুটির স্লাইসটা নামিয়ে প্লেটে কিচেন টিস্যুতে রাখুন অতিরিক্ত তেল শুষে নেয়ার জন্য। মাইক্রোওয়েভে তৈরি করতে চাইলে ওভেনপ্রুফ ছড়ানো বাটিতে তেল ব্রাশ করে উভয় পাশ ৪০ সেকেন্ড করে বেক করলেই তৈরি হয়ে যাবে মজাদার ফ্রেঞ্চ টোস্ট উইথ চিজি সসেজ টপিং।
(রেসিপি ০২) চিজি কলিফ্লাওয়ার/ব্রকলি পপার্স
- ছোট একটি ফুলকপি/ব্রকলি
- ৫০ গ্রাম চিজ (parmesan/ঢাকাই পনির)
- সামান্য লবন
- ডিম ১টি
- আধা কাপ তরল দুধ
- আধা কাপ ময়দা/টেম্পুরা
- ১/৪ চা চামচ মরিচের গুঁড়ো
- ভাজার জন্য তেল
ফুলকপি/ব্রকলি ছোট বাইট সাইজের টুকরো করে অল্প পানিতে সামান্য লবন দিয়ে ঢেকে সিদ্ধ করুন। একটি পাত্রে ডিম, ময়দা, দুধ, মরিচ গুঁড়ো, চিজ ভালো করে ফেটিয়ে নিন। এবার সিদ্ধ করা ফুলকপি/ব্রকলির টুকরোগুলো ঐ মিশ্রণে ডুবিয়ে তুলে গরম গরম ডুবো তেলে লালচে সোনালি করে ভেজে নিন। ব্যাস তৈরি হয়ে গেল ঝটপট মজাদার চিজি কলিফ্লাওয়ার/ব্রকলি পপার্স।
(রেসিপি ০৩) বোনলেস চিকেন ফ্রাই
- ৩০০ গ্রাম হাড়বিহীন মুরগির বুকের মাংস
- ১টি ডিম
- আধা কাপ ময়দা/চালের গুঁড়ো/টেম্পুরা
- লবন (স্বাদ অনুযায়ী)
- সামান্য সাদা গোলমরিচের গুঁড়ো (ঐচ্ছিক)
- ব্রেড ক্রাম্ব/টোস্ট বিস্কিটের গুঁড়ো
- আধা চা চামচ রসুন বাটা
- আধা চা চামচ আদা বাটা
- ভাজার জন্য তেল
আগের রাতেই মুরগির মাংস ভালো করে ধুয়ে বাইট সাইজ/ বাচ্চা হাতে নিয়ে খেতে পারবে এমন সাইজে টুকরো করে কেটে নিন। একটি পাত্রে ৪ কাপ পানিতে সামান্য লবন, আধা চা চামচ আদা বাটা, আধা চা চামচ রসুন বাটা দিয়ে মুরগির টুকরোগুলো ঢেকে সিদ্ধ করে নিন।(পানিটা ফেলবেন না, এ পানিটা হলো চিকেন স্টক যা পরে অন্যান্য রান্নায় ব্যবহার করতে পারবেন)একটি পাত্রে ডিম ফেটিয়ে তাতে সামান্য গোলমরিচের গুঁড়ো, লবন ভালো করে মিক্স করে নিন। আরেকটি পাত্রে ময়দা/চালের গুঁড়ো/টেম্পুরা রাখুন। আরেকটি পাত্রে ব্রেড ক্রাম্ব/টোস্ট বিস্কিটের গুঁড়ো।এবার সেদ্ধ করা মুরগীর টুকরোগুলো এক এক করে প্রথমে ডিমের মিশ্রণে দিন, তুলে সাথে সাথে ময়দার মিশ্রণে দিন, তারপর আবার ডিমের মিশ্রণে, তারপর আবার ময়দার মিশ্রণে দিয়ে শেষে ব্রেড ক্রাম্ব মাখিয়ে ছড়ানো প্লেট/ট্রে/বক্সে বোনলেস চিকেনের টুকরোগুলো পাশাপাশি রেখে ডীপ ফ্রিজে তুলে রাখুন।সকালে বেবিকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার আগে গরম গরম ডুবো তেলে চুলার মাঝারি আঁচে দুই পাশ ভেজে বেবির টিফিন বক্সে দিয়ে দিন মজাদার বোনলেস চিকেন ফ্রাই যা বেবি নিজের হাতে খেতে পারবে মজা করে।
(রেসিপি ০৪) প্রণ ফ্রাই
- মাঝারি সাইজের চিংড়ি ১০টি,
- সয়াসস ১ চা চামচ,
- ওয়েস্টার সস ১ চা চামচ,
- ফিশ সস ১ চা চামচ,
- টমেটো সস ১ চা চামচ,
- ডিম ১টি,
- আধা কাপ ময়দা/চালের গুঁড়ো/টেম্পুরা
- সামান্য সাদা গোলমরিচের গুঁড়ো
- ভাজার জন্য তেল
চিংড়ির মাথা ফেলে পুরো খোসা ছাড়িয়ে ভালো করে ধুয়ে সব রকম সস মাখিয়ে ২০-৩০ মিনিট রেখে দিন। একটি পাত্রে ডিম ফেটিয়ে তাতে সামান্য লবণ আর গোলমরিচের গুঁড়ো মিক্স করে নিন। আরেকটি পাত্রে ময়দা/চালের গুঁড়ো/টেম্পুরা ঢেলে রাখুন। এবার চিংড়ি গুলো এক এক করে প্রথমে ডিমের মিশ্রণে দিন, তুলে সাথে সাথে ময়দার মিশ্রণে দিন, তারপর আবার ডিমের মিশ্রণে, তারপর আবার ময়দার মিশ্রণে দিয়ে ছড়ানো প্লেট/ট্রে/বক্সে পাশাপাশি রেখে ডীপ ফ্রিজে তুলে রাখুন।সকালে বেবিকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার আগে গরম গরম ডুবো তেলে চুলার মাঝারি আঁচে দুই পাশ ভেজে বেবির টিফিন বক্সে দিয়ে দিন মজাদার প্রণ ফ্রাই।
(রেসিপি ০৫) বানানা চকো মিনি মাফিন
- ২টা পাকা ছোট কলা
- ১টা ডিম
- আধা কাপ ময়দা
- দেড়-দুই চা চামচ কোকো পাউডার
- এক চা চামচ বেকিং পাউডার
- দুই চিমটি বেকিং সোডা
- দুই চিমটি লবন
- ৪ চা চামচ চিনি (কমবেশি করতে পারেন)
- ১/৩ কাপ দুধ
- ২-৩ ফোঁটা ভ্যানিলা এসেন্স
- ৩ টেবিল চামচ গলানো মাখন/ভেজিটেবল অয়েল
উপকরণ খুব ভালো ভাবে মিক্স করতে হবে, ইলেকট্রিক হ্যান্ড মিক্সার দিয়ে করতে পারলে ভালো, অথবা খুব দ্রুত গতিতে কাঁটা চামচ বা এগ বিটার নেড়ে হাতে ও করতে পারেন। ইলেকট্রিক ওভেন ৩৭৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ১৯০ ডিগ্রি কেলভিনে প্রিহিট করে নিন। মাফিন ট্রে-তে কাগজের তৈরি মাফিন কাপগুলো বসিয়ে তেল ব্রাশ করে কাপের ২/৩ অংশ তে মিশ্রণ ঢেলে দিয়ে ২০ মিনিট বেক করুন।মাইক্রোওয়েভে করতে চাইলে ওভেনপ্রুফ বাটিতে তেল/ঘি ব্রাশ করে মিশ্রণ ঢেলে ৪ মিনিট বেক করুন।
ব্যস তৈরি হয়ে যাবে মজাদার বানানা চকো মিনি মাফিন। যেসব বাচ্চারা মিষ্টি জাতীয় খাবার পছন্দ করে তাদের জন্য খুব মজার টিফিন এই ছোট্ট ছোট্ট মাফিন।
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। সামনে আরো মজাদার সহজ রেসিপি নিয়ে আসবো আপনাদের জন্য যেগুলো বেবিরা পছন্দ করবে। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
ছবি – নেটমামস ডট কম, দিস্যুইটহোম ডট কম, পিন্টারেস্ট ডট কম
লিখেছেন – ফারহানা প্রীতি