অসুখের নাম শুনলেই ভয় লাগে… ঠাণ্ডা হাঁচি কাশিতে অস্থির। কাকে ছেড়ে কাকে দেখালে ভালো হবে বুঝতে পারছেন না। এমন সমস্যা নেই কার তা হাতে গুনে ফেলা যায়। কোন সমস্যায় কোন ডাক্তার দেখাবেন তা কিন্তু জানেন অনেকেই। তবুও আর একটু ভালো করে জেনে নিলেই কি ভালো হয় না ? হ্যাঁ , আজকের লেখাটির মূল ভিত্তিই হচ্ছে হচ্ছে রোগের লক্ষণ ও ডাক্তার নির্বাচন। ফার্মেসিতে গিয়ে চট করে একটি ট্যাবলেট খাওয়ার আগে ভেবে নিন ভালো এক জন ডাক্তার দেখালে কতটাই বা যাবে? বার বার একই অসুখে না ভুগে ভালো একজন ডাক্তার দেখান। রোগের লক্ষণ অনুযায়ী ডাক্তার নির্বাচন জরুরী, যদিও ডাক্তার নিজেই বলে দেবেন আপনি অমুক বিশেষজ্ঞ কে দেখান, তবু আগে থেকে জানা থাকলে ভোগান্তিটা কম হবে বৈকি।
নিউরোলজিস্টঃ
মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরানো, ভার ভার লাগা, ঝিমানি আসা, ভারসাম্য না রাখতে পারা মুলত ব্রেইনের কোন সমস্যার জন্যে হতে পারে। কিন্তু এর আগে দেখতে হবে আপনার সাথে সাথে আর কী কী সমস্যা আছে। অনেক সময় ঠাণ্ডার সাথে কাশি, জ্বর থাকতে পারে, পাশাপাশি মাথা ব্যথা। তাহলেই একজন নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হয়ে পারে। কোন বড় দূর্ঘটনা বা আঘাত পাওয়ার পর অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, কান বা মাথার কাছ থেকে রক্ত পড়া, চোখে বা কানের কাছে কালশিটে দাগ থেকে বোঝা যায় এতে ব্রেইন এর সমস্যা হতে পারে। অনেক বয়স্ক মানুষ আছেন যারা খুব বেশি পরিমাণে ভুলে যান। কোন কথাই ভালো করে মনে থাকে না। এটা আলজেইমারস রোগের লক্ষণ। বয়সের দোষ না ভেবে ডাক্তারকে বলুন।
নেফ্রলজিস্ট এবং ইউরোলজিস্টঃ
ঘন ঘন প্রস্রাব, খুব বেশি খিদে লাগা, ওজন খুব কমে যাওয়া ও ঘন ঘন পিপাসা পাওয়া ডায়াবেটিসের লক্ষণ। যে কোন বয়সেই হতে পারে। ভাবার কোন কারণ নেই যে এটি শুধু বয়স্কদের হয়। ঘন ঘন প্রস্রাব, অসম্পূর্ণ ত্যাগের অনুভূতি, ব্যথা হওয়া, পিঠের নীচের দিকে দুই পাশে ব্যথা, কোমরের দুই পাশে ব্যথা হলে সিরিয়াসলি নিন। বয়স্ক মানুষদের মধ্যে কিডনি নষ্টের প্রকোপ বেশি। সারা শরীরে অ্যালার্জি ছাড়াই চুলকানি, বমি হওয়া, প্রস্রাবের সমস্যা, রক্তের মত লাল প্রস্রাব হওয়া অবশ্যই গুরুত্তের সাথে নিয়ে একজন নেফ্রলজিস্ট এর শরণাপন্ন হতে হবে।
গাইনিকলজিস্ট ও অবস্টেট্রিশিয়ানঃ
একজন নারীর জীবনে অনেক সময়েই এই বিশেষজ্ঞের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ১৬ বছরের পর কোন মেয়ের পিরিয়ড না হলে, হালকা ভাবে নেয়ার কোন কারণ নেই। এর জন্যে অনেক কারণ দায়ী। সঠিক কারণ জানতে হলে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতেই হবে। ঘন ঘন পিরিয়ড হওয়া, অতিরিক্ত রক্তপাত, মাসিক কালীন হোক বা মাসিক ছাড়াই হোক, পিরিয়ডের সময় ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক, হতেই পারে এরকম না ভেবে পরামর্শ নিন। এসব সমস্যার জন্যে আপনার সন্তান হতেও সমস্যা হতে পারে। একটু সচেতন হয়ে আগে আগেই প্রতিকার করে নেয়া ভালো নয় কি? গর্ভকালীন সময়ে ১৩ টি ভিজিট করতে হবে, নুন্যতম ৪ টি করতেই হবে। আপনার সন্তানের সুস্থতা, আপনার শারীরিক অবস্থা, প্রসবে কোন জটিলতা হতে পারে কিনা জানতে হলে আগেই চেক আপ করাতে হবে। নিকটতম স্বাস্থ্য ক্লিনিকেই দেখাতে পারেন, বিশেষজ্ঞের কাছেই ১৩ বার যেতে হবে এমন কোন কথা নেই। আর কোন ভালো ডাক্তার যদি বলেন যে সিজার করাতে হবে, তবে বোঝার চেষ্টা করুন নিশ্চয়ই আপনার বাচ্চা, আপনার শরীরের কোন জটিলতা আছে বলেই করতে বলছেন। প্রসবে বেশি জটিলতা যেমন, দীর্ঘ প্রসব, আটকে যাওয়া প্রসব হলে বাচ্চা মারাও যেতে পারে। ভবিষ্যতে আপনার প্রস্রাব নালির সাথে যোনি পথের ফিস্টুলা, জরায়ু নিচে নেমে যাওয়া, জরায়ু ছিড়ে যাওয়া এরকম আরও অনেক সমস্যা হতে পারে।
অর্থপেডিক্সঃ
বাংলায় হাড় ও জোড়া বিশেষজ্ঞ বলে। এতে বিশেষ কিছু বলার নেই। দূর্ঘটনায় শরীরের বিভিন্ন জায়গার হাড় ও জয়েন্টে সমস্যা হলেই আমরা এই ডাক্তার দেখাই। আক্রান্ত স্থানে ব্যথা, ফুলে যাওয়া, লাল হয়ে যাওয়া, নাড়াতে কষ্ট হওয়া এবং স্বাভাবিক কাজ করতে কষ্ট হলে ডাক্তার দেখাতেই হবে। মাথায় আঘাত লাগলে একজন নিউরলজিস্ট কেও দেখাতে হবে। বুকের হাড় ভেঙ্গে হার্ট, লাংস এ ঢুকতে পারে বা চাপ সৃষ্টি করতে পারে, বা রক্তপাত হয়েও চাপ দিতে পারে। তাই ভেঙ্গে গেলে শুধু হাড় ও জোড়ার ডাক্তার নয়, পাশাপাশি অন্য বিশেষজ্ঞ কেও দেখাতে হবে। আপনি ভাবতে পারেন, এ তো প্রথম ডাক্তারই বলে দেবে আর কারো কাছে যাওয়া লাগবে নাকি, কিন্তু ডাক্তাররাও মানুষ। তাদের-ও ভুল হতে পারে।
পেডিয়াট্রিক্সঃ
বাচ্চারা খুবই সেনসিটিভ। বাচ্চাদের যে কোন সমস্যাই গুরুত্তের সাথে নিতে হবে। কারণ তারা মুখে বলতে পারে না। আপনার যদি কোন সমস্যা মনে হয় তবে দেরি করবেন না। শিশুর জন্মের পর দেখুন তার কোন জন্মগত ত্রুটি আছে কিনা। আপনি ভাবতে পারেন বড় হলে অপারেশন করার কথা। কিন্তু অনেক রোগই বয়সের সাথে বাড়ে বা বয়স বেড়ে গেলে চিকিৎসা করতে ঝামেলা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিউমোনিয়াকে শিশু মৃত্যুর এক নম্বর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ডায়রিয়া , মিজলস , জন্মগত ত্রুটিও লক্ষণীয়। যদি আপনার বাচ্চার খেতে কষ্ট হয়, সারাক্ষণ অস্থির হয়ে থাকে, যা খায় তার সব-ই বমি করে, কাশি থাকে, ঘন ঘন শ্বাস নেয়, বুকের নীচের অংশ শ্বাসের সময় দেবে যায়, অজ্ঞান হয়ে যায়, তবে এখুনি ডাক্তার দেখান। শিশুদের সঠিক সময়ে সঠিক বেড়ে ওঠা হচ্ছে কিনা তার জন্যে ডায়েট প্ল্যান মোতাবেক খাওয়ান।
আরও অনেক বিশেষজ্ঞ ও রোগের লক্ষণ বাদ পড়ে আছে। সব একই আলোচনায় বলা সম্ভব হয়নি তার জন্যে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। অন্য কোন আলোচনায় আপনাদের চাহিদা অনুসারে আরও বলার চেষ্টা করব। আপনার বা আপনার কাছের মানুষের একটুও কাজে লাগলে আমার খুব উৎসাহ ও আন্তরিকতা নিয়ে লেখা এই লেখাটি সার্থক হবে। ভালো থাকুন, সবাইকে নিয়ে ভালো থাকুন।
লিখেছেনঃ শারমিন আখতার চৌধুরী
ছবিঃ সাটারস্টক