বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের ড্রাই ফ্রুটস পাওয়া যায় কিন্তু কাঠ বাদাম, কাজুবাদাম, কিসমিস, আখরোট, পেস্তা বাদাম এগুলো সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং অত্যন্ত কনজিউমবেল। বাইরের দেশে এগুলো স্ন্যাক্স হিসেবে অহরহ ব্যবহৃত হয়, কিন্তু আমাদের দেশে খুব একটা জনপ্রিয়তা পায়নি। তবে আমার বিশ্বাস আজ এগুলোর বিউটি বেনিফিট জানার পর অনেকেই ড্রাই ফ্রুটসের প্রেমে পড়ে যাবেন। শুধু সৌন্দর্যে নয় স্বাস্থ্য রক্ষায়ও এর জুড়ি মেলা ভার। শুকনো ফল বা ড্রাই ফ্রুটস বিভিন্ন ভিটামিন, এসেন্সিয়াল ফ্যাট এবং অন্যান্য বিভিন্ন পুষ্টির একটি উচ্চ উৎস। আপনারা হয়ত লক্ষ্য করেছেন এগুলো বিভিন্ন সৌন্দর্য পণ্যের মূল উপাদান হিসেবে ভূমিকা পালন করে। এতো কিছুর পাশাপাশি সৌন্দর্য রক্ষায় এর অসাধারণ ক্ষমতা আছে। বিস্ময়কর হলেও সত্যি যে পুরো বিশ্বজুড়ে সৌন্দর্য সচেতন নারীদের শুকনো ফল খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। চলুন আমরা জেনে আসি আমাদের কী কী উপকারে আসতে পারে এই সহজ প্রাপ্য উপাদান গুলো।
কাঠবাদামঃ
এই বাদামকে নিঃসন্দেহে শুষ্ক ফলের রাজা বলে মনে করা হয়। দেখতে ছোট হলেও এই সুপার হেলদি শুকনো ফলে আছে অত্যাবশ্যক ফ্যাটি এসিডস, ফাইবারস এবং প্রোটিন। ব্রণ প্রতিহত করার জন্য এটি একটি অত্যন্ত দুর্দান্ত ফল এবং এটি হেলদি প্রদীপ্ত ত্বকের জন্য একটি অত্যন্ত বহুল ব্যবহৃত ফল। আকারে ছোট কিন্তু চুলের যত্ন এবং ত্বকের যত্নের জন্য উচ্চমানের একটি শুকনো ফল। গ্লোয়িং ত্বকের জন্য কিছু কাঠ বাদামের গুঁড়ার সাথে দুধ মিশিয়ে নিয়মিত মুখে লাগান। খুব দ্রুতই ত্বকের মরা কোষ ঝরে আপনি হয়ে উঠবেন সবার প্রশংসার দাবীদার। চুলে বাদামের তেল ব্যবহার করে নিস্তেজ চুলে ফিরিয়ে আনুন প্রানের ছোঁয়া। এরা রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধিকারী এবং ব্লাড সার্কুলেশন বৃদ্ধির কাজেও পারদর্শী। এছাড়াও কাঠবাদাম রক্তে কোলেস্টেরল কমানোর পাশাপাশি শরীরে লাং এবং স্তন ক্যান্সারের বাসা বাঁধতে বাঁধা দান করে।
কিশমিশ:
আপনি যদি আপনার সাদা মুক্তোর মত দাঁতগুলো এবং জ্বলজ্বলে চোখ জোড়া রক্ষা করতে চান, তবে দৈনিক এক মুঠো কিশমিশ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কিশমিশ দাঁতের ক্ষয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং ক্যাভিটিস দূরে রাখে। এই সুপার ফুড ভিটামিন এ এর উৎকৃষ্ট উৎস এবং এরা দৃষ্টি সংক্রান্ত সমস্যা থেকেও আপনার চোখ রক্ষা করে। কিশমিশ ত্বকে এনে দেবে আলাদা চমক কেননা এতে থাকা রেসভেরাট্রোল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বক দ্রুত বুড়িয়ে হয়ে যাওয়ার গতিকে ধীর করে দেয়। যেহেতু কিশমিশ পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, আয়রনে ভরপুর থাকে সেহেতু যারা রক্তাল্পতায় ভুগছেন তাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী খাদ্য এটি।
আখরোট:
আখরোট হল শুকনো ফলের পরিবারের আরেকটি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর খাবার যা ফ্যাটস এবং পুষ্টি্তে পূর্ণ। আখরোটের মধ্যে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিডের প্রাচুর্য পাওয়া যায় যা ত্বকের টেক্সচার উন্নত করে এবং শুষ্ক ত্বককে নরিশ করে। আখরোট মস্তিষ্কের খাবার হিসাবে পরিচিত কেননা আমাদের মস্তিষ্কের ৬৯% ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড দ্বারা গঠিত হয়, যা আখরোটের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এছাড়াও আখরোট কার্ডিওভাসকুলারের স্বাস্থ্য উন্নয়নে সহায়ক হয়। এটি চুল এবং ত্বককে নরিশ করে। শীতের দিনে শুষ্ক ত্বক অনেকেরই বিরক্তির কারণ হয় তখন এক মুঠো আখরোট ৩ টেবিল চামচ টক দইয়ের সাথে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। তারপর এই স্ক্রাবার নিয়মিত ত্বকে লাগান স্মুদ, সফট স্কিনের জন্য। শুধু শীত কেন সারা বছরই কাজে লাগাতে পারেন এই জাদুকরী ফর্মুলা। আখরোটৈর তেলে আছে লিনোলিক এসিড যা রিঙ্কেল এবং ফাইন লাইনের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে।
কাজুবাদামঃ
আমাদের মধ্যে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে যে এই বাদামে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট আছে তাই এটি অস্বাস্থ্যকর। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, যখন একটি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া হয় তখন এটি আপনার ওজন কমাতে সহায়ক হয়। এই বাদামের তেল অনেক প্রসাধনী সামগ্রীতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কেননা এটি ট্যান কমাতে সাহায্য করে এবং ত্বকের ক্ষতি রোধ করে। কিছু বাদাম পানির সাথে পেস্ট করে নিন। তারপর ত্বকে লাগিয়ে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। এমনকি কাজুবাদাম পা ফাটা রোধ করতেও সহায়ক ভুমিকা রাখে। এই বাদাম ভিটামিন ই এর সমৃদ্ধ উৎস তাই এর নিয়মিত ভোজন আপনার ত্বকের জন্য অ্যান্টি-এজিং এলিমেণ্ট হিসেবে কাজ করে। কাজু বাদাম কোলেস্টেরল, ব্লাড সুগার, মাইগ্রেইন এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
পেস্তা বাদাম:
পেস্তা বাদামকে পুষ্টির পাওয়ার হাউজ বলা হয়। এই ভিটামিন ই সমৃদ্ধ ড্রাই ফ্রুট সূর্যের ক্ষতিকর UV রে, অকাল বার্ধক্য এবং এমনকি ত্বকের ক্যান্সার থেকে আপনাকে রক্ষা করে। এই বাদামে ক্যারটিনয়েড, lutein, zeaxanthin আছে যা খুব কম বাদামেই পাওয়া যায়। পেস্তা তেলে ডিমালসেণ্ট প্রপারটি আছে, যারা মূলত ত্বককে স্মুদ করে। এছাড়াও এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি রেডিকেলসকে নিউট্রালাইজ করে যা এজিং প্রতিরোধক। পেস্তা বাদাম, রক্তের শর্করা কমিয়ে দেয়, হজমে সাহায্য করে, হার্টের রোগ প্রতিরোধ করে এবং আপনার শরীরে ফাইবার ও প্রোটিন সরবরাহ করে।
সবশেষে এটিই বলবো প্রকৃতির এই উপহার এড়ানো আমাদের কোনভাবেই উচিত হবে না। হয়ত বলতে পারেন ড্রাই ফ্রুটস গুলোর দাম বেশ চড়া কিন্তু ভেবে দেখুন তো প্রসাধনী সামগ্রীর পেছনে কত টাকাই না খরচ করেন বা বিভিন্ন ধরনের ওষুধ কিনতেও বেশ ভালো টাকা গুনতে হয়। এর চেয়ে কি ভাল না কিছু ভালো খাবার কিনে খাওয়া? আর একবার কিনলে অনেকদিন পর্যন্ত চলেও যায়। আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে। সবাই ভালো থাকুন।
লিখেছেনঃ রোজেন
ছবিঃ আটলান্টাব্যাকস্টার.কম
রাইটারসমান্থলি.কম
শপিং.রেডিফ.কম
নিউজনেটোয়ার্ক.মায়োক্লিনিক.অর্গ