আপনি যেখানেই যান না কেন, মনে হচ্ছে আপনি আপনার চিহ্ন রেখে আসছেন! মানে সব জায়গাতেই আপনার চুল! যতবারই চুলে হাত দিচ্ছেন, ততবারই হাতে অনেকগুলো চুল উঠে আসছে! এমন সিচুয়েশন কি আপনিও ফেইস করছেন? চুল পড়া নিয়ে টেনশন যেন কমেই না! চুল পড়া কমাতে হেলদি ফুড হ্যাবিটের সাথে সাথে বেসিক হেয়ার কেয়ার রুটিন মেনটেইন করতে হবে। অ্যান্টি হেয়ার ফল মাস্ক প্রাকৃতিকভাবে চুল পড়ার হার কমিয়ে আনতে খুবই কার্যকর। চলুন জেনে নেই বিস্তারিত!
এক্সেস হেয়ার ফলের সল্যুশন
যদি এমন হয় যে দিনে ১০০/১২০ টার বেশি চুল পড়ছে, আর কোনোভাবেই চুল পড়া কমছে না, তাহলে আপনাকে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে হবে। চেক করে নিন আপনি এমন কোনো স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন কিনা যা চুল পড়ার কারণ হতে পারে। তবে আপনার যদি কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা না থাকে, তাহলে চুল পড়া নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু হেয়ার মাস্ক ট্রাই করতে পারেন। হেয়ার মাস্ক চুলকে করে হেলদি ও স্ট্রং। হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করা বেশ সহজ। সপ্তাহে অন্তত ১ দিন চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত মাস্ক লাগাতে হবে। তারপরে শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে চুল ঢেকে রাখতে হবে এবং ২৫/৩০ মিনিট অপেক্ষা করে চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
চুল পড়া নিয়ে টেনশন?
বিভিন্ন ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্টস সমৃদ্ধ হওয়াতে হেয়ার মাস্ক চুলের যত্নে অনেক বেশি কার্যকর। এটি DIY হোমমেড হতে পারে, আবার প্যাকেটজাত রেডিমেড মাস্কও হতে পারে। চুলকে স্ট্রং, সফট ও ময়েশ্চারাইজড করে। চুলের আগা ফাটা রোধ করে। চুলের এক্সট্রা কেয়ার নিতে এর জুড়ি নেই! বিভিন্ন হেয়ার প্রবলেমকে টার্গেট করে ভিন্ন ভিন্ন হেয়ার মাস্ক পাওয়া যায়, আবার বাসাতেও প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে মাস্ক বানিয়ে নেওয়া যায়। চুলের ধরন বুঝে সপ্তাহে অন্তত ১ দিন হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করলে চুলে খুব দ্রুত একটা হেলদি চেঞ্জ দেখা যাবে।
চুল পড়া কন্ট্রোলে আনতে ৫টি হেয়ার মাস্ক
১. এগ হেয়ার মাস্ক
ডিমের হেয়ার মাস্ক তৈরি করতে যা যা দরকার-
- ডিম
- হাফ কাপ দুধ
- দুই টেবিল চামচ লেবুর রস
- সামান্য অলিভ অয়েল
ডিমের সাথে সব উপাদানগুলো ভালো করে মিক্স করে চুলে লাগিয়ে নিতে হবে। ডিমে আছে প্রোটিন, যা চুলের গ্রোথ বৃদ্ধি করে। চুলকে প্রাণবন্ত করে তোলে। সব ধরনের চুলেই এই হেয়ার মাস্ক দারুণ কাজ করে। চুল পড়া কমাতে ও চুলের রুক্ষভাব দূর করতে এই প্রোটিন ট্রিটমেন্ট মাস্কটি ব্যবহার করতে পারেন।
২. হেয়ার ফল কন্ট্রোলে টক দইয়ের মাস্ক
এই হেয়ার মাস্কটি তৈরি করতে যা যা দরকার-
- টক দই ( চুলের লেন্থ অনুযায়ী )
- এক টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার
- মধু
সব উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ভালো করে লাগিয়ে নিতে হবে। অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে অ্যান্টি ফাঙ্গাল, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি প্রোপার্টিজ। টক দই ও মধু চুলের ময়েশ্চার লেভেল ব্যালেন্স করে, সেই সাথে চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলের বাউন্সিভাব ফিরিয়ে আনে।
৩. স্কিন ক্যাফে হেয়ার ফল ট্রিটমেন্ট (Skin Cafe Hair Fall Treatment)
প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি রেডিমেড হেয়ার মাস্ক ইউজ করতে চাইলে ট্রাই করুন স্কিন ক্যাফে হেয়ার ফল ট্রিটমেন্ট। এই মাস্কটি সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করলে এক্সেস হেয়ার ফলের প্রবলেম অনেকটাই কমে আসবে। আমি নিজেই সুফল পেয়েছি, এখন এই মাস্কটি আমার হলিগ্রেইল প্রোডাক্ট। পাতলা রুক্ষ চুল আস্তে আস্তে হেলদি, ঘন, মজবুত এবং প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে। চুল পড়া বন্ধ হয়ে নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করবে। এই মাস্ক বানাতে প্রয়োজন-
- স্কিন ক্যাফে হেয়ার ফল ট্রিটমেন্ট পাউডার ( চুলের লেন্থ অনুযায়ী )
- টকদই
- ডিম
সব উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে চুলের আগা থেকে গোড়া অবদি মাস্কটি লাগিয়ে নিয়ে ৪০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার লাগিয়ে নিন। প্রথমবার ব্যবহারের পর থেকেই পার্থক্য বুঝতে পারবেন। শিকাকাই, হেনা, আমলা ইত্যাদি উপাদান থাকাতে এই হেয়ার মাস্কটি চুলের যত্নে অতুলনীয়!
৪. কলার হেয়ার মাস্ক
কলা দিয়ে তৈরি হেয়ার মাস্ক চুল পড়া কমাতে খুব ইফেক্টিভ। এই মাস্কটি তৈরি করতে প্রয়োজন-
- পাকা কলা
- নারকেল তেল সামান্য
কলা ভালোভাবে চটকে নিয়ে অথবা ব্লেন্ড করে স্মুথ পেস্ট বানিয়ে নিন। চুলে মাস্কটি লাগিয়ে নিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার লাগিয়ে নিন। নারকেল তেল হেয়ার ফলিকল মজবুত করে। কলা পটাসিয়াম, ভিটামিন ও ন্যাচারাল অয়েলে ভরপুর, যা হেয়ার ফল কমাতে ও হেয়ার গ্রোথ প্রমোট করতে খুবই কার্যকর।
৫. ক্যাস্টর অয়েল হেয়ার মাস্ক
চুল পড়া কমাতে ও নতুন চুল গজাতে ক্যাস্টর অয়েল এর নাম আমাদের প্রায় সবারই জানা। এই হেয়ার মাস্কটি তৈরি করতে দরকার-
- দুই টেবিল চামচ ক্যাস্টর অয়েল
- দুই টেবিল চামচ কোকোনাট অয়েল
- অ্যালোভেরা জেল
সব উপকরণ একসাথে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর কাঠের চিরুনি দিয়ে চুল ভালো করে আঁচড়িয়ে চুলের মাঝে সেকশন করে হেয়ার মাস্ক লাগাতে হবে। ২০/২৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে শ্যাম্পু করে নিতে হবে। এই হেয়ার মাস্কটি চুলে পুষ্টি যুগিয়ে চুল পড়া বন্ধ করার পাশাপাশি চুলের আগা ফাটা রোধ করে।
এখন বুঝতে পারলেন তো, রেগুলার হেয়ার কেয়ারের পাশাপাশি সপ্তাহে একদিন হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করা কতটা জরুরি! এতে করে চুল পুষ্টি পায় এবং হেলদি হয়ে উঠে। এছাড়া বিভিন্ন হেয়ার প্রবলেমেরও সল্যুশন পাওয়া যায়। চুল পড়া নিয়ে টেনশন না করে হেয়ার কেয়ার রুটিনে আপনার পছন্দের হেয়ার মাস্ক অ্যাড করে ফেলুন! অথেনটিক হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে চাইলে সাজগোজের চারটি ফিজিক্যাল শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার এবং উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) থেকে কিনতে পারেন আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন।
ছবি- সাটারস্টক, সাজগোজ