কখনও কি এমন হয়েছে আপনার সাথে, বিজ্ঞাপনে কোন স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট বা হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্টের যাদুকরী রিভিউ দেখে কিনতে গিয়ে মনে মনে ভেবেছেন এটি নিশ্চয় কাজ করবে? অথবা সকালে ঘুম থেকে উঠে কি কখনও ভেবেছেন কাল রাতে ঘুমানোর আগে যে প্রোডাক্টটি ব্যবহার করেছেন তা আসলেই ম্যাজিকের মতো কাজ করবে? আমি কিন্তু অনেকবার ভেবেছি এমনটা। কিন্তু দিনশেষে হয়েছি হতাশ। আমার আশেপাশের এমন অনেকেই আছেন যারা শুধু হতাশই হননি, উল্টো ত্বক আর চুলের ক্ষতির শিকার হয়েছেন।
অনেক ভেবে দেখলাম এর জন্য আমরা কোম্পানীকে যতটা না দায়ী করতে পারি তার চেয়ে বেশি দোষ কিন্তু আমাদের নিজেদের। নিজের ত্বক ও চুলের মতো এতো ইম্পর্টেন্ট একটি ব্যাপারে প্রোডাক্ট সিলেক্ট করার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বিজ্ঞাপনের উপর নির্ভর করাটা কতটুকু ঠিক আপনারাই ভেবে দেখুন।
[picture]
যেকোন প্রোডাক্ট মানেই ক্যামিকেলের মিশ্রণ। তাই কোন ক্যামিকেল আমাদের উপকার করছে আর কোনটি ক্ষতি করছে এই ব্যাপারে সামান্য হলেও জ্ঞান থাকা উচিত আমাদের। আমাদের মধ্যে কয়জন এমন আছে যারা কোন প্রোডাক্ট কেনার আগে এর উপাদান বা ইনগ্রেডিয়েন্ট চেক করে কিনে? হাতেগোনা ক’জনই হবে। আবার অনেকেই আছেন প্রোডাক্টের সাথে “ন্যাচারাল” শব্দটি দেখেই ভাবেন এটি নিরাপদ। আপনার কি মনে হয় ন্যাচারাল প্রোডাক্টটিতে কোন কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না? ন্যাচারাল লেখা থাকলেও কেনার আগে অবশ্যই আপনার ইনগ্রেডিয়েন্ট চেক করা উচিত।
আজকে এমন কিছু কেমিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টের কথা বলবো যেগুলো আপনার ত্বক ও চুলের অনেক ক্ষতি সাধন করে। তাই প্রোডাক্ট কেনার আগে অবশ্যই এই কেমিক্যালগুলো চেক করে কিনবেন।
(১) প্যারাবেন
যেসব স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টে পানি থাকে সেগুলোতে প্রিজারভেটিভের প্রয়োজন হয়। কারণ, পানি থাকার কারণে এগুলোতে সহজে ব্যাক্টেরিয়া আক্রমণ করতে পারে। তাই অনেকদিন পর্যন্ত যাতে ভালো থাকে তাই প্রিজারভেটভ যোগ করা হয়। বেশিরভাগ কসমেটিকসেই প্রিজারভেটিভ হিসেবে প্যারাবেন ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এটির ক্ষতিকর দিকটি আমরা অনেকেই জানি না। প্যারাবেন মহিলাদের ইস্ট্রোজেন লেভেলে অ্যাফেক্ট করে যার ফলে তাদের প্রজনন স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। প্রোডাক্টের লেবেলে মিথাইল-প্যারাবেন বা প্রোপাইল-প্যারাবেন লেখা দেখলে প্রোডাক্টটি ব্যবহার না করায় ভাল।
(২) সোডিয়াম লরেল সালফেট (SLS) বা সোডিয়াম লরেট সালফেট
নানারকম ফোমিং প্রোডাক্টে সোডিয়াম লরেল সালফেট (SLS) বা সোডিয়াম লরেট সালফেট ব্যবহার করা হয়। যেমন শ্যামপু, শাওয়ার জেল, মাউথ ওয়াশ, টুথপেস্ট বা ডিটারজেন্টে এই কেমিক্যাল বেশি ব্যবহৃত হয়। এটি খুবই হার্শ একটি ডিটারজেন্ট যা আপনার ত্বকের সব তেল শুষে নেয় এবং ত্বককে করে তোলে অতিরিক্ত শুষ্ক। শ্যাম্পুর ক্ষেত্রেও একই রকম ব্যাপার ঘটে। এটি চুলের ন্যাচারাল অয়েল শুষে নিয়ে চুলকে আরো রুক্ষ করে তোলে। অতিরিক্ত শুষ্কতার কারণে ত্বকে ইরিটেশনও দেখা দেয়।
(৩) প্রপিলিন গ্লাইকল
এটি পেট্রোলিয়াম থেকে পাওয়া যায়। প্রপিলিন গ্লাইকল মূলত হিউম্যাকটেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হিউম্যাক্টেন্টের কাজ হলো বাতাস থেকে ময়েশ্চার নিয়ে ত্বককে হাইড্রেটেড করা। ত্বককে ময়েশ্চারাইজড রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, খুব সামান্য পরিমাণ প্রপিলিন গ্লাইকল ত্বকে পোটেন্ট ইরিটেন্ট হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ প্রপিলিন গ্লাইকলের খুবই অল্প পরিমাণ ত্বকে ইরিটেশনের জন্য দায়ী। তাই প্রপিলিন গ্লাইকলের পরিবর্তে ন্যাচারাল ময়েশ্চারাইজার যেমন ভেজিটেবল গ্লিসারিন, হানি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন।
(৪) মিনারেল অয়েল (পেট্রোলিয়াম জেলি)
বিভিন্ন কসমেটিকস, স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টে মিনারেল অয়েল বা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা হয়। মিনারেল অয়েল বা পেট্রোলিয়াম জেলির কোন পুষ্টিগুণ নেই বললেই চলে। এটি স্কিনে বেরিয়ার তৈরি করে যার ফলে শরীরে জমে থাকা যেসব টক্সিন আমাদের ত্বক বের করে দেয় তাতে বাধা সৃষ্টি করে এই বেরিয়ার। তাই মিনারেল অয়েল বা পেট্রোলিয়াম জেলিযুক্ত কসমেটিকসের পরিবর্তে ন্যচারাল অয়েল বা বাটার ব্যবহার করতে পারেন।
(৫) পারফিউম বা সিন্থেটিক ফ্রেগ্রেনেন্স
বিভিন্ন প্রোডাক্টে সুন্দর সুগন্ধি ও অ্যারোমার জন্য নানারকম সিন্থেটিক ফ্রেগ্রেনেন্স ব্যবহার করা হয়। ত্বকের যত্নে এগুলোর তেমন কোন উপকারীতা নেই। তাছাড়া প্রোডাক্টের লেবেলে কি কি ফ্রেগ্রেনেন্স ব্যবহার করেছে তা সব লেখা হয় না। শুধুমাত্র ‘পারফিউম’ লেখা থাকে। যেহেতু কি কি ফ্রেগ্রেনেন্স ব্যবহার করা হয়েছে এই ব্যাপারে আমাদের কোন আইডিয়া নেই তাই এই ধরনের সিনথেটিক ফ্রেগ্রেনেন্স এড়িয়ে চলা উচিত। এর পরিবর্তে এসেনশিয়াল অয়েলযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। এর সুন্দর সুগন্ধও থাকে সাথে একেক রকম এসেনশিয়াল অয়েলের একেক রকম প্রাকৃতিক গুণ থাকে। যা শুধু ত্বকের জন্যই নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ও কার্যকরী।
আজকে থেকে নিশ্চয় যেকোন হেয়ার কেয়ার বা স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কেনার আগে লেবেলে দেয়া ইনগ্রেডিয়ান্ট পড়ে কিনতে ভুলবেন না। সুন্দর ত্বক ও চুলের জন্য এতটুকু নিশ্চয়ই করতেই পারি। এই সামান্য সচেতনতায় দেখবেন অনেক বড় বড় সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। সেই সাথে প্রি-ম্যাচিউর এইজিংও আটকাবে।
লিখেছেন – শাবনাজ বেনজীর