আমরা স্কিন কেয়ার কিংবা আমাদের আউটলুক নিয়ে যতটা ভাবি, নিজেদের ওরাল হাইজিন কিংবা ওরাল কেয়ার নিয়ে কি এতটা ভাবি? বাকি সবকিছুর মতো প্রোপার ওরাল কেয়ার করাও কিন্তু সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ওরাল কেয়ারের অভাবে আমাদের গেটআপ কিংবা আউটলুক পুরোটাই ভেস্তে যেতে পারে। আর ওরাল কেয়ারের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হচ্ছে আমাদের দাঁত। আমরা অনেকেই দাঁতের বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হই। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, সঠিক পরিচর্যার অভাব। সঠিক যত্নের অভাবে আমাদের দাঁতে বাসা বাঁধে নানা ধরণের রোগ-জীবাণু। এই রোগ-জীবাণু থেকে মুখের বিভিন্ন অসুখ হতে পারে। এছাড়া দাঁত হলুদ হওয়া, দাঁতের ক্ষয়, মাড়ির ইনফেকশন থেকে শুরু করে মুখে দুর্গন্ধসহ বিভিন্ন রোগ হতে পারে এই সামান্য অসাবধানতা থেকে। তাই আজকে আমরা জেনে নিব, ওরাল কেয়ারের ৫টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস।
ওরাল কেয়ার এর ৫টি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস
সঠিক নিয়মে দুইবেলা দাঁত ব্রাশ করা
আমাদের দাঁতে সমস্যা দেখা দেয়ার প্রধান কারণ থাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব। সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে শোওয়ার আগে দাঁত ব্রাশ করে নেয়া সমানভাবে জরুরি। তবে দাঁত ব্রাশ করতে যেয়ে আমরা বরাবরই যে ভুলটি করে থাকি তা হলো- সঠিক সময় এবং সঠিক নিয়মটি আমরা অনেকেই মানিনা। তাই দাঁত ব্রাশ করলেও তেমন কিন্তু কোনো একটা লাভ হয় না। তাহলে সঠিক নিয়ম কী? সবচেয়ে ভালো ফলাফলের জন্য অত্যন্ত দুই মিনিট ধরে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। দাঁতে জমে থাকা নানা রোগ জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ রোধে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খুব তাড়াহুড়াও যেমন করা যাবে না, তেমনই খুব বেশি সময় ধরেও দাঁত ব্রাশ করা ক্ষতিকর।
এনামেলের ক্ষয় রোধে খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা
সারাদিন আমরা এমন অনেক ধরনের খাবার খাই, যেগুলোতে দাঁতের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আরও বহুগুণে বেড়ে যায়। যেমন- খুব বেশি যারা চকলেট খেতে ভালবাসে বা যাদের অ্যালকোহল জাতীয় খাবার খাওয়ার অভ্যাস আছে, তাদের দাঁতের সমস্যার ঝুঁকি বেশি। পাশাপাশি যাদের ধূমপান করার অভ্যাস আছে তাদের ক্ষেত্রেও দাঁতের সমস্যা হওয়ার চান্স বেশি। অনেকেই সারাদিন প্রয়োজনের থেকে বেশি পরিমাণে চা কফি পান করে থাকেন। এতেও কিন্তু দাঁতের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। যদি একেবারেই এগুলো খাওয়ার অভ্যাস ছাড়া না যায় তবে চেষ্টা করতে হবে এমন খাদ্য বা পানীয় গ্রহণের পরপরই ভালোভাবে দাঁত পরিষ্কার করতে। অনেক সময় এ সকল খাবারে থাকা কার্বনেট দাঁতের এনামেল নষ্ট করে দেয়। তাই চেষ্টা করতে হবে দাঁতের ক্ষয় রোধে আমাদের খাদ্যাভ্যাসের দিকে বিশেষ নজর দেয়ার।
সময় স্বল্পতায় মাউথওয়াশ ব্যবহার করা
সারাদিন আমরা অফিসের কারণে কিংবা বিভিন্ন কাজে বাইরে থাকি। এ সময় আমরা বিভিন্ন খাবার খাই। দীর্ঘ সময় ধরে খাবারের কণাগুলো দাঁতে আটকে থাকার ফলে মুখে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়, যা নিজের জন্য এবং অন্যের কাছে অস্বস্তির কারণ। কিন্তু বাইরে থাকার কারণে আপনি চাইলেও তখন ব্রাশ করতে পারেন না। সেক্ষেত্রে আপনার বন্ধু হতে পারে মাউথওয়াশ। মার্কেটে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিভিন্ন দামের মাউথওয়াশ পাওয়া যায়। তবে কেনার আগে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে তাতে প্রয়োজনীয় উপদানগুলো আছে কিনা। যেমন- ইউক্যালিপটল, মিথাইল স্যালিসাইলেট, থাইমল, মেন্থল ও সোডিয়াম ফ্লোরাইড ইত্যাদি। নানা রকম ব্যস্ততায় ঝটপট সমধান পেতে মাউথওয়াশের তুলনা হয় না। চাইলে ঘুমানোর আগে মাউথওয়াশ দিয়ে হালকা একটু কুলকুচি করে নিলেই হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, মাউথওয়াশ যেন কোনো ভাবেই গলার ভেতরে বা পেটে না যায়। মুখের বাজে স্মেল ইনস্ট্যান্ট দূর করতে মাউথওয়াশ একটি কার্যকরী জিনিস।
নিয়মিত ডেন্টাল চেকআপ করা
দাঁতে বা মাড়িতে ব্যথা হলে, মাড়ি থেকে রক্ত ঝরলে কিংবা দাঁত শিরশির করলে আমরা ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করি। অনেক সময়ই দেখা যায়, একবার সমস্যা বড় আকারে হয়ে গেলে যতই চিকিৎসা করা হোক তার পার্মানেন্ট কোনো সল্যুশন পাওয়া যায় না। সাময়িক সময়ের জন্য আরাম পেলেও দুই দিন পর পর সেই আবার ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। তাই সমস্যা থাকুক বা না থাকুক, আমাদের চেষ্টা করা উচিত ছয় মাস পর পর না হলেও অন্তত নয় মাস পর পর হলেও রেগুলার নিয়মে একবার ডেন্টাল চেকআপ করানো। এতে ভবিষ্যতের অনেক বড় সমস্যা থেকে যেমন মুক্তি মিলবে তেমনি তাৎক্ষণিকভাবেও আমাদের দাঁত থাকবে সুস্থ ও মজবুত।
খাবার শেষে দাঁত পরিষ্কার করা
অনেকেই মনে করি, বয়স হলে দাঁতের নানা রকম সমস্যা দেখা দিবে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু বিষয়টি একদমই আমাদের নিজেদের গড়ে তোলা অভ্যাসের উপর নির্ভর করে। সুস্থ, সুন্দর দাঁতের জন্যে নিয়মিত যত্ন মাস্ট। আর নিয়মিত যত্নের প্রথম ধাপই কিন্তু খাবার পর, ঘুমাতে যেতে এবং ঘুম থেকে উঠে প্রপারলি দাঁত পরিষ্কার করা। দাঁতের মাড়িতে খাবারের কণা জমে জীবাণুর সংক্রমণ বাড়ায়। এর ফলেই দাঁতের নানা ক্ষতি হয়। একে একে দাঁতের মাড়িতে মারাত্মক ব্যথা, পুঁজ জমে যাওয়া, দাঁতের ক্ষয় এমনকি দাঁত পড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। তাই খাবার শেষে দাঁতের সুরক্ষায় ঠিকমত দাঁত পরিষ্কার করাটা অত্যন্ত জরুরি।
আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গই জরুরি। তাই কোনোটির যত্ন নিব, আর কোনোটির বেলায় অবহেলা করবো তা কিন্তু একদমই উচিত নয়। দাঁত আমাদের শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের চেহারার সৌন্দর্য কিন্তু অনেকাংশেই নির্ভর করে ঝলমলে দাঁতের উপর। তাই আজকে থেকেই এই কয়েকটি ছোট কিন্তু প্রয়োজনীয় অভ্যাস মেনে চলা দিয়ে শুরু হোক নিয়মিত দাঁতের যত্ন নেয়া।
স্কিন ও হেয়ার এর পাশাপাশি নিজের পার্সোনাল কেয়ারের জন্য অথেনটিক প্রোডাক্ট চাইলে আপনারা সাজগোজের চারটি ফিজিক্যাল শপ ভিজিট করতে পারেন। শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার এবং উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) এ অবস্থিত। এই শপগুলোতে ঘুরে নিজের পছন্দমতো অথবা অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন আপনার দরকারি প্রোডাক্টগুলো। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং নিয়মিত নিজের যত্ন নিতে অনীহা করবেন না।
ছবি- সাজগোজ, সাটারস্টক