আমাদের যান্ত্রিক এই শহরে গাড়ি, কলকারখানার সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে বাতাসে থাকা বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের পরিমাণ এবং পরিবেশ দূষণ। তবে এই বিষাক্ত কেমিক্যাল যে শুধু রাস্তাঘাটেই রয়েছে তা কিন্তু নয়, আমাদের বাড়িতেও রয়েছে এমন অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত রাসায়নিক পদার্থ যা সম্পর্কে হয়ত আমাদের ধারণাও নেই। তবে ভয়ের কিছু নেই। খুবই সহজ একটি উপায়ে বাসায় থাকা এই রাসায়নিক পদার্থগুলো দূর করে ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ এবং নিরাপদ করে তোলা সম্ভব আর সেটা হলো বাসগৃহে নির্দিষ্ট কিছু গাছ রাখার মাধ্যমে। এই জিনিসটি বোধ হয় আমাদের অনেকেরই অজানা যে কিছু কিছু গাছ রয়েছে যেগুলো বাসায় রাখলে তা বাসায় থাকা বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থ দূর করে ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে। আজ আমরা সে রকমই অনেক গাছের মধ্যে ৫টি গাছের গুণাগুণ এবং যত্ন নেয়া সম্পর্কে জানবো।
ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ রাখতে কিছু গাছ
১) অ্যালোভেরা
রূপচর্চা থেকে শুরু করে প্রায় সব কিছুতেই এর জয়জয়কার। এই অ্যালোভেরার যে আরও একটি গুণ আছে সেটা কি আমরা জানি? হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ করতেও অ্যালোভেরার অবদান রয়েছে। এটি বাতাসে থাকা বেনজিন ও ফরমালডিহাইড দূর করতে খুব কার্যকরী। তবে অ্যালোভেরা সম্পর্কে একটি মজার তথ্য হচ্ছে যখন বাতাসে থাকা ক্ষতিকর কেমিক্যালের পরিমাণ খুব বেশি বেড়ে যায় তখন এর পাতায় ছোট ছোট বাদামি দাগ পড়ে যায় যার মাধ্যমে আপনি সহজেই আপনার ঘরে থাকা বিষাক্ত পদার্থের মাত্রা বুঝে নিতে পারবেন। অ্যালোভেরার যত্ন বিষয়ে একটি কাজ অবশ্যই করতে হবে আর সেটি হচ্ছে একে সূর্যের আলোতে রাখতে হবে। কারণ পর্যাপ্ত সূর্যের আলোতেই অ্যালোভেরা সবচেয়ে ভালো মতো বেড়ে উঠে।
২) ফার্ন
ফার্ন ঘরের বাতাস পরিষ্কার করতে খুব কার্যকরী হিসেবে বিবেচিত। তবে এটি ফরমালডিহাইড দূর করতে বেশি কার্যকর বলে গণ্য করা হয়। এটি কাঠের তৈরি আসবাবপত্র, কেবিনেট, ফার্নিচার ইত্যাদিতে থাকা ফরমালডিহাইড দূর করতে খুব উপকারী। এছাড়াও বাতাসের জাইলিন, টলুইন ইত্যাদি দূর করে এই ফার্ন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, এটি মাটিতে থাকা বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ যেমন মারকিউরি, আর্সেনিক দূর করতেও উপকারী। ফার্ন গাছ খুব তাড়াতাড়ি বড় হয় এবং এতে কোন ফুল হয় না। তবে এটি সবচেয়ে ভালোভাবে বৃদ্ধি পায় যখন এটি বারান্দায় বা দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা যায়। এভাবে রাখলে খুবই দ্রুত এর শাখা প্রশাখা বেড়ে উঠে।
৩) ছোট জাতের বাঁশ গাছ বা ব্যাম্বো পাম
এই ধরনের বাঁশ গাছগুলো সর্বোচ্চ ৩-৬ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। এই গাছ ঘরের এক কোনায় বা অফিসে রাখার মাধ্যমে যেমন সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলা যায়, তেমনি পরিবেশ রক্ষায়ও এর কাজ তুলনাহীন। বেনজিন, ট্রাই ক্লোরোইথিলিন এবং আরও অনেক ধরনের বিষাক্ত কেমিক্যাল বাতাস থেকে দূর করে এই গাছ। এবার আসা যাক এই গাছের যত্ন সম্পর্কে। এই গাছটি সরাসরি সূর্যের আলোতে রাখা যাবে না। এমন জায়গায় রাখুন যেখানে আলো আছে তবে তা যেন সরাসরি গাছের উপর না পড়ে। গাছের টবের মাটি যেন সব সময় ভেজা থাকে সেজন্য নিয়মিত পানি দিতে হবে। আর ভালোমতো বৃদ্ধির জন্য মাসে একবার এতে লিকুইড ফার্টিলাইজার দিতে হবে।
৪) রাবার গাছ
রাবার গাছ ঘর থেকে বিষাক্ত ফরমালডিহাইড দূর করতে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। এছাড়াও অন্যান্য কেমিকেল যেমন কার্বন মনোঅক্সাইড, ট্রাই ক্লোরো ইথিলিন ইত্যাদি দূর করতেও এই গাছ খুব উপকারী। রাবার গাছ উজ্জ্বল আলোতে খুব ভালো বাড়ে। রাবার গাছ ৮ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এই গাছ যখন বাড়ন্ত পর্যায়ে থাকে তখন নিয়মিত পানি এবং মাসে একবার নাইট্রোজেন ফার্টিলাইজার দিতে হবে। গাছের সাইজ ঠিক রাখার জন্য কয়েক মাস পর পর এর ডালপালা ছেঁটে দিতে পারেন এবং গাছের পাতা যাতে ঝকঝকে থাকে সেজন্য কয়েকদিন পর পর একটি ভেজা কাপড় দিয়ে পাতাগুলো মুছে ফেলতে পারেন।
৫) চন্দ্রমল্লিকা
চন্দ্রমল্লিকা গাছ দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি আপনার বাসার পরিবেশও করে তুলবে সুন্দর ও নিরাপদ। এটি বাতাসে থাকা ফরমালডিহাইড, জাইলিন, বেনজিন এবং অ্যামোনিয়াসহ বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ দূর করতে খুব উপকারী। তবে এই গাছের পরিচর্যা নেয়ার ক্ষেত্রে খানিকটা সতর্ক থাকতে হবে। কারণ সঠিকভাবে যত্ন না করলে এই গাছ বেশি দিন বাঁচে না। চন্দ্রমল্লিকা গাছ সব সময় আলোতে রাখবেন, তবে সেই আলোটা যেন সরাসরি গাছের উপর এসে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। এই গাছের মাটি সব সময় ভেজা রাখতে হবে।
ছবি- সাটারস্টক