১ মাসে ১০ কেজি ওজন কমাতে চান এমন কেউ খুব আশা নিয়ে পড়তে শুরু করলে দুঃখ পাবেন, টাইটেল-টা একটু ক্লিকবেট টাইপ হয়েছে। ইজিলি এক মাসে খুব দ্রুত ওজন কমানো যায় কিভাবে বা ওজন ১০-২০-৩০ কেজি কমানোর বুদ্ধি দিতে আসি নি। এসেছি আসলে, এমন একটা বিশাল পরিমাণে ওজন সত্যি সত্যি সাসটেইনেবল-ভাবে কমানো যায় কিনা… খুব দ্রুত ওজন কমানো ঠিক কিনা, তাই নিয়ে বকবক করতে।
তো আসুন, খুব দ্রুত ওজন কমানো নিয়ে কিছু FREQUENTLY ASKED QUESTIONS (FAQ)-এর উত্তর জেনে নেই।
– “সামনে কোন অনুষ্ঠান? এক সপ্তাহে ৫ কেজি ওজন কমাবো!”
– অনেকদিন ওজন মাপেন নি? ওজন ১২-১৫ কেজি বেড়ে গেছে? আত্মীয়ের খোঁটা শুনে এসেছেন?
– “এক মাসে ১০ কেজি কমাবো!”
– “গত মাসে ফিট হওয়া সুন্দর জামাটা আজকে ফট করে ফেটে গেল? এক্ষুনি ওজন কমাবো!!”
…… কারণ যাই হোক, উদ্ভট এসব শখের প্রথম ধাপ হয় নেটে “কিভাবে ওজন কমাবো?”-সার্চ দিয়ে! আর সেই টাইপ সার্চ-এর কিছু জনপ্রিয় প্রশ্ন-
খুব দ্রুত ওজন কমানো নিয়ে প্রশ্ন-উত্তর পর্ব
১) অনেক মোটা হয়েছেন, খুব দ্রুত ওজন কিভাবে কমাবেন?
“অনেক মোটা হয়েছি, খুব দ্রুত ওজন কীভাবে কমাবো?” প্রশ্নটা যারা করেন তাদের আমরা উলটো প্রশ্ন করতে চাই-
‘অনেক মোটা’ হতে আপনার কতদিন লেগেছে? কতদিন আগে শুকনো ছিলেন?
উত্তর-
*গত ৬-৭ মাসে মোটা হয়েছি।
*খেয়ালই করি নি কবে মোটা হলাম!
*সবাই বলে মোটা হয়েছি।
*ওজন মাপি না, একদিন মেপে দেখি হঠাৎ করেই মোটা হয়েছি।
মূলত উপরের উত্তরগুলো আসে যারা নিজের হেলথ, ওয়েলনেস নিয়ে একেবারেই সচেতন না তাদের কাছ থেকে। সারাজীবন ধরে ২ ভাবে এরা নিজের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে-
১. নিজের ওজনের দিকে খেয়াল না রেখে হঠাৎ বিশাল পরিমাণে ওজন গেইন করে।
২. বিশাল ওজন বিভিন্ন ক্রাশ ডায়েট, হাবিজাবি ‘হারবাল চা’, ‘সাপ্লিমেন্টস’ খেয়ে কমানোর চেষ্টা করে আবার নিজের স্বাস্থ্য আরেকদফা নষ্ট করে।
তাই হঠাৎ মোটা হয়ে খুব দ্রুত ওজন কমানো যায় কিভাবে? প্রথমত, নিজের বাক্য থেকে ‘হঠাৎ’ শব্দটা সরান। ‘হঠাৎ’ কেউ মোটা হয় না। ডেইলি ১ টা ১২ ইঞ্চি পিজ্জা খেয়ে সারাদিন ঘুমালেও একজন স্বাভাবিক মানুষের ওজন ১০-১৫ কেজি বাড়তে ৫-৬ মাস লাগবে… তাই একটুও নড়াচড়া না করে এই ওজন আপনি ১ সপ্তাহে কমাবেন কিভাবে? এতো সহজ?
নিজের কাছে বিশ্বাসযোগ্য লাগে নিজের প্রশ্ন?
অস্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল-এর একজন মানুষ যে এক্সারসাইজ করে না এবং যার মেটাবলিজম স্বাভাবিক বা একটু স্লো, তার স্বাস্থ্যকরভাবে বাড়তি ১০-১৫ কেজি ওজন কমাতে ১ বছরের মতো সময় লাগতে পারে।
‘স্বাস্থ্যকর’ ‘সাসটেইনেবল’ ভাবে ওজন কমাতে কি বোঝাচ্ছি?
১. যেখানে ওজন কমার সাইড ইফেক্ট হিসেবে আপনি ম্যালনিউট্রিশন-এ ভুগবেন না, স্কিন, চুলের ক্ষতি হবে না।
২. সবচেয়ে বড় কথা ওজন আজ ৫ কেজি কমে কালকেই আবার ৭ কেজি বাড়বে না। ১০ কেজি কমার পর আপনি ঐ ওয়েট-টাই ধরে রাখতে পারবেন।
তাই ‘খুব দ্রুত’ নিজের একটা বিশাল ক্ষতি না করে ন্যাচারালি আপনি ওজন কমাতে পারবেন না। সেই চেষ্টা করাটাও ঠিক হবে না। এর চেয়ে হাতে সময় নিয়ে ধৈর্য ধরে স্বাস্থ্যকর রুটিন ডায়েট, পরিমিত এক্সারসাইজ ডেইলি করলে স্বাস্থ্য আর সময় দুটোই বাঁচবে। সেটাই করুন।
২) অসুস্থতা বা অপারেশনের পর মোটা হয়েছি, কিভাবে কমবো?
সি-সেকশন, PCOS, থাইরয়েড-সহ অন্যান্য হরমোনাল প্রবলেম, হেরিডেটারি এক্সট্রিম স্লো মেটাবলিসম-এর কারণে অনেকের হুহু করে ওজন বাড়তে থাকে। অনেক সময় এসব প্রবলেম ধরা পড়ার আগেই ওজন একটা ভয়ঙ্কর পর্যায়ে চলে যায়! তখনও দেখা যায় ডাক্তারের হেল্প না নিয়ে না খেয়ে না খেয়ে, নেট থেকে চার্ট নামিয়ে অনেকে নিজে নিজে ডায়েট করে ওজন কমানোর ট্রাই করেন। কিন্তু খাওয়া যতই কমুক, ওজন আর কমে না! এর চেয়ে কষ্টের আর কি আছে?
এক্ষেত্রেও হুট করে ওজন কমানো একেবারেই ইম্পসিবল। প্রথমে আপনাকে ডাক্তারের সাহায্য নিতে হবে। ওজন বেড়েই যাচ্ছে, কনট্রোল করতে চাইলেও পাড়ছেন না? এক্ষুনি চেক আপ করান। আপনার প্রবলেম আছে কিনা সেটা না বুঝলে সলিউশন কিভাবে পাবেন? হরমোনাল প্রবলেম ধরা পড়লে অবশ্যই সেই প্রবলেম আগে ট্রিট করতে হবে। অসুস্থতা জনিত অতিরিক্ত ওজনের জন্য লং-টার্ম কাসটোমাইজড ডায়েট চার্ট দরকার হবে। সেটা দেবে ডাক্তার/ নিউট্রিশনিস্ট। সাথে দরকার হবে ডেইলি ৩০-৪০ মিনিট এক্সারসাইজ।
এছাড়া আর কোনভাবেই আপনার ওজন কমাতে বা কনট্রোলে রাখা সম্ভব হবে না। তাই সময় নষ্ট না করে ‘শিওর’ আর ‘সেফ’ রাস্তা বেঁছে নেয়াটাই ভালো না?
৩) এক সপ্তাহ পর প্রোগ্রাম, ৫ কেজি কমাবো কীভাবে?
এগেইন, সামনে প্রোগ্র্যাম এই লজিক আপনার শরীর বুঝবে না। ৫ কেজি ওজন বাড়াতে যত টাইম লেগেছে আপনার, কমাতে মিনিমাম তার ৩-৪ গুণ বেশি সময় লাগবে। তারপরেও ১ সপ্তাহে ৫ কেজি কমাতে চান? নেক্সট ৭ দিন যদি শুধু পানিও খান আপনি আপনার ওজন ৩-৪ কেজি কমতে পারে… এর ভেতরে আপনার সিরিয়াস লো ব্লাড প্রেশার, ম্যালনিউট্রিশন হবে। চুল পড়ে যাবে অর্ধেকের মতো।
আর এক সপ্তাহ পর? যখন আবার “প্রোগ্রাম” শেষে রেগুলার ডাল ভাতের ডায়েটে যাবেন? ১ মাসে আরও ৪-৫ কেজি ওজন বাড়বে! আগের চেয়েও একটু বেশি মোটা হয়ে যাবেন…নেক্সট ‘প্রোগ্রামের’ আগে এই সেম সাইকেল রিপিট করবেন। এভাবেই আপনার জীবন চলবে।
তাই না, এক সপ্তাহে এতো ওজন কমানো যায় না। বড়জোর হাফ কেজি থেকে ১ কেজি সেফলি এক্সারসাইজ ডায়েট দিয়ে কমাতে পাড়েন।
৪) তাহলে দ্রুত ওজন কিভাবে কমাবেন? জিরা পানি, আদা পানি, গ্রিন টি, দারুচিনি খাব? তখন কমবে?
আবারো না, ‘কিছু খেয়ে ওজন কমানো সম্ভব না’ এই পয়েন্ট-টা খুব ভালোভাবে বুঝতে হবে। এই সব হেনতেন কিছু ক্ষেত্রে ‘মেটাবলিজম’ বাড়াতে হেল্প করবে। কিন্তু জাস্ট ‘ক্রাশ ডায়েট’ আর সকাল-বিকাল এই পানি সেই পানি খেয়ে ওজন কমানোর ট্রাই করে লাভের ভেতরে লাভ যা হতে পারে তা হচ্ছে- বিশাল গ্যাসট্রিক, অ্যাসিডিটি প্রবলেম, ডায়ারিয়া, লো ব্লাড প্রেশার, অ্যানিমিয়া… আর কিছুই না।
সেইফ ডায়েট, এক্সারসাইজ-এর সাথে গ্রিন টি খাওয়া খুবই ভালো (এ নিয়ে আগে বলেছি, চাইলে পড়তে পাড়েন) । বাট জিরা, আদা, দারুচিনি ওজন কমায় এটা কেউ নিশ্চিতভাবে আজ পর্যন্ত প্রমাণ করতে পারে নি।
৫) আসলে আমার ওজন কমতে কতদিন লাগবে?
একেক মানুষের ওজন একেক হারে বাড়ে আর কমে। এটা পুরোপুরি মেটাবলিজম-এর হারের উপর নির্ভর করে। কেউ অনেক খেয়েও মোটা হয় না, আবার কেউ এক প্লেট ভাত খেয়েও মোটা হয়ে যায়। তাই নিজের ধাত বোঝার ট্রাই করুন।
এতে ‘রিয়েলিস্টিক’ ওয়েট লস এক্সপেকটেশন তৈরি করতে পারবেন।
‘অমুকে ২ মাসে শুকাইল, আমি এতো ডায়েট করলাম আমি শুকাইলাম না !’- এটা ভেবে দুঃখ আর পেতে হবে না।
আবার বলছি- ওজন কতদিনে বাড়ল সেটা ভাবুন, সেটা ৪ দিয়ে গুণ দিন। মোটামুটি ঐ সময়ের ভেতরে এক্সারসাইজ, একটু হেলদি ফুড হ্যাবিট প্র্যাকটিস করে ওজন কমানোর চেষ্টা করুন।
কষ্ট ছাড়া কেষ্ট মেলে না। সাকসেস-এর কোন শর্টকাট নেই। ওকে?
ছবি- সাটারস্টক