বলা হয়, সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে। কিন্তু বাস্তবে এমনটি নয়। একটি ভালোবাসার সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হলে দুইজনেরই সমানভাবে চেষ্টা করতে হবে। তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, যেকোনো একজন তার সঙ্গীকে খুশি করার জন্য নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছা ভুলে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, যেখানে অন্যজন তার মনমত চলছেন। এতে অনেক সময় সম্পর্কে হতাশা, চাওয়া পাওয়ার হিসেব চলে আসে। আপনিও কি সম্পর্কের মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন? আসুন, দেখে নেওয়া যাক, কীভাবে তা বুঝবেন?
(১) সবকিছুতেই তার মতামত প্রাধান্য পায়
কোথাও দেখা করবেন? সবসময় কি তার সুবিধাজনক জায়গায়? কখন দেখা করবেন? তাও তার সুবিধামত, প্রত্যেকবার?কোথাও হয়ত খেতে বের হবেন? রেস্টুরেন্ট, খাবার কি সবসময় তারই পছন্দের হয়? জানি, আপনি আপনার সঙ্গীকে অনেক ভালবাসেন, কিন্ত তারও উচিত মাঝেমধ্যে আপনার মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া। আপনার চয়েস তার চয়েস এর চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে সুযোগ দিন, সঙ্গীও আপনাকে আর ভালোভাবে জানার সুযোগ পাবেন, সম্পর্ক ও মজবুত হবে।
(২) ক্যারিয়ার পরিবর্তন
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সঙ্গীর অমত/অপছন্দের কারণে একজন তার ক্যারিয়ার এর সাথে সমঝোতা করে। মৃত্যু হয় তার স্বপ্নের, সারাজীবনের জন্য একটি আক্ষেপ রয়ে যায়।এটি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আপনি একজন স্মার্ট, স্বাধীন, ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেড ব্যাক্তি, আপনার ক্যারিয়ারের সকল সিদ্ধান্ত আপনার নিজের। যে আপনাকে ভালোবাসে সে আপনার লক্ষ্য অর্জনে বাধা দিবে না। সঙ্গীকে বুঝিয়ে বলুন, তাকে আশ্বাস দিন আপনার ক্যারিয়ার সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।
(৩) উপহার ও প্রশংসা
মাঝেমধ্যে ছোট উপহার ও প্রশংসা সম্পর্কে অনেক ভালোলাগা সৃষ্টি করে। কিন্তু আপনি হয়ত কষ্টের টাকা জমিয়ে প্রিয়জনের জন্য উপহার কিনলেন, রাতভর জেগে নিজের হাতে কিছু একটা বানালেন, আপনার সঙ্গীর তা খেয়ালই করলেন না। টাকাটা মুখ্য নয়, আপনার সঙ্গীর ভালোবাসাটাই মুখ্য। সেটা প্রকাশ করা যেতে পারে আপনাকে আপনার প্রিয় ফুল উপহার দিয়ে, অথবা আপনার প্রিয় চকলেট দিয়ে আপনাকে সারপ্রাইজ করে। এমনটা যদি না হয়, তাহলে আপনি নিজের দিকও মনোযোগ দিন, নিজের প্রয়োজন-শখ পূরণে এ কষ্টের টাকাটি খরচ করুন।
(৪) স্বীকৃতি
যেকোনো সম্পর্কে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বান্ধবী/ গার্লফ্রেন্ড হিসেবে সে কি আপনাকে স্বীকৃতি দেয়? অনুষ্ঠান-বন্ধুমহলে সে কি সবসময় আপনাকে তার পাশে রাখে? আপনার সমস্যা- সংকটে সে কি আপনার পাশে দাঁড়ায়? আপনার সম্মান- অসম্মানকে কি নিজের সম্মান- অসম্মান হিসেবে গণ্য করে? কেউ আপনার প্রতি মিথ্যে অভিযোগ বা আপনাকে হয়রানি করলে কি সে তার প্রতিবাদ করে? আপনার সাথে কি সে নিজের ভবিষ্যৎ দেখতে পায়? যদি এসব প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে চিন্তার কিছুই নেই। তবে যদি ‘না’ হয়, তাহলে আবার ভাবুন। আপনি কেন এমন মানুষের সঙ্গে থাকবেন, যার জীবনে আপনার অস্তিত্ব, আপনার সম্মান গুরুত্বপূর্ণ নয়। আপনার সঙ্গীকে খুলে বলুন কোন ব্যাপারটি আপনার কাছে ভালো লাগে না। আপনাকে ভালোবাসলে তিনি নিশ্চই তার ভুল বুঝতে পারবেন এবং আপনার প্রতি আরও দায়িত্বশীল হবেন।
(৫) নিজেকে ভুলতে বসা
প্রেম- ভালোবাসা খুবই মধুর এবং সুন্দর। প্রেমে পড়লে মনে হয়, নিজের অস্তিত্বটাই যেন প্রেমিক/প্রেমিকাকে ঘিরে। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। আপনার অস্তিত্ব আপনার ব্যক্তিত্বকে ঘিরেই। প্রথম কয়েকমাসের ঘোর কেটে গেলেই তা টের পাওয়া যায়। আপনি হয়ত পড়তে ভালবাসেন, ছবি আঁকতে অথবা ঘুরতে। অথবা ঘুমাতে। কিন্তু আপনি হয়ত সঙ্গীর চিন্তায় এতটাই মগ্ন, যে নিজের কাজ-শখ ভুলতে বসেছেন। এমনও দেখা যায়, যে গুণের কারণে আপনার সঙ্গী আপনাকে পছন্দ করেছেন, সেটি এখন আর আপনি করছেন না, ফলে আপনার সঙ্গী ও আপনার প্রতি আগের মতন নেই।
নিজেকে ভালবাসুন, নিজের কাজ-শখকেও প্রাধান্য দিন। মানসিক শান্তি, আত্মবিশ্বাস ও সম্পর্কে সুখ সবই ফিরে আসবে।
ছবি – Shutterstock
লিখেছেন – হুমায়রা রহমান