আমাদের অতি পরিচিত একটি মৌসুমি ফল আনারস। সৌন্দর্যের জন্য এ ফলকে “স্বর্ণকুমারী” বলে অ্যাখায়িত করা হয়। পুষ্টিকর ও সুস্বাদু এই ফলে রয়েছে ভিটামিন-এ, বি, সি, ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। এছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম আনারসে রয়েছে ০.৬ ভাগ প্রোটিন, ০.১২ গ্রাম সহজপাচ্য ফ্যাট, ০.৫ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ১৩.১২ গ্রাম শর্করা, ০.১১ গ্রাম ভিটামিন বি-১, ০.০৪ মি. গ্রাম ভিটামিন-২, ভিটামিন- সি ৪৭.৮ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৮ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ০.০২ গ্রাম, আঁশ ১.৪ গ্রাম এবং ১.২ মিলি গ্রাম লৌহ।
এতো গেল আনারসের পুষ্টিগুণ নিয়ে কথা কিন্তু আমি আজ আপনাদের বলবো সুস্বাদু আর স্বাস্থ্যকর এই ফলের ত্বকের যত্নে কিছু জাদুকরী ফেসমাস্কের কথা। আনারসে উপস্থিত Bromeliad নামক এনজাইম আমাদের ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী যা কিনা ত্বকের মৃত কোষ, এজ স্পট, ফাইন লাইন, ত্বকের উপরিভাগের ময়লা ও সানবার্ন এর মতো দাগ তুলতে সাহায্য করে ও ত্বক সফট আর সাফল করে। এমনকি আনারস ও আনারসের ফেসিয়াল মাস্ক ত্বকে ব্রণের বিরুদ্ধে ভালো কাজ করে।
[picture]
(১) আনারস ও মধুর ফেসমাস্ক
- ফ্রেশ আনারস
- ৩ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল
- ১ টেবিল চামচ অরগানিক মধু
যেভাবে করবেন –
পরিমাণ মতো আনারস নিয়ে অলিভ অয়েল আর মধু সহ চটকাতে থাকুন যতক্ষণ না এটি মুখে লাগানোর মতো মিহি পেস্ট আকার ধারণ করে। এবার এই মিহি পেস্ট আপনার পরিষ্কার ত্বকে হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে মুখে ও গলায় লাগান চোখের এরিয়া বাদ রেখে। মাস্ক লাগিয়ে রিলাক্স হয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন। ১৫ মিনিট পর আপনার মুখ হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং পরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে আরেকবার মুখ ধুয়ে নিন। শুকনা তোয়ালে দিয়ে মুখ ভালোভাবে মুছে একটা ময়েশ্চারাইজার ক্রিম লাগিয়ে নিন। এতে আপনার ত্বক ভেতর থেকে আর্দ্র আর কোমল থাকবে।
উপকারিতা –
এই মাস্ক আপনার ত্বকের ন্যাচারাল গ্লো বাড়িয়ে তুলবে সাথে সাথেই স্কিন হেলদি রাখবে। এই মাস্ক ত্বকের রোদে পোড়াভাব এক কথাই সান বার্ন কমিয়ে তুলবে।
(২) পেঁপে, মধু ও আনারসের ফেসমাস্ক-
- পাকা পেঁপে
- ফ্রেশ আনারস
- অরগানিক মধু
যেভাবে করবেন –
পেঁপে, আনারস ও মধু একটা ব্লেন্ডারে নিয়ে ব্লেন্ড করুন। সব উপাদান ভালোভাবে মিশে গেলে এই পেস্ট আপনার হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে সুন্দর করে মুখের ত্বকে লাগিয়ে নিন। ৫-১০ মিনিট এই পেস্ট লাগিয়ে বিশ্রাম নিন এবং পরে মৃদু গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। শেষে আরও একবার ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করুন আর তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে ময়েশ্চারাইজার লাগান।
উপকারিতা –
এই মাস্ক আপনার ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখবে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে এবং ত্বকের এক্সফলিয়েটর এর কাজ করবে।
(৩) ডিমের সাদা অংশ, মধু ও আনারসের ফেসমাস্ক-
- ফ্রেশ আনারস
- একটি ডিমের সাদা অংশ
- এক টেবিল চামচ অরগানিক মধু
যেভাবে করবেন –
ডিমের সাদা অংশ, মধু ও আনারস একসাথে ব্লেন্ড করুন এরপর এটি আপনার ত্বকের শুধুমাত্র চোখের এরিয়া বাদে সারা মুখে লাগিয়ে নিন। ২০ মিনিট অপেক্ষা করে প্রথমে হালকা গরম ও পরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
উপকারিতা –
এটি একটি স্কিন টাইটেনিং মাস্ক। এমনকি এই মাস্ক এর ডিমের যে উপাদানটুকু উপস্থিত সেটুকু আপনার ত্বক টনিং ও টাইটেনিং করতে অনেক সাহায্য করবে।
(৪) কোকোনাট মিল্ক ও আনারসের মাস্ক-
- ৪ টুকরা ফ্রেশ আনারস স্লাইস
- ২ টেবিল চামচ কোকোনাট মিল্ক
যেভাবে করবেন –
এই দুই উপাদান ভালোভাবে পেস্ট বানিয়ে আপনার ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর গরম পানিতে একটি নরম কাপড় ভিজিয়ে তার সাহায্যে মুখ মুছে ফেলুন আর পরে ঠাণ্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে নিন। মুখ মুছে আপনার পছন্দের কোন ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।
উপকারিতা –
এটি ত্বক উজ্জ্বল করবে ও ত্বকের লাবণ্য ফিরিয়ে আনবে।
টিপস –
উপরের যেকোন মাস্ক মুখে আপ্লাই করার আগে মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন আর নিশ্চিত করুন যাতে ত্বকে কোন প্রকার ক্রিম বা লোশন না থাকে।
এই মাস্কগুলো লাগিয়ে সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি মুখে মাস্ক রাখার সময়টুকু শুয়ে কাটান আর আপনার চোখের উপর দুই টুকরা শশা অথবা ভেজা কটন বল রাখেন।
মাস্কে সব সময় ফ্রেশ ফ্রুট ব্যবহার করুন আর শুধুমাত্র ফ্রুট মাস্কই নয় চেষ্টা করুন সাথে সাথেই ফ্রেশ ফ্রুট খেতে।
ছবি – জোভেইন ডট কম
লিখেছেন- রুমানা রহমান