টক দই প্রায় সব ধরনের ত্বকের জন্যই খুব ভালো। এটা ত্বকে যেমন ব্যবহার করে ভালো ফল পাওয়া যায়, তেমনি খুব সহজে ঘরে থাকা অন্যান্য উপকরণের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা খুব সহজেই দূর করতে পারে। নিয়মিত ত্বকে টকদইয়ের ব্যবহারে ত্বক হয় আরও ফর্সা, দূর হয় ত্বকের অনাকাঙ্ক্ষিত দাগ আর পিগমেন্টেশন এবং খুবই কম সময়ে রোদে পোড়া ভাব চলে যায়। আজ আমি বলব ত্বকে টকদই ব্যবহার করার সবচেয়ে সহজ আর কার্যকরী পাঁচটি উপায় সম্পর্কে আর সাথে সাথে কোন ধরনের ত্বকের জন্য কোন ফেসপ্যাকটা ভালো হবে সেটাও।
আজকাল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের টকদই বাজারে পাওয়া যায়, আপনারা এই প্যাকগুলো বানাতে তার যে কোনটাই ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া টকদই কীভাবে তৈরি করতে হয় তা নিয়ে সাজগোজ ওয়েবসাইটে বিস্তারিত পোস্ট আছে, আপনারা যদি বাজার থেকে কিনতে না চান অথবা সেই সুযোগ না থাকে তবে খুব সহজেই ঘরেই তৈরি করে নিতে পারেন বিশুদ্ধ টকদই।
(১) স্কিন হোয়াইটেনিং ইয়োগারট ফেস প্যাক-
এই ফেস প্যাক রেগুলার ব্যবহার করলে ত্বক খুব দ্রুত উজ্জ্বল হবে। সাথে সাথে ত্বকের ব্রণসহ অন্যান্য দাগ-ছোপ হালকা হয়ে যাবে। সব ধরনের ত্বকের অধিকারীরাই এই প্যাকটা ব্যবহার করতে পারবে।
কী কী লাগবে-
- ১ টেবিলচামচ তাজা টকদই
- ১ চাচামচ লেবুর রস
- আধা চা চামচ মধু
কী করবেন-
সব উপকরণ একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট সমানভাবে মুখ ঘাড় আর গলায় লাগিয়ে রাখুন। ১৫ মিনিট পর উষ্ণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
(২) ইয়োগারট ডি-ট্যানিং ফেস প্যাক-
এই প্যাকটাও সবাই ব্যবহার করতে পারবেন। সমস্যা বেশি হলে ( ত্বক খুব বেশি রোদে পুড়ে গেলে ) প্রত্যেকদিন ব্যবহার করলে খুব দ্রুত ফল পাবেন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এটা খুবই উপকারী, আর যারা প্রথম প্যাকটা ব্যবহার করতে পারবেন না ত্বকের সেন্সিটিভিটির জন্য তারাও এটা ব্যবহার করতে পারেন।
কী কী লাগবে-
- টমেটো অর্ধেক করে কাটা
- ১ টেবিল চামচ টক দই
- এক চিমটি চিনি
কী করবেন-
কাটা টমেটোর টুকরার উপর চিনির গুঁড়া ছড়িয়ে নিন। এবার এটার উপরে টক দই নিন। এবার এই টমেটোর টুকরা রোদে পোড়া ত্বকে হালকা করে ম্যাসাজ করুন। এতে ত্বকের ডেডসেলস উঠে আসবে। চিনির দানা গলে গেলে ফেস প্যাক মুখে আরও ১০ মিনিট রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
(৩) মিন্ট ইয়োগারট ফেস প্যাক-
এই প্যাক তৈলাক্ত ত্বকের জন্য খুবই রিফ্রেশিং আর উপকারী হবে। ত্বকে হালকা হোয়াইটহেড যাদের আছে তারা এই প্যাক ব্যবহারে ভালো ফল পাবেন। এছাড়া গরমের সময়ে পুদিনা পাতার ঠাণ্ডা ফিলিংস আপনাকে অনেক রিলাক্সড ফিল এনে দিবে।
কী কী লাগবে-
- আধা চা চামচ পুদিনা পাতা বাটা
( আমি একদম মিহি পেস্ট করি না। একটু দানা দানা থাকলে ফেস প্যাক ধোয়ার সময় স্কিনটা একটু স্ক্রাব করা হয়)
- এক টেবিল চামচ টকদই
- ত্বক খুব অয়েলি হলে ১ চা চামচ মুলতানি মাটি মেশাতে পারেন
কী করবেন-
সব উপকরণ একসাথে মিশিয়ে হালকা সবুজ রঙের পেস্ট তৈরি করুন। ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন। এরপর ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন ত্বকের ছোট ছোট ব্রণ আর হোয়াইটহেড আর দেখাই যাচ্ছে না।
(৪) স্কিন হোয়াইটেনিং প্যাক
এবারের প্যাকটাও সব ধরনের ত্বকের অধিকারীরা ব্যবহার করতে পারবেন কিন্তু তৈলাক্ত ত্বকের জন্য একটু বেশি ভালো হবে। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক হবে উজ্জ্বল আর পিগমেন্টেশন দূর হবে।
কী কী লাগবে-
- এক চা চামচ কমলার রস
- ১ টেবিল চামচ টকদই
কী করবেন-
কমলার রস আর টকদই মিশিয়ে ত্বকে হালকা ম্যাসাজ করে লাগান। ১০-১৫ মিনিট রাখুন এরপর ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফল পেতে প্রতিদিন রাতে ব্যবহার করুন।
(৫) স্যাফরন ইয়োগারট ফেস প্যাক-
ত্বকের রঙ উজ্জ্বল করতে আর সোনালি আভা দিতে এই ফেসপ্যাকটির কোন জুড়ি নেই। কিন্তু এটা শেষে রাখলাম আমাদের দেশে জাফরান(স্যাফরন) খুবই দুর্লভ হবার কারণে। কিন্তু যারা আসল জাফরান সংগ্রহ করতে পারবেন তাদের গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারব রেগুলার এই ফেস প্যাক ব্যবহারে আপনি অবশ্যই পাবেন উজ্জ্বল মসৃণ ত্বক। সব ধরনের ত্বকে ব্যবহার করা যাবে এই প্যাক।
কী কী লাগবে-
- জাফরানের ৪-৫ টা কেশর
- ১ টেবিল চামচ টক দই
- ১ চা চামচ বেসন
কী করবেন-
টক দইয়ের মধ্যে জাফরানের কেশর মিশিয়ে সারারাত ফ্রিজে রেখে দিন। পরদিন দেখবেন জাফরান রঙ ছেড়ে দইয়ে খুব সুন্দর একটা হলদে টোন নিয়ে এসেছে। এই দইয়ের মধ্যে বেসন মিশান। এবার এই পেস্ট ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। যখন প্যাক শুকিয়ে আসবে তখন ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন। জাফরান যতদিন ত্বকে ব্যবহার করবেন ততদিন ভালো ফলাফলের জন্য অতিরিক্ত রোদে যাবেন না বা গেলেও ছাতা ব্যবহার করবেন। এতে অল্প সময়ে খুব ভালো ফল পাবেন।
লিখেছেন- মীম তাবাসসুম
ছবি- স্টাইলক্রেজ.কম, সাটারস্টক