প্রথম পর্ব এখানে
এর আগে টিন এজে নিজের যত্ন নিয়ে যে লেখাটি লিখেছিলাম সেখানে রূপচর্চার আগে কী দরকার তা বোঝানোর চেষ্টা করেছি। জানিনা কে কতটুকু সেটা ফলো করবে! কিন্তু এটুকু জানি যে আজকের লেখায় এবং এর পরের পর্বে যে কথাগুলো বলব সেগুলো জান-প্রাণ দিয়ে মানলেও আগের যে অত্যন্ত বোরিং (!!) এবং রস-কসহীন টিপসগুলো দিয়েছি সেগুলো না মানলে ফলাফল হবে জিরো!!
সিরিয়াসলি, কে চায় বলুন? বন্ধুদের দেখাদেখি অনেকগুলো টাকা খরচ করে পার্লারে গিয়ে ফেয়ার পলিশ না করিয়ে বাসায় বসে গ্লাসের পর গ্লাস পানি খেতে? আর রাত ১০টায় ঘুমালেতো জীবনের সব মজা শেষ!! কারণফেসবুকের আসর তো ঠিক তখনি মাত্র চাঙ্গা হয়!! তাই না!!
আবারো অনেক এক্সট্রা কথা বলে ফেললাম! এখন বলি আজকের লেখাটা কী নিয়ে, আজ কথা বলব টিন এজে ডেইলি স্কিন কেয়ার নিয়ে। অনেক বয়স্ক মানুষ হয়ত ভ্রু কোঁচকাবেন আর ভাববেন, বাচ্চাদের আবার স্কিন কেয়ার কি?? কিন্তু ভুলটা আমরা এখানেই করি! এখন থেকে রেগুলার স্কিন কেয়ারের সঠিক তথ্যগুলো জানা না থাকার কারণে একটু বড় হয়ে গেলে যাচ্ছেতাই সব ভুল করে সারাজীবনের জন্য স্কিন নষ্ট করে ফেলে অনেকে!!
আর স্পেসিফিকালি আজ কথা বলব ক্লিন্সিং নিয়ে। বিভিন্ন স্কিন টাইপের জন্য পারফেক্ট কিছু ক্লিনজারের নাম ও সাথে সাথে জানিয়ে দেব। আর চেষ্টা করব সঠিকভাবে স্কিন ক্লিন করার উপায় নিয়ে কথা বলতে।
ক্লিনজিং-এর সঠিক পদ্ধতিঃ
মুখের ত্বক ডেইলি পরিস্কার করাটা যে কতটা জরুরী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু এই ক্লিনজিং এটার জন্য কী কসমেটিক ব্যবহার করা হচ্ছে তার চেয়েও বেশি নির্ভর করে আসলে ক্লিন্সিং কীভাবে করা হচ্ছে তার উপরে। জেনে নিন, ক্লিন্সিং আসলে কীভাবে করতে হয় এবং আপনি যা করছেন ঠিক করছেন কিনা??
প্রতিদিন ৩ বার স্কিন পরিস্কার করার চেষ্টা করুন। -সকালে, দুপুরে এবং রাতে।
কিন্তু, আপনার স্কিন যদি ড্রাই হয় তবে সকালে এবং রাতে ক্লিন করুন।
ধাপ-১
-প্রথমেই মুখের ত্বকের উপরে হামলে পড়বেন না! আগে সময় নিয়ে আপনার দুই হাত ধুয়ে নিন,
জী, আপনার হাত!! আপনি ময়লা হাত দিয়ে যত দামি ফেসওয়াশ আপনার ত্বকে ঘষুন না কেন আসলে মুখে গিয়ে লাগছে হাতে জমে থাকা রাজ্যের নোংরা, ময়লা!! সুতরাং, হাত পরিস্কার করার আগে মুখ ভুলেও ছোঁবেন না!! আমি সাধারন অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল হ্যান্ড ওয়াশ ইউজ করি হাত পরিষ্কারের জন্য।
ধাপ-২
– এবারে আপনার হাতে অল্প পরিমানে ফেসওয়াশ নিয়ে নিন। খুবই অল্প। নরমালি যেমন অনেকখানি করে হাতে ঢেলেই মুখে লাগিয়ে গায়ের জোরে ঘষা শুরু করেন তেমনটা ভুলেও করবেন না।
– এবার অল্প পানির সাথে দুই হাতের তালুতে ফেসওয়াশ ঘষে ফেনা তৈরি করুন। যেকোনো ফোমিং ফেসওয়াশেই নিচের ছবির মত ফেনা তৈরি হবে।
***** মনে রাখবেন মুখে ফেসওয়াশ লাগিয়ে চামড়ার উপরে ঘষে ফেনা বানানোর চেষ্টা করবেন না!! এতে স্কিনে অতিরিক্ত টান পড়ে চামড়া ঝুলে গিয়ে ফাইন লাইনস আর রিঙ্কেল পড়ার চান্স বেড়ে যায়!! অনেকেরই এই বদ অভ্যাস আছে জানি, কিন্তু আজ থেকে একদম বাদ দিন ফেস ওয়াশ মুখে মেখে অজথা ঘষাঘষি……
ধাপ-৩
– এবার হাতের ফেনা মুখে নিচের ছবির মত করে লাগিয়ে নিন।
– এবার ছবির মত করে আপনার দুই হাতের ৩য়, ৪র্থ এবং ৫ম আঙ্গুল দিয়ে আস্তে আস্তে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পুরো মুখে ফেনা ম্যাসাজ করুন।
**** কোনভাবেই একহাতে কাজটি করার চেষ্টা করবেন না, ২য় আঙ্গুল অথবা মধ্যমা ব্যবহার করবেন না কারণ এই আঙ্গুলটি অনেক শক্তিশালী!! স্কিনে অযথা টান দিয়ে ড্যামেজ করায় এর জুড়ি নেই! তাই মধ্যমা বাদ দিয়ে পড়ের তিনটি দুর্বল আঙ্গুল ব্যবহার করবেন।
**** এবং আবার মনে করিয়ে দিচ্ছি! ভুলেও উপরে নিচে পাগলের মত ঘষাঘষি করবেন না!!! বেশি জোরে টান দিলেই স্কিন পরিস্কার হবে না! এটা বিছানার চাদর না, মানুষের মুখের ত্বক, যা টিস্যু পেপারের মত পাতলা!! এটা মাথায় রেখে মুখের ত্বকে হাত দেবেন প্লিজ!!
ধাপ-৪
– ঠিক এক মিনিট ম্যাসাজ করার পর ত্বক পানির ঝাপটা দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নরমাল টেম্পারেচারের পানি ব্যবহার করবেন। উষ্ণ, গরম বা ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করে স্কিনের উপর এক্সট্রা প্রেসার দেবেন না।
ধাপ-৫
এবারের ধাপটি আপনি করবেন শুধু যদি আপনি বাইরে থেকে ঘরে আসেন, আপনার স্কিনে হাল্কা মেকাপ থাকে অথবা আপনার স্কিন অয়েলি হয় তবে-
– আর ধাপটি হচ্ছে!! উপরের নিয়ম অনুসারে পুরো ফেস ক্লিনজিং প্রক্রিয়াটি আবার করুন। এবারেও আগের মত অল্প ক্লিনজারে ফেনা তুলে ১ মিনিট ধরে মুখ পরিস্কার করুন।
– আবার ক্লিন করার কারণ হল, মেকাপ অথবা বাইরের ধুলাবালির কারণে স্কিনে থেকে যাওয়া অতিরিক্ত ময়লা। যা একবার ক্লিনজিং এ দূর নাও হতে পারে। আর ত্বকের গভীরে গিয়ে নানা সমস্যা তৈরি করতে পারে।
– তৈলাক্ত এবং ব্রণ আছে এমন ত্বকের অধিকারীরা এভাবে দুবার হাল্কাভাবে ত্বক পরিস্কার করায় অনেক উপকার পাবেন।
**** মনে রাখবেন দু’বার ক্লিন করার ক্ষেত্রে কোন বারেই যেন ত্বকের সারফেসে ক্লিনজার ১ মিনিটের বেশি না থাকে। এতে স্কিন অতিরিক্ত ড্রাই হয়ে ইরিটেশন তৈরি হতে পারে।
এবার আবারো পানির ঝাপটা দিয়ে স্কিন পরিস্কার করে ক্লিনজিং প্রক্রিয়া শেষ করুন। এক্ষেত্রে বলে রাখি অনেকের অভ্যাস আছে বাসায় ঝুলে থাকা একটা তাওয়াল অথবা অন্য কোন কাপড়ে ঘষে স্কিন শুকিয়ে ফেলা!!
কিন্তু আজকে থেকে এটাও বাদ দিন। ত্বক পরিস্কারের এই পুরো পদ্ধতিতে নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন আপনাদের বার বার ত্বকের উপর এক্সট্রা প্রেসার দিতে মানা করছি!! সুতরাং ত্বকে জীবাণু যুক্ত তাওয়াল/গামছা দিয়ে ভুলেও ঘষাঘষি করবেন না। ত্বকে পানি থাকতে দিন এবং ন্যাচারালি শুকাতে দিন। দেখবেন ত্বকের ইরিটেশন/ হোয়াইট হেড/ব্রণ সংক্রান্ত ঝামেলা অনেকটা কমে যাবে!!!
কিছু ফেসওয়াশ-
লেখার শুরুতে বলেছিলাম বিভিন্ন স্কিন টাইপের জন্য পারফেক্ট কিছু ফেসওয়াশের নাম বলব।
আপনি নিজের স্কিন টাইপ কি সেটাই না জানলে ‘আপনি কি টিন-এজার? নিজের যত্ন নিজেই নিতে শিখুন (পর্ব-১)’ লেখাটি পড়ুন তবে কিছুটা হলেও বুঝতে পারবেন-
ড্রাই স্কিনটাইপ-
১। পণ্ডস হোয়াইট বিউটি ফোমিং ফেসওয়াশ
২। দি বডি শপ ভিটামিন ই জেন্টল ফেসিয়াল ওয়াশ
৩। ডাভ বিউটি ময়েশ্চার ফেসওয়াশ
৪। ক্লিন অ্যান্ড ক্লিয়ার মর্নিং এনার্জি ফেসওয়াশ
নরমাল স্কিনটাইপ-
১। ক্লিন অ্যান্ড ক্লিয়ার মর্নিং এনার্জি ফেসওয়াশ
২।নিউট্রজিনা ডিপ ক্লিন ফেসিয়াল ওয়াশ
৩।দি বডি শপ এলো জেন্টল ফেসিয়াল ওয়াশ
৪। পণ্ডস হোয়াইট বিউটি ফোমিং ফেসওয়াশ
অয়েলি এবং একনে প্রন স্কিনটাইপ-
১। নিউট্রোজিনা অয়েল ফ্রি একনে ওয়াশ
২। নিউট্রোজিনা অয়েল ফ্রি একনে ওয়াশঃ পিঙ্ক গ্রেপফ্রুট
৩। ক্লিন অ্যান্ড ক্লিয়ার ফোমিং ফেসওয়াশ
৪। পণ্ডস পিওর হোয়াইট ডিপ ক্লিন্সিং ফেসিয়াল ফোম উইথ চারকোল
৫। দি বডি শপ টি ট্রি স্কিন ক্লিয়ারিং ফেসিয়াল ওয়াশ
তো আজকে অল্প কথায় স্কিন পরিস্কার করার সঠিক উপায় নিয়ে কথা বললাম। আসলে ক্লিনজিং-এর পেছনে পুরো একটা আর্টিকেল বরাদ্দ রাখার কারণ সারা জীবনে কাজে লাগবে এমন একটি গুড হ্যাবিট শিখিয়ে দেয়া। তাহলে এবার নিজের স্কিন টাইপ মিলিয়ে রাইট ক্লিনজিং হ্যাবিট তৈরি করে নিন। এরপরে স্কিন টোনিং আর ময়েশ্চারাইজিং নিয়ে কথা বলব।
লিখেছেন – তাবাসসুম মুস্তারি মীম
মডেল – সাবিনা রিমা
ছবি – মীর সাজেদ আলী