ফ্যাশনে টাই-ডাই পুরনো হলেও, নিত্য নতুন রূপ নিয়ে হাজির হয়েছে বারবার। সুতি, খাদিসহ নানা ধরনের কাপড়েই হচ্ছে এই নকশা। অল্প খরচে নিজের পছন্দ মতো ডিজাইন দিয়ে তৈরি করতে পারেন নিজের জামা অথবা শাড়ি ।
[picture]
যেভাবে হয় টাইডাইয়ের কাজ
টাই শব্দের অর্থ বাঁধা আর ডাই অর্থ রং। কাপড় বিভিন্নভাবে বেঁধে রং করার কৌশলই হলো টাই অ্যান্ড ডাই। কাপড় শক্ত করে বেঁধে রং করার কারণে বেঁধে রাখা জায়গায় রং প্রবেশ করতে পারে না। ফলে বাঁধন খোলার পর এক ধরনের নতুন নকশা তৈরি হয়। ‘কাপড়ের যে অংশে নকশা করতে হয় শুধু সে জায়গা সুতা দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়। এরপর কাপড়টিকে রঙে ডুবিয়ে রাখা হয়। যে জায়গায় সুতা থাকে সেগুলোতে রং লাগে না।
এ ছাড়া অন্য জায়গাগুলোতে রঙের সুন্দর একটি সমন্বয় তৈরি হয়। এটিই টাই অ্যান্ড ডাই। এ কাজে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম-দুই রকম রংই ব্যবহার করা হয়। ‘আগে শুধু সাদা কাপড়ের ওপর টাইডাই নকশা করা হতো। এখন রঙিন কাপড়েও করা হয়। তুঁতে, গাঁদাফুল, খয়ের, হরীতকী, শিউলী ফুল, নীল, পেঁয়াজের খোসা ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদান থেকে বিশেষ উপায়ে রং তৈরি করে তা দিয়ে টাই- ডাই কাজ করা হয়। আবার কৃত্রিম রং দিয়েও করা হয়। সুতির পাশাপাশি সিল্ক, গরদ, তসর, মসলিন, এন্ডি কটনেও টাই-ডাই করা যায়।
ফ্যাশনে টাই- ডাই পোশাক
টাই-ডাই করা শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, ওড়না, স্কার্ট, ফতুয়া, স্কার্ফ শার্ট, পাঞ্জাবি নকশায় একটা থেকে অন্যটা আলাদা। ফলে আরামদায়ক ও ফ্যাশনেবল পোশাক হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে গরমে সুতির টাই-ডাইয়ের পোশাক পরে বেশ আরাম পাওয়া যায়।
টাই-ডাই করা সুতি শাড়ি এ সময়ে পরতে পারেন। এ ছাড়া এন্ড্রি, সিল্ক, তসরের টাই-ডাই করা শাড়ি পরতে পারেন উৎসব-অনুষ্ঠানেও।সালোয়ার-কামিজ ওড়নাতেও টাই-ডাই ভাল মানায়।জিন্স, লেগিংস বা জেগিংসের সঙ্গে অনায়াসে পরতে পারেন টাই-ডাই করা ফতুয়া বা টপস। সঙ্গে থাকতে পারে টাই- ডাইয়ের স্কার্ফ বা ওড়না। একরঙা টপসের সঙ্গে ডাই করা স্কার্ট ও পরতে পারেন। যেভাবে করবেন টাই-ডাই :
(১) আগে কাপড় ধুয়ে নিন
অবাঞ্ছিত দাগ, তেল ও মাড়মুক্ত করার জন্য কাপড় পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর একটি গামলায় প্রতি সাড়ে তিন লিটার গরম পানিতে এক কাপের তিন-চতুর্থাংশ ডাই ফিচার (যেমন সোডিয়াম কার্বনেট) মিশিয়ে কাপড় পাঁচ থেকে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর শুকিয়ে নিতে হবে।
(২) বন্ধন কৌশল
নির্ধারিত নকশা অনুযায়ী ভাঁজ করে, সেলাই করে বা পেঁচিয়ে মোটা সুতা দিয়ে শক্ত করে বেঁধে কয়েকবার সুতা পেঁচাতে হবে, যাতে কোনোভাবেই বাঁধা অংশ দিয়ে কাপড়ের ভেতরে রং প্রবেশ করতে না পারে। কাপড় বাঁধার ক্ষেত্রে সাধারণত বিভিন্ন আকারের বৃত্ত, চারকোনা, বরফি, সোজা লাইন, আঁকাবাঁকা লাইন, কার্ভ লাইন ইত্যাদি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
(৩) যেভাবে রং প্রস্তুত করবেন
প্রথমে আধা গ্যালন গরম পানিতে এক কাপ ইউরিয়া, চার চা চামচ লুডিগল, এক চা চামচ ওয়াটার সফটনার ভালোভাবে মিশিয়ে পানি তৈরি করতে হবে। যাকে কেমিক্যাল পানি বলে। এই কেমিক্যাল পানির সঙ্গে এবার রং মেশাতে হবে। যদি কেমিক্যাল পানি তৈরি করা সম্ভব না হয়, তাহলে শুধু গরম পানিতে রং মেশাতে হবে। গাঢ় ও উজ্জ্বল রঙের বানাতে চাইলে প্রতি কাপ পানির সঙ্গে দুই থেকে চার চা চামচ রং আর হালকা রঙের জন্য আধা চা চামচ থেকে দুই চা চামচ পর্যন্ত রং মেশাতে হবে।
(৪) রং করার পদ্ধতি
কাপড় যাতে পুরো ডুবে থাকে সেই পরিমাণ পানি নেবেন। এবার কাপড়টি পাঁচ থেকে ১০ মিনিট ফুটাতে হবে। একটি রং করা শেষ হলে একইভাবে অন্য রঙের মধ্যে ডুবিয়ে রাখতে হবে। সাধারণত ছোট কাপড় ও একই জায়গায় কয়েকটি রং ব্যবহারের জন্য বোতল বা ব্রাশ ব্যবহার করা হয়। কাপড়ের পরিমাণ বেশি হলে ডুবিয়ে রং করা ভালো। এতে রং অনেক বেশি পাকা হয়। তবে দুই বা ততোধিক রঙে টাই -ডাই করার ক্ষেত্রে প্রথমে হালকা রং করে ধীরে ধীরে গাঢ় রং ব্যবহার করা ভালো। যেমন প্রথমে সাদা তারপর হলুদ, এভাবে একে একে কমলা, লাল, মেরুন বা কালো রং করা যেতে পারে।
(৫) রং করার পরে কাপড় ধোয়া
কাপড় রং করা হয়ে গেলে ২৪ ঘণ্টা, সম্ভব হলে আরো বেশি সময় পরে বাঁধন খুলতে হবে। পরে ভালো করে ধুয়ে বাতাসে শুকিয়ে আয়রন করে নিতে হবে।
যত্নআত্তি নিবেন যেভাবে
- টাইডাই করা কাপড় অন্য কাপড়ের সঙ্গে ধোয়া যাবে না।
- কাপড় ধোয়ার আগে কাপড়ের এক কোনা পরীক্ষা করে নিন রং ওঠে কি না। যদি ওঠে, তবে পানিতে ডিটারজেন্ট দিয়ে সামান্য লবণ মিশিয়ে কাপড় পরিষ্কার করুন।
- টাইডাইয়ের চাদর বা কুশন ধোয়ার আগে এর গায়ের লেবেলটি ভালোভাবে পড়ে নিন।
- কাপড় ধোয়ার পরে ডাই রঙিন কাপড় ভিনেগার মেশানো পানিতে চুবিয়ে হালকা চিপে রোদে দিন। উজ্জ্বলতা ঠিক থাকবে।
লিখেছেন – পাপিয়া সুলতানা
ছবি – ডিআইঅয়াইএনক্র্যাফট.কম