“ছেলেদের আবার স্কিন কেয়ার! আর কিছু? ছেলেদের এত কিছু লাগেনা বাবাহ! স্কিন কেয়ার শুধু মেয়েদের জন্য পর্যন্তই ঠিক আছে” এমন চিন্তা ভাবনা কিন্তু দেখা যায় কম বেশি আমাদের সবার মাঝেই। কিন্তু এ ধরণের চিন্তা ভাবনা আসলেও কতটা যোক্তিক, তা কি কখনও ভেবে দেখেছি আমরা? এমন কি কখনও দেখেছেন, কোন ছেলের সাথে বের হওয়ার পর, মেয়ের স্কিনে ধুলাবালি, সূর্যের আলো পরে বাজে অবস্থা কিন্তু ছেলেটার স্কিন কোন এক দৈব শক্তির কারণে যেমন ছিল তেমনই রয়েছে? অথবা বয়স বাড়ার সাথে সাথে মেয়েদেরই শুধু স্কিনে বয়সের ছাপ অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়, কিন্তু ছেলেদের ত্বকে কোন বার্ধক্যের ছাপ পরে না? একদমই না। তাই না?
তাহলে কেন আমরা ভাবি যে স্কিন কেয়ার শুধু মেয়েদের বেলাই ঠিক আছে, ছেলেদের এর একদমই প্রয়োজন নেই! স্কিন কেয়ার হোক বা হেয়ার কেয়ারই হোক! এটির প্রয়োজন ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে আমাদের সবার। এই সিম্পল ব্যপারটির সমাজে গ্রহণযোগ্যতার অভাব থাকায়, অনেক ছেলেরা কোন সমস্যা হলেও লজ্জায় এর সমাধান নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতে পারে না। তাই আজকে আমরা জেনে নিব, ছেলেদের খুব কমন কিছু সমস্যা এবং তার সমাধান নিয়ে।
ছেলেদের কাছ থেকে যে প্রশ্নগুলো আমরা প্রায়ই পেয়ে থাকি
প্রতিদিন আমাদের কাছে স্কিনের সমস্যা এবং তার সমাধান চেয়ে নানা রকম প্রশ্ন আসে। মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেরাও আমাদের কাছে নানান প্রশ্ন এবং তার সমাধান কী হবে জানতে চায় প্রতিনিয়ত। তার মধ্যে খুব কমন যে সমস্যাগুলো ছেলেরা ফেস করে থাকে, সেগুলো হল-
- ব্ল্যাকহেডস এবং হোয়াইটহেডস এর সমস্যা প্রচুর। কীভাবে দূর হবে?
- স্কিন তেল চিটচিটে এবং অয়েলি হয়ে থাকে, ফ্রেশ স্কিন পাব কীভাবে?
- রেগুলার সেভ করার ফলে স্কিন রাফ হয়ে আছে। কী করলে স্কিন আবার সফট হবে?
- স্কিনটা খুব মলিন আর ফ্যাকাসে হয়ে আছে। কী করলে দেখতে প্রাণবন্ত লাগবে?
- প্রায়ই মুখে ব্রণ উঠে এবং ব্রণের দাগ থেকে যায়। কী করলে ব্রণ এবং ব্রণের জন্যে থেকে যাওয়া দাগ কমে যাবে?
আজকে আমরা জেনে নিব, ছেলেদের এই কমন সমস্যাগুলোর সহজ কিছু সমধান নিয়ে।
(১) ব্ল্যাকহেডস এবং হোয়াইটহেডস এর সমস্যা দূর করবেন কীভাবে?
প্রথমেই জেনে নেই, ব্ল্যাকহেডস এবং হোয়াইটহেডস কী এবং কেন হয়?
ব্ল্যাকহেডস বা হোয়াইটহেডস মুলত এক ধরণের ছোপ ছোপ ছোট গুঁটির মত দেখতে হয়ে থাকে। একে এক ধরনের ব্রণও বলা যায়। খেয়াল করলে দেখা যাবে, আমাদের স্কিনের পোরগুলো সবসময়ই ওপেন অবস্থায় থাকে। তাই ধুলোবালি, ময়লা এগুলো সহজেই এতে জমে যায়। এক পর্যায়ে এই গুঁটি গুঁটি বস্তুগুলো শক্ত হয়ে স্কিনের পোরগুলোকে বন্ধ করে দেয়। আবার এগুলোই পরবর্তীতে নানা জীবাণু এবং ময়লার সাথে এক হয়ে অক্সিডাইজ করে এবং কালচে রং ধারণ করে। একেই আমরা ব্ল্যাকহেডস বলে থাকি। আর মেয়েদের তুলনায়, ছেলেদের বাইরে বের হওয়ার প্রবণতা একটু বেশিই থাকে। তাই কম বেশি, সব ছেলেদের মধ্যেই ব্ল্যাকহেডস এবং হোয়াইটহেডস এর সমস্যা দেখা যায়। এবার চলুন সমাধান কী জেনে নেই।
- যেহেতু ব্ল্যাকহেডস এবং হোয়াইটহেডস এর সমস্যা হয় মুলত, বাইরের ধুলোবালি, ময়লা স্কিনে জমে জমে। তাই যথাসম্ভব চেষ্টা করতে হবে স্কিনের পোরগুলোকে পরিষ্কার রাখার।
- ছেলেরা খুব বেশি স্কিন কেয়ার রুটিন মেইনটেইন করতে চায় না, কিন্তু প্রতিদিন অন্তত ২ বার ফেইসওয়াশ দিয়ে মুখটা ভালভাবে পরিষ্কার করে নেয়া কিন্তু মাস্ট। এটি কোনভাবেই স্কিপ করা যাবে না।
- তবে, ফেইসওয়াশ আমাদের মুখের ভিতরের ডাস্ট বা ইমপিউরিটিস পুরোপুরি ভাবে ক্লিন করতে পারে না। এজন্যে স্কিন কেয়ার রুটিনে ফেইসওয়াশ এর পাশাপাশি একটি স্ক্রাব রাখতে হবে। এক্সফলিয়েটর বা স্ক্রাব এর প্রথম কাজই হলো, আমাদের স্কিনে যে পুরানো মৃত কোষ রয়েছে তা পরিষ্কার করে ফেলা। এতে আমাদের স্কিনের ব্ল্যাকহেডস এবং হোয়াইটহেডস এর সমস্যা দূর হয় সহজেই। তবে, এক্সফলিয়েটর বা স্ক্রাব সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বারের বেশি ব্যবহার না করাই ভালো।
- ব্ল্যাকহেডস এবং হোয়াইটহেডস এর সমস্যা দূর করার আরেকটি চমৎকার সল্যুশন হতে পারে নোস পোর স্ট্রিপস। এর আলাদা কোন ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয় না। ইন্সট্যান্টলি আমাদের নাকে জমে থাকা ব্ল্যাক হেডস পরিষ্কার করে ফেইসে ক্লিন একটি লুক এনে দেয়।
(২) স্কিনের তেল চিটচিটে এবং অয়েলি ভাব দূর করে ফ্রেশ স্কিন পাব কীভাবে?
ছেলে হোক বা মেয়ে, আমাদের মধ্যে মূলত ড্রাই স্কিন, অয়েলি স্কিন, কম্বিনেশন স্কিন এবং সেনসিটিভ স্কিন টাইপ দেখা যায়। তবে, আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষরই অয়েলি স্কিন। আর এই অয়েলি স্কিনের সমস্যারও শেষ নেই। ঘুম থেকে উঠে বা সারাদিন শেষে বাসায় ফিরে ফেইসের দিকে তাকানো যায় না! হাত দিয়ে ধরলেই মনে হয় তেল উঠে উঠে আসছে। তাই না? তাহলে, এমন হলে কী করা উচিৎ চলুন জেনে নেয়া যাক।
- অয়েলি স্কিনের জন্যে স্যুইটেবল এমন একটি ফেইসওয়াশ ব্যবহার করা মাস্ট। দিনে অন্তত দুইবার ফেইসওয়াশ ব্যবহার করে মুখটা ক্লিন করে নিতে হবে।
- শুনতে একটু ঝামেলার মনে হলেও, স্কিনটাইপ যাদের অয়েলি তাদের জন্যে সাপ্তাহিক স্কিন কেয়ার রুটিনে ক্লে বেসড কোন মাস্ক না রাখলেই না। মার্কেটে এখন নানা ব্র্যান্ডের ভালো মানের ক্লে মাস্ক পাওয়া যায়। এই মাস্কগুলো আমাদের স্কিনের সেবাম প্রোডাকশন কন্ট্রোল করে এবং স্কিনে একটা ফ্রেশ লুক দেয়।
- এছাড়াও ফেইস প্যাক হতে পারে দারুণ একটি সমাধান। পাশাপাশি নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে, বিশেষ করে গরমকালে।
(৩) রেগুলার সেভ করার ফলে স্কিন রাফ যাচ্ছে! কী করলে স্কিন আবার সফট হবে?
ছেলেদের মধ্যে অনেকেই রেগুলার সেভ করে অভ্যস্ত, আবার অনেকেই ট্রিমিং করতে প্রেফার করে। ট্রিমিং করলে যদিও স্কিনের তেমন কোন ক্ষতি হয় না! তবে, রেজর ব্যবহার করে সেভ করার ফলে অনেক ছেলেদের স্কিনই অনেক রাফ হয়ে যায়। তার মানে কিন্তু এই না যে আর কোন ভাবেই সফট স্কিন পাওয়া যাবে না। সেভ করার পর কিছু নিয়ম কানুন মানলেই কিন্তু এ সমস্যার সমাধান মিলবে। চলুন জেনে নেই কীভাবে?
- সেভ করার পর অবশ্যই আফটার সেভ লোশন, বাম বা জেল ব্যবহার করুন।
- শুধু কি আফটার সেভ লোশন ব্যবহার করাই যথেষ্ট? না কিন্তু। আফটার সেভ লোশন শুধুমাত্র যেই এরিয়াতে সেভ করা হচ্ছে ওতটুকু জায়গাতেই অ্যাপ্লাই করা হয়। তাই আফটার সেভ লোশন এর সাথে সাথে বাকি পুরা ফেইসটাতেও একটা ভাল দেখে ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করে নিন। এতে স্কিনে একটা সুদিং ফিল হবে এবং স্কিনও ভালো থাকবে।
- অনেকদিন ব্যবহার করে ফেলেছেন এমন রেজর বারবার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। এটি অনেক ছেলেদেরই একটা বদঅভ্যাস। কিন্তু এর ফলে স্কিনের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
- রেজর ব্যবহার করার পর চেষ্টা করুন রেজরটিকে শুকিয়ে পরিষ্কার করে রাখতে। এতে মরিচা বা জং ধরার প্রবণতা থাকবে না। রেজরে মরিচা বা জং ধরা থাকলে, এ থেকে স্কিনে ইচিং বা গুটি গুটি ব্রণ উঠার চান্স অনেক বেশি থাকে।
(৪) মলিন আর ফ্যাকাসে স্কিন দেখতে প্রাণবন্ত লাগবে কীভাবে?
ছেলে হোক বা মেয়ে! প্রাণবন্ত, তারুন্যময় এবং দীপ্ত ত্বক কে না চায় বলুন তো? বয়স যত বাড়তে থাকে দিন দিন, তত বেশি ফেইস তার তারুণ্য হারাতে থাকে। চলুন তাহলে জেনে নেই স্কিনকে প্রাণবন্ত দেখানোর সিম্পল কিছু উপায়।
- প্রথমেই, বদলাতে হবে আমাদের লাইফ স্টাইল। রাতে সময়মত ঘুমাতে যাওয়া থেকে শুরু করে ঠিক সময়মত ঘুম থেকে উঠা, খাওয়া দাওয়ার রুটিন ঠিক রাখা এবং এক্সারসাইজ এসব কিছুতেই আরও বেশি সচেতন হতে হবে।
- বেশি করে পানি খাওয়ার পাশাপাশি, ফলমূল, শাক-সবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- সূর্যের আলোতে অতিরিক্ত ঘোরাঘুরি কমিয়ে আনুন।
- দিনের বেলা বাইরে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে কোন ভাবেই ভুলবেন না।
- ঘুমাতে যাওয়ার আগে মুখটা ভালোভাবে ক্লিন করুন। এবং রাতের বেলা স্লিপিং মাস্ক ব্যবহার করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
(৫) ব্রণ কমাতে এবং ব্রণের দাগ দূর করতে কী ব্যবহার করবো?
ছেলেদের নানা প্রশ্নের মধ্যে খুব কমন হল, মুখে ব্রণের উপদ্রব এবং নানা রকম দাগ নিয়ে। ছেলে মেয়ে সবার জন্যেই এটি কমন একটি সমস্যা। পাশাপাশি যাদের স্কিন অয়েলি, তাদের এ ধরণের সমস্যা আরও বেশি দেখা দেয়। চলুন জেনে নেই এমন হলে কী করবেন।
- স্কিনকে সব সময় ক্লিন রাখার চেষ্টা করুন। কোনভাবেই স্কিনে ময়লা জমে থাকতে দেয়া যাবে না।
- স্যালিসাইলিক অ্যাসিড যুক্ত ফেইসওয়াশ ব্যবহার করুন। স্যালিসাইলিক অ্যাসিড হলো এক প্রকার বিএইচএ (BHA) বা বিটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড। অনেকেই জানেন, এই উপাদানটি ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে।
- রাতের বেলা ঘুমাতে যাওয়ার আগে ফেইসওয়াশ ব্যবহার করা মাস্ট। সেই সাথে স্কিন টাইপ অনুযায়ী একটি ভালোমানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
- অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন। অ্যালোভেরাতে থাকা অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল প্রোপারটিজ ব্রণের প্রকোপ কমাতে অনেকটাই সাহায্য করে।
- অয়েল কন্ট্রোল করবে এমন ফেইস মাস্ক বা ফেইস প্যাক ব্যবহার করুন।
- বেশি করে পানি খাওয়ার পাশাপাশি অয়েলি খাবার এড়িয়ে চলুন।
- ব্রণের দাগ হলে একদমই খোঁটাখুঁটি করা বা হাত লাগানো যাবে না।
- একনে স্পট রিমুভিং জেল বা ক্রিম ব্যবহার করলে দ্রুত ভাল রেজাল্ট পাবেন।
“বয়স হলেতো ফেইস একটু এমন হবেই”, “ছেলেদের স্কিন এমনই, এটাই স্বাভাবিক” এগুলা ভাবা একদমই ঠিক নয়। ব্যপারটাকে অন্যভাবে ভাবলে কেমন হয় বলুন তো? “বয়স বাড়ার সাথে সাথে এমনিতেই দেখা দিবে নানান সমস্যা, তাই এখন থেকেই সচেতন হওয়া ভালো!” এমনটা ভাবা কি খুব কঠিন কাজ? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বকের কারণ হচ্ছে জেনেটিকাল ও হরমোনাল ইমব্যালেন্স। এছাড়া আবহাওয়াগত কারণ ও ডায়েটের উপরও এটি নির্ভর করে। শরীরে যদি তেল উৎপাদনকারি হরমোন বেশি একটিভ থাকে, সেক্ষেত্রে স্কিনে অতিরিক্ত সেবাম উৎপন্ন হয়। ছেলে মেয়ে বলে কোন কথা নেই!!
স্কিনের সমস্যা আমাদের সবারই দেখা দেয় এবং আমরা সবাই চাই আমাদের স্কিন থাকুক সুন্দর এবং ফ্রেশ সারাদিন। আশা করছি, আজকের লিখাটি পরে যারা এতদিন বুঝে উঠতে পারছিলেন না কোন সমস্যার জন্যে কী করবেন তারা কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন। স্কিন ও হেয়ার এর পাশাপাশি নিজের পার্সোনাল কেয়ারের জন্য অথেক্টিক প্রোডাক্ট চাইলে আপনারা সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ ভিজিট করতে পারেন। যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত। আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম তো আছেই।
ছবি- সাজগোজ