ডিপ্রেশনের বাংলা নাকি নিম্নচাপ ?
বৃষ্টি এল। সঙ্গে কফি এক-দু’ কাপ
নামছে বিকেল, অল্প ভিজে রাস্তাঘাট
ছাতার নীচে মিইয়ে গেল পাপড়ি চাট
বন্ধুরা সব ফিরছে বাড়ি দূর থেকে…
কেন যে আজ হিংসে হল তাই দেখে,
দেখতে গিয়ে সন্ধ্যে হল জানলাতেই
আগের মত মেঘ করেছে … কান্না নেই
কেবল মুঠোয় বন্দি কফির একলা কাপ
ডিপ্রেশনের বাংলা জানি । মনখারাপ ।
সৃজিত…
মানুষের মন এমন এক আজব জিনিস যেটা হুটহাট তার নিজের ডিরেকশন চেঞ্জ করে ফেলে। খুব ছোট ছোট কারণেই অনেক সময় আমরা বিষণ্ণ হয়ে পড়ি, কিছুক্ষেত্রে তা হয়ে যায় বাড়াবাড়ি রকমের। আমরা প্রায়শই ভুগি বিষণ্ণতায়। নিজেদের কাছে নিজেরাই ছোট হয়ে থাকি, নিজেদের নিয়ে হতাশায় ভুগি। যার প্রভাব পড়ে আমাদের নিজেদের জীবনে। কিন্তু কীভাবে বের হবো আমরা এই বিষণ্ণতা থেকে? আসুন জেনে নিই কিছু মজার কাজের কথা যা দিয়ে আমরা দূর করতে পারি আমাদের এই বিশাল সমস্যাটিকে।
(১) এক্সপ্লোর করুন নতুন কোনো ফুড
খাবার তো আমরা রোজই খাই, এ আবার নতুন কি? এতে কীভাবে বিষণ্ণতা যায়? এগুলোই ভাবছেন তো? একবার ট্রাই করে দেখুনই না, মন খারাপের সময়টাতে নিজে ভিন্ন কিছু রান্না করুন অথবা চলে যান অপরিচিত কোনো খাবারের দোকানে, তাদের স্পেশাল ডিশ বা আপনার জন্য নতুন এমন কোনো একটি আইটেম ট্রাই করে দেখুন। দেখবেন ভালো খাবার আপনাকে অনেকখানি প্রশান্তি দিচ্ছে! খাবার আসলেই মন ভালো করে দেয়, যদি আপনি খাদ্যরসিক হয়ে থাকেন!
(২) সেলফ প্যাম্পার করুন
মন খারাপ! ভালো কোনো স্যালন এ যেয়ে নিজের রেগুলার লুকটাকে কিছুটা চেঞ্জ করুন, হতে পারে সেটি হেয়ার কাট, হেয়ার কালার অথবা সেগুলো না চাইলে একটি ভালো ফেসিয়াল বা স্পা! অথবা চাইলে পরিবর্তন করতে পারেন সাজ-পোশাকও, উজ্জ্বল রঙকে প্রাধান্য দিন এক্ষেত্রে। ঘরে ফুলদানিতে তাজা ফুল রাখতে পারেন। নিজেকে স্পেশাল ফিল করান, দেখবেন মন ভালো হয়ে যাবে।
(৩) এড্রেনালিন রাশ
নিজেকে কোনো রোমাঞ্চকর পরিবেশে নিয়ে যান। বাজেট ট্যুর দিয়ে আসুন সম্ভব হলে, দেখবেন যখন আপনি নতুন পরিবেশ ও অভিজ্ঞতা নিয়ে উত্তেজিত থাকবেন, মন খারাপ দৌড়ে পালাবে! পাহাড় ভালোবাসেন? ট্রেকিং করার সুযোগ থাকলে করে আসুন। আমাদের দেশেই অনেক জায়গা আছে, নিজেদের এতো সুন্দর দেশটাও ঘুরে আসুন না হয় এই ছুতোয়। খুব বেশি খরচও হবে না!
একেবারেই সুযোগ বা সময় নেই দূরে কোথাও যাবার? কোন এমিউজমেন্ট পার্কেই না হয় কাটিয়ে আসুন সময়। রোলার কোস্টার রাইড বা ওয়াটার পার্ক অ্যাক্টিভিটি সব মন খারাপ ভুলিয়ে দিবে। (তবে যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে বা রয়েছে শ্বাসকষ্টের সমস্যা তাদের উচিত হবে না এই রাইড গুলোয় ওঠা)। শুধু যে বাইরে ঘুরতে যেতে হবে এমনটা না! আপনার যদি চা পছন্দ হয়ে থাকে, তাহলে নিজের হাতে এক কাপ চা বানিয়ে বিকালে ছাদে চলে যান, নিরিবিলি পরিবেশে সূর্যাস্ত দেখুন। ঘরে থাকতে চাইলে সফট মিউজিক প্লে করে চোখ বন্ধ করে ব্রিথিং এক্সারসাইজ করে নিন। ডিপ্রেশন পালিয়ে যাবে হুট করেই।
(৪) ক্রাফটিং
প্রিয়জনের জন্য কার্ড, ঘর সাজানোর জিনিস এগুলো বানাতে পারেন, অরিগ্যামি করুন। দেখবেন ভেতরের কষ্ট অনেক কম লাগবে। কাছের মানুষকে নিজেই কিছু বানিয়ে দিন। যাকে দিবেন তিনিও খুশি হবেন, আপনার বিষন্নতাও দূরে পালাবে! এখন কম খরচে ক্লে ডো কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলো দিয়েও ক্রিয়েটিভ কিছু বানিয়ে সময় পার করতে পারেন। ক্রাফটিং এর অনেক টিউটোরিয়াল এখন ইউটিউবে পাবেন, সেগুলো দেখেই রিক্রিয়েট করতে পারেন খুব সহজে।
(৫) ছবি তুলুন বা আঁকুন
ছবি তুলুন বা আঁকুন , এমন না যে আপনাকে খুব সুন্দর পারতেই হবে, কিন্তু সুন্দর করার চেষ্টা করতে থাকুন, ডিপ্রেশন কমবে । রঙ করুন , ছোটদের মত হাতে রঙ লাগিয়েই দেখুন, কি অদ্ভুত আনন্দ কাজ করে! আর যাদের ফটোগ্রাফিতে আগ্রহ আছে, তারা আশেপাশে বেড়িয়ে পরুন, স্ট্রিটফুড এক্সপ্লোর করে ফ্রেমবন্দি করতে পারেন, পার্কে ঘুরতে ঘুরতে প্রকৃতির কিছু ছবিও তুলতে পারেন। এই জিনিসগুলো কিন্তু মন ভালো রাখতে দারুণ কার্যকরী।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিষণ্ণতা এখন এই জেনারেশনের জন্য খুবই কমন, অনেক সময় প্রাণনাশীও হয়ে যায়। মনে রাখবেন,আপনার জীবনটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ভুল সিদ্ধান্ত পুরো পরিবারকে ওলটপালট করে দিতে পারে। ভালো থাকুন, অন্যকে ভালো রাখুন।
লিখেছেন – সায়েদা রেহাব রাফা