ত্বকের যত্ন বলতে আমরা শুধু বুঝি সুন্দর দাগহীন মসৃণ একটি মুখ আর যারা আরও একটু সচেতন তারা মাঝে মাঝে হাত পা বা গলারও একটু চর্চা করেন। কিন্তু পিঠের দিকে কি কেউ নজর দেই? মুখে ব্রণ হলে আমরা খুব দ্রুত চিন্তা করি কী করা যায় কিন্তু আমরা বডি কেয়ার নিয়ে মুখেরমতো ততটা ভাবি না অথচ আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এটি। আমাদের পিঠে অয়েল গ্ল্যান্ড থাকার কারণে বলিরেখার তেমন সমস্যা হয় না। এই গরমে ওঠানো গলার পোশাক পরা সম্ভব হয় না। তাই কামিজ বা শাড়ি যাই পড়ুন না কেন পিঠের খানিকটা অংশ খোলা থেকেই যায়। সারাদিনের ঘোরাঘুরিতে রোদের অত্যাচারে শরীরের খোলা অংশগুলো হয়ে পড়ে বিবর্ণ। কিন্তু আমরা প্রতিদিনই নানা কাজে বাইরে বের হই এর ফলে রোদে পুড়ে ট্যানিং, পিগমেন্টেড প্যাঁচ (Pigmented Patch) ও ব্রণও দেখা যায়। এসব কারণে পিঠের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
পিঠের ত্বক রোদে পুড়ে কালো ছাপ পড়ে গেছে, সেরে যাওয়া ব্রণের দাগগুলো রয়ে গেছে, পুরো পিঠ খসখসে, ত্বকের এমন অবস্থা যদি হয়, তবে কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় শাড়ির সঙ্গে একটু বড় গলার ব্লাউজ পরতে চাইলেও আমরা তা পারি না। এজন্য তৈরি হতে গিয়ে প্রথমেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। তবে মন খারাপ করার কোনো কারণ নেই নিয়মিত সামান্য যত্ন নিলেই আমরা পেতে পারি কাঙ্ক্ষিত কোমল দাগহীন উজ্জ্বল পিঠ।
পিঠের যত্ন নেওয়ার কিছু উপায়
গোসলের সময় লম্বা হাতলের ব্রাশ ব্যবহার
গোসলের সময় চেষ্টা করবেন লম্বা হাতলের ব্রাশ ব্যবহার করতে। কারণ লম্বা হাতলের ব্রাশ ভালো স্ক্রাবের কাজ করে। আর এর কারণে আপনার রোমকূপের মুখ থাকবে পরিষ্কার। রেহাই পেতে পারেন ব্রণের হাত থেকেও। যদি আপনার শরীরের লোমকূপ বন্ধ থাকে তাহলে সেখান থেকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস। গোসল করার পর আটা ও দুধের মিশ্রণ দিয়ে এক্সফলিয়েট (Exfoliate) করবেন তারপর ১ ভাগ গ্লিসারিন ও ৩ ভাগ গোলাপজল মিশিয়ে লাগাবেন।
বডি স্ক্রাব ব্যবহার
আমরা বেশির ভাগ সময়ই ফেসিয়াল স্ক্রাব করি, ফেসিয়াল স্ক্রাবের মতো আপনি বডি স্ক্রাবও শুরু করে দিন দেখবেন এর ফলে দারুণ উপকার পেয়েছেন। আপনি চালের গুঁড়োর সঙ্গে দই মিলিয়ে বডি স্ক্রাব তৈরি করতে পারেন। বড়ি স্ক্রাব বানানোর পর লম্বা হাতলের ব্রাশে মিশ্রণটা লাগিয়ে পিঠে ব্রাশ করুন দেখবেন আপনার ত্বক উজ্জ্বল ও পরিষ্কার হবে। পিঠের যত্নের ক্ষেত্রে আপনার বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতিটি সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় হচ্ছে আলাদা আলাদা ধরনের স্ক্রাব ব্যবহার করা।
১. মুলতানি মাটি ও টক দইয়ের স্ক্রাব
১টি ডিমের সাদা অংশ, ২ টেবিল চামচ দই, ২ চা চামচ মুলতানি মাটির সঙ্গে ১ চা চামচ মধু ও সামান্য বেকিং সোডা মিশিয়ে নিন। তারপর মিশ্রণটা ভালো করে ফেটিয়ে পিঠে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। তারপর ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন আপনার ত্বকের যে টান টান একটা ভাব আছে তা বজায় আছে।
২. দুধ ও গ্লিসারিন স্ক্রাব
ত্বককে মসৃণ রাখার জন্য বাটিতে লেবুর রস নিন এবং তার মধ্যে ১ গ্লাস দুধ, ১ চা চামচ গ্লিসারিন মিশিয়ে ভালো করে নেড়ে দুধ ফুটিয়ে নিবেন। মিশ্রণটা আধা ঘণ্টা রাখুন। এরপর বডি স্ক্রাব হিসেবে লাগান এবং আধা ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন।
৩. টক দই ও আমন্ড স্ক্রাব
৩ টেবিল চামচ আমন্ড গুঁড়ো, আধা কাপ দই একসঙ্গে মিশিয়ে মুখ ও পিঠের ত্বকে লাগান। শুকানোর পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বক পরিষ্কার থাকবে এবং ব্রণও কমে যাবে।
৪. টক দই ও বেসন স্ক্রাব
আপনার হাতে যদি সময়ের পরিমাণ কম থাকে তাহলে দইয়ের সঙ্গে বেসন এবং হলুদ মিশিয়ে ঘন পেস্ট বানিয়ে নিন এবং গোসল করার কমপক্ষে ২ ঘণ্টা আগে লাগিয়ে নিন।
৫. দারুচিনি গুঁড়ো এবং লেবুর রস মিশ্রিত স্ক্রাব
ব্রণের দাগ কমাতে দারচিনি গুঁড়ো এবং লেবুর রস মিশিয়ে মুখে লাগান। যদি ইচ্ছে করে তাহলে চন্দন ব্যবহার করতে পারেন।
মেকআপ ব্যবহার
পিঠে দাগ ও ব্রণের সমস্যার কারণে অনেক সময় লো ব্যাক ড্রেস পরতে হয়। সে ক্ষেত্রে আপনার খুঁত ঢাকার জন্য মেকআপ ব্যবহার করতে পারেন কিংবা ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে পারেন। আপনার খুঁত ঢাকতে হলে সব সময় চেষ্টা করবেন নিজের স্কিন টোনের থেকে ২ অথবা ৩ শেড হালকা রঙের কনসিলার বেছে নিতে। কনসিলার বেছে নেবার পর নরমাল ফাউন্ডেশন লাগাবেন। এরপর তার সাথে পাউডার দিয়ে সেট করে নিন।
ব্যাক ম্যাসাজ
ব্যাক ম্যাসাজ করার সময় আপনাকে প্রথমে যেটা খেয়াল রাখতে হবে তা হলো আপনার ম্যাসাজার যেনো দক্ষ হয়। অনেক সময় কোমরে ব্যথা থাকা অবস্থাই আপনারা মাসাজ করে থাকেন এটা ঠিক না। এক্ষেত্রে আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ব্যাক ম্যাসাজের জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের বিশেষ অয়েল বিক্রি হয়। তবে বেবি অয়েলও ব্যবহার করতে পারেন। অনেকেই কুশন ও বালিশের সাহায্যে ম্যাসাজ করে থাকেন। ইচ্ছে করলে আপনিও এ পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন।
পিঠের আলাদা যত্ন
১. অয়েল ম্যাসাজ
প্রতিদিনের গোসলের সময় পিঠের ত্বক ভালো করে পরিষ্কার করুন। গোসলের আগে পিঠে একটু অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করে নিন। রোজ করলে কালো দাগ পড়বে না। পিঠে একটু অলিভ বা মাস্টার্ড অয়েল ম্যাসাজ করুন।
২. চন্দন পেস্ট
ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করতে চন্দন বাটা ১ টেবিল চামচ, টমেটোর রস ১ চা চামচ, শশার রস ১ চা চামচ একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে পিঠে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট।
৩. কমলার শুকনো খোসার পেস্ট
ত্বকের শুষ্কভাব দূর করতে কমলার শুকনো খোসা বেটে এর সঙ্গে তরল দুধ মিশিয়ে ত্বকে লাগান।
৪. চালের গুঁড়া, টক দই ও বেসন মিশ্রিত পেস্ট
পিঠের ত্বকে ব্রণ ও ডেড সেল দূর করতে স্ক্র্যাব হিসেবে ২ চামচ চালের গুঁড়া, ১ চা চামচ টক দই, ১ চা চামচ বেসন মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে পিঠে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট।
৫. পিঠে কালো দাগ কমাতে মধুর ব্যবহার
রোদে পুড়ে পিঠে কালো ছোপ ছোপ দাগ পড়ে। এই ছোপ তুলতে প্রতিদিন শুধু মধু দাগের ওপর লাগাতে পারেন। এতে দাগ কমবে। তবে খেয়াল রাখবেন আপনার ত্বক মধু সহনীয় কি না।
৬. মুলতানি পেস্ট
ত্বক টান টান করতে ১টি ডিমের সাদা অংশ, ২ টেবিল চামচ দই, ২ চা চামচ মুলতানি মাটির সঙ্গে ১ চা চামচ মধু ও সামান্য বেকিং সোডা মিশিয়ে পিঠে মেখে রাখুন ২০ মিনিট।
৭. টক দই, লেবুর রস ও আটা মিশিয়ে প্যাক
টক দই, লেবুর রস ও আটা মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে পিঠে লাগান। সপ্তাহে দুদিন ব্যবহার করুন। অ্যালোভেরার রস নিয়মিত দাগের ওপর লাগালে দাগ কমবে।
৮. শসা, আলু, অ্যালোভেরা বা টমেটো রস
শসা, আলু, অ্যালোভেরা বা টমেটো রস পিঠের ত্বকে ১০ মিনিট মেখে রাখতে পারেন।
৯. সানস্ক্রিন ব্যবহার
রোদে বের হওয়ার আগে ত্বকের খোলা অংশে সানস্ক্রিন লাগান এবং সঙ্গে ছাতা ব্যবহার করুন।
১০. অয়েল ফ্রি কসমেটিকস ব্যবহার
সবসময় অয়েল ফ্রি কসমেটিকস ব্যবহার করুন। এই গরমে ক্রিম বেইজড মেকআপ এড়িয়ে চললেই ভালো করবেন। পিঠ খুব তৈলাক্ত হলে অবশ্যই অয়েল কন্ট্রোল লোশন ব্যবহার করুন।
আশা করি উপরের টিপসগুলো আপনাদের উপকারে আসবে। সবাইকে ধন্যবাদ।
ছবি – সংগৃহীত: অ্যামাজন.কম, বিউটিগ্লিপ্স.কম, সাজগোজ.কম, সাটারস্টক, লাইফবেরি.কম