২০১৫ সালের পর থেকে হওয়া একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে সারা বিশ্বের মধ্যে আমাদের দেশে মিসক্যারেজ রেট অত্যন্ত বেশির দিকে। এমনটা হওয়ার পিছনে অনেক কারণ দায়ী থাকলেও মোবাইল ফোনকেই মূল ভিলেন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু মোবাইল ফোনের সঙ্গে মিসক্যারেজ-এর সম্পর্কটা কোথায়? সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে মোবাইল ফোন থেকে নির্গত রেডিয়েশন-এর প্রভাবে প্রেগন্যান্ট মায়ের শরীরে এমন কিছু নেতিবাচক পরিবর্তন হতে শুরু করে যে তার প্রভাবে বাচ্চার ক্ষতি তো হয়ই, সেই সঙ্গে নানাবিধ প্রসবকালীন সমস্যা হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। বিশেষত মিসক্যারেজ-এর সম্ভাবনা বাড়ে চোখে পড়ার মত।
মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময় তার শরীর থেকে “নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন” নামক এক তরঙ্গ বের হতে থাকে। এই তরঙ্গ এতটাই শক্তিশালী হয় যে অ্যাটোম মলিকিউল-কেও এক স্থান থেকে আরেক স্থানে নাড়াতে সক্ষম হয়। একবার ভাবুন, এতটা শক্তিশালী এনার্জি যদি আমাদের শরীরের উপর আঘাত করতে শুরু করে তাহলে কতটাই না ক্ষতি হয়! তবে মোবাইল ফোনের শরীর থেকেই যে কেবল এমন রেডিয়েশন সৃষ্টি এমন নয়, ল্যাপটপ এবং ওয়াইফাই ডিভাইস থেকেও সম প্রকৃতির তরঙ্গ বের হতে থাকে। সেই কারণেই তো গর্ভাবস্থায় এইসব ডিভাইস থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। আর যদি এমনটা না করেন, তাহলে তো জানেনই কী হতে পারে, তাই না? প্রসঙ্গত, মোবাইলের কারণে যে শুধু মা এবং বাচ্চারই ক্ষতি হয়, এমন নয়। সার্বিকভাবে আমাদের শরীরের উপরও কু-প্রভাব পড়ে। যেমন ধরুন-
মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি হয়
মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল ফোন ঘাঁটলে ঘুম ঠিক মতো হয় না। আর ঘুম যদি ঠিক মতো না হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই মস্তিষ্কের কাজ করার ক্ষমতা কমতে শুরু করে। ফলে স্মৃতিশক্তি যেমন লোপ পায়, তেমনি মনযোগ এবং বুদ্ধির ঘাটতিও দেখা দেয়। সেই সঙ্গে ব্রেইন-এ রক্তের প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে নানাবিধ ব্রেইন ডিজিজ-এ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।
অনিদ্রার সমস্যা দেখা দেয়
মোবাইল ফোনের আলো নানা ভাবে শরীরে মেলাটনিন হরমোন-এর ক্ষরণ কমিয়ে দেয়। ফলে সহজে ঘুম আসতে চায় না। কারণ আমাদের ঘুম কতটা ভাল হবে, তা অনেকাংশেই নির্ভর করে মেলাটোনিন হরমোন-এর ক্ষরণের উপর। তাই শুতে যাওয়ার আগে ভুলেও হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুক-এ ঘুর ঘুর করবেন না যেন!
রেটিনা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়
অন্ধকারে মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে তার নীল আলো রেটিনার কর্মক্ষমতা কমাতে শুরু করে। দীর্ঘদিন ধরে যদি এমনটা চলতে থাকে তাহলে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায়। তাই যদি কম বয়সে অন্ধ হতে না চান, তাহলে আজ থেকেই ফোনটা নিজের থেকে দূরে রেখে শুতে যাওয়ার অভ্যাস করুন।
ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে
মোবাইল ফোন থেকে যে নীল আলো বেরিয়ে আসে তার প্রভাবে যে শুধু মেলাটোনিন হরমোন-এর ক্ষরণ কমে যায় তা নয়, সেই সঙ্গে আরও সব হরমোন-এর ক্ষরণে বাঁধা আসতে শুরু করে। ফলে শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট-এর পরিমাণ কমতে থাকে। প্রসঙ্গত, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হল এমন একটি শক্তিশালী উপাদান, যা শরীর থেকে টক্সিক উপাদানগুলো বের করে দিয়ে ক্যান্সার কোষের জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা কমায়। তাই তো ক্যান্সার রোগকে দূরে রাখতে হলে মোবাইলের সঙ্গ ছাড়তেই হবে। না হলে কিন্তু বেজায় বিপদ!
মোবাইল ফোন এবং বন্ধ্যাত্ব
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে স্পার্ম কাউন্ট কমে যেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে দেহের ভেতর এমন পরিবর্তন হয় যে বাচ্চা নেওয়ার ক্ষেত্রে নানা সমস্যা দেখা দেয়। আসলে রেডিয়েশন-এর কারণে বীর্য উৎপাদনকারী কোষেরা এত মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্থ হয় যে স্পার্মের মান কমতে শুরু করে। যে কারণে এমনটা ঘটে থাকে। প্রসঙ্গত, সেন্টার ফর রিপ্রোডাক্টিভ মেডিসিন-এর গবেষকরা মোবাইল ফোনের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে আরও জানতে একটি পরীক্ষা চালিয়েছিলেন। ৩২ জন পুরুষের কাছে থেকে স্পার্ম সংগ্রহ করে সেগুলির পাশে মোবাইল ফোন রেখে দেখতে চেয়েছিলেন বীর্যের উপর রেডিয়েশন-এর কেমন প্রভাব পড়ে। এমনটা করতে গিয়ে তারা লক্ষ্য করেন মোবাইল ফোন রাখার আগে স্পার্ম-এর যে কোয়ালিটি ছিল, তার থেকে অনেকটাই কমে গেছে। তাই যদি বাবা হতে চান, তাহলে ভুলেও বেশি মাত্রায় ফোন ব্যবহার করবেন না যেন।
ভুলেও ফোন আন্ডারগারমেন্টস-এর মধ্যে রাখবেন না
ব্রেস্টলিঙ্ক সংস্থার করা একটি গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়েছে যে ব্রেস্ট ক্যান্সার-এর সঙ্গে মোবাইল ফোনের সরাসরি যোগ রয়েছে। কিন্তু সেটা ঠিক কোথায়? স্টাডি-টি চলাকালীন গবেষকরা লক্ষ্য করেছিলেন আন্ডারগারমেন্টস-এর মধ্যে ফোন রাখলে শরীরে বিশেষ কিছু অংশে রেডিয়েশনের মারাত্মক প্রভাব পড়ে, বিশেষত ব্রেস্ট-এ। এমনটা যদি দীর্ঘদিন ধরে হতে থাকে, তাহলেই বিপদ। কারণ সেক্ষেত্রে ব্রেস্ট ক্যান্সার-এ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
তাই এখনই সতর্ক হন। কারণ আপনার সুস্থতা বজায় রাখাটা একমাত্র আপনার হাতেই।
লিখেছেন- লিন্নি
ছবি- সাটারস্টক