সাজগোজে তেমন মন নেই আপনার। খুব একটা মাথা ঘামান না নিত্যদিনের তৈরি হওয়া নিয়ে। নিতান্তই দরকারের প্রসাধন বাদে আর কিছু নেই আপনার ড্রেসিং টেবিলে। সবসময় অলঙ্কারের ব্যবহার নিয়েও বিরক্তি থাকতেই পারে। কিন্তু গুছিয়ে তৈরি হতে হবে মানেই রাজ্যের আয়োজন, অনেক অনেক গয়না-গাটির বোঝা, এমন ডাহা ভুল ধারনাটা এবার তাড়িয়েই ফেলুন। অল্প আয়োজনেই রোজ নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখার বিদ্যা শিখে নিন এবার। আর কতোদিন অবহেলায় নিজেকে ফেলে রাখবেন বলুন তো?
[picture]
সাজ মানেই সং সাজা নয়, এই কথাটা মাথায় রাখুন। আশেপাশে অনেক মানুষকে হয়তো সবসময়ই চড়া সাজে দেখার অভ্যাস হয়েছে আপনার। সামান্য বেড়াতে বের হলেই মেক-আপের ভীষণ বহর তাদের। সেসব দেখেই নিজের সাদামাটা ভাব নিয়ে আরো গুটিয়ে যেতে চান আপনি, ভাবেন সাজগোজ মানেই তবে অনেক আয়োজনের কিছু। কিন্তু আসলে তা নয়। সাজ মানে আপনি নিজেকে ঠিক যেভাবে দেখতে চান, যেভাবে মেলে ধরতে চান সেটাকেই একটুখানি যত্নের সাথে গুছিয়ে নেয়া। নিজেকে পরিপাটি করে রাখতে খানিকটা সময় নিয়ে তৈরি হওয়ার মানেই হচ্ছে সাজ। এর বাইরে আর কিচ্ছুটি নয়।
একদমই নতুন নতুন যারা সাজগোজের দুনিয়ায় পা রাখছেন, নিজের স্বাভাবিকতা ধরে রেখেই সাজাতে চান নিজেকে, তাদের চিন্তাগুলোকে আরো একটু গুছিয়ে দিতেই এই লেখাটা। আলমারি ভরা অনুষঙ্গ কিংবা সাজের আয়নার সামনে প্রসাধনের বাজার প্রয়োজন হবে না। সূত্র মেনে চলতে জানলে অল্প কিছু জিনিষেই পরিপূর্ণ হবে আপনার সাজগোজ।
যেমনটা করতে পারেন আপনি
- চুড়ি পছন্দ করেন? তবে একদিনের সাজের জন্য পুরোটাই নির্ভর করতে পারেন চুড়ির ওপর। একহাত ভরে পরে নিন প্রিয় চুড়ির গোছা। সালোয়ার-কামিজ হোক বা জিন্স-কুর্তি, চুড়ি কিন্তু সব রকম পোশাকের সাথেই খুব মানিয়ে যায়। কেমন চুড়ি বাছাই করবেন, তার জন্যমাথায় রাখুন সেই সহজ সূত্র, চিকন চুড়ি পরলে হাত অনেকটা ভর্তি করেই পরুন আর একটু চওড়া বালা অথবা ব্রেসলেটের ক্ষেত্রে একটি বা দুই-তিনটি বেছে নিন। পোশাকের রঙের বৈপরীত্যে পরুন চুড়ি অথবা ব্রেসলেট, বিষয়টা বেশি নজর কাড়বে তখন। যখন হালকা রঙের কামিজ বা শাড়ি পরছেন শেড মিলিয়ে একটু গাঢ় রঙের চুড়ি পরুন হাতে। একই ভাবে গাঢ় রঙা পোশাকের সাথে চুড়িতে বেছে নিন অপেক্ষাকৃত হালকা রঙ।
- বড়সড় একটা আংটি গলিয়ে নিন আঙ্গুলে। পাথরের বড় আংটি পরতে পারেন যদি পোশাক হয় একটু জমকালো। সবসময়ের সালোয়ার-কামিজ বা কুর্তির সাথে যেকোন ধাতব আংটি অথবা পাথরের হালকা কাজের আংটি মানিয়ে যাবে। চাইলে দুই/তিনটি আংটিও পরতে পারেন, একেক রকমের। হাতে তখন চুড়ির গোছা থাকুক বা না থাকুক, কেবল আংটিও আপনার সাজের আয়োজনে প্রভাব ফেলবে।
- হেয়ারব্যান্ড, ক্লিপ, এমন অনুষঙ্গগুলোকে বানিয়ে ফেলুন আপনার সাজের প্রধান উপকরণ। রঙেঢঙে বৈচিত্র্যময় সব অনুষঙ্গ সংগ্রহে রাখতে পারেন। পিঠ ছাড়ানো একমাথা খোলাচুল, পরিপাটি খোঁপা বা এলোমেলো বেণি, যেমনই হোক চুলের সজ্জা সাথে মানানসই একটি ব্যান্ড বা ক্লিপ সাজের মাধ্যম হয়ে উঠবে। বর্ণিল কয়েকটি হেয়ারব্যান্ড দিয়ে কয়েক ধাপের পনিটেইলেও আপনার সাজের উচ্ছ্বাস ফুটে উঠতে পারে। পাশ থেকে চুল নিয়ে টুইস্ট করে বা বেণি করে পেছনে আটকে দিন, তাতে পরপর গুঁজে দিন কয়েকটি ফুলেল ক্লিপ। করেই দেখুন না কেমন লাগে নিজেকে।
- নাকফুল পরার অভ্যাস নেই কিন্তু পছন্দ করেন, তাহলে প্রায়ই কিন্তু নাকফুল পরতে পারেন আপনি। অন্য কোন গয়না ছাড়াই নাকের ডগায় একটা নাকফুলে আপনাকে স্নিগ্ধ সুন্দর লাগবে। কয়েকটি নাকফুল কিনে রাখুন তবে, একেকদিন একেকটা আপনার সাজের আয়োজনে ভিন্ন মাত্রা নিয়ে আসবে।
- একরঙা জামার সাথে গলায় হরেক রঙের পুঁতির একটা মালা পরতে পারেন। পরতে পারেন রঙিন সুতোর মাঝে ধাতব উপাদানের লকেটও। এই একটি জিনিষেই আপনি নিজেকে পুরোপুরি সাজিয়ে তুলতে পারেন একদিন।
- চিরায়ত গহনা বাদ দিয়ে আলাদা কিছু চাইলে তাতেও বেশি ঝামেলা পোহাতে হবে না কিন্তু। হালের ট্রেন্ড রিস্টব্যান্ড জিনিষটা ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবে চমৎকার। কয়েকটি রিস্টব্যান্ডেই আপনার সাজ পূর্ণ করুন। চিরায়ত ধারার বাইরে থেকেও নজর কাড়বেন সবার।
এমন সামান্য আয়োজনেই তবে সাজুন এবার। নিজের চিরচেনা আলুথালু ভাবকে বিদায় দিয়ে নতুন রূপে দেখুন নিজেকে। হ্যাপি সাজগোজ!
লিখেছেন – মুমতাহীনা মাহবুব
মডেল – সানজিদা তন্বী
ছবি – শাওন কাইয়ুম