ভীষণ আনন্দ করে কয়েকটা দিন বাইরে কাটিয়ে আসার পরে বাড়ি ফিরে নিজের দিকে তাকাতেই মন খারাপ হয়ে যায় সবার। কারণ সারা শরীরে ট্যান হয়ে কালো ছোপ ছোপ পড়ে যায়। শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় হাতের ওপর এই রোদের ধকলটা যায় সবচেয়ে বেশি। তাই স্কিন টোন ব্রাইট করার জন্য হাতের যত্নটা নিতে হবে ঠিকঠাকমতো। কয়েকটি ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্ট দিয়ে খুব সহজেই এই প্রবলেমের সল্যুশন পাওয়া যাবে। চলুন জেনে নেয়া যাক ঘরোয়া উপায়ে সহজেই কীভাবে হাতের ট্যান দূর করতে পারবেন সে সম্পর্কে।
হাতের ট্যান দূর করার উপায়
লিকোরিস পাউডার
লিকোরিস বা মুলেঠি গুঁড়া হচ্ছে হাইড্রোকুইনোন এর একটা প্রাকৃতিক অল্টারনেটিভ, যা স্কিন টোন লাইট করতে সাহায্য করে। এর মধ্যে আছে ‘গ্ল্যাব্রিডিন’ নামক অ্যাকটিভ কম্পোনেন্ট যা ত্বকের মেলানিন প্রোডাকশনকে নিয়ন্ত্রণ করে অল্প সময়েই ট্যান দূর করে স্কিন টোন ব্রাইট করে তোলে।
যেভাবে বানিয়ে ব্যবহার করবেন
২ টেবিল চামচ লিকোরিস পাউডার এর সাথে ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে প্রথমে ঘন পেস্ট বানাবেন। এরপরে এর সাথে মেশাবেন ১ চা চামচ পরিমাণ লেবুর রস। ভালোভাবে মিশিয়ে নেয়ার পরে বেশি ঘন মনে হলে সামান্য রোজ ওয়াটার মিশিয়ে হাতে লাগানোর উপযোগী করে নিবেন। প্যাক তৈরি করে দুই হাতে লাগিয়ে নিবেন ভালো করে। ২৫ মিনিট রেখে ভালো করে ঠান্ডা পানিতে রাব করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই দিন করলে সবচেয়ে ভালো ফলাফল পাবেন।
চন্দন পাউডার
চন্দনের গুঁড়া ট্যান কাটাতে ভীষণভাবে উপকারী। এতে থাকা এক্সফোলিয়েটিং প্রোপার্টিজ ট্যান দূর করতে বেশ কার্যকরী। শসার রসে থাকা ভিটামিন সি স্কিন ব্রাইট করতে হেল্প করে।
যেভাবে বানিয়ে ব্যবহার করবেন
চন্দনের প্যাক বানাতে আপনার লাগবে ২ টেবিল চামচ চন্দনের গুঁড়া, ১ টেবিল চামচ টকদই, ১ টেবিল চামচ শসার রস, ১ চা চামচ লেবুর রস। সবগুলো উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে হাতে লাগিয়ে রাখবেন ৩০ মিনিট, এরপরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
চন্দনের গুঁড়ার আরেকটি দারুণ প্যাক হচ্ছে চন্দনের গুঁড়া ও নারিকেলের পানি। এই দুটি উপাদান একসাথে মিশিয়ে নিয়ে প্যাক বানিয়ে হাতে লাগালে হাতের ট্যান দ্রুত কেটে যাবে।
উপটান
ত্বকের যত্নে উপটানের কোনো জুড়ি নেই। ত্বকের অনেক সমস্যার সমাধান হয় উপটান ব্যবহারে। শুধু সঠিক নিয়মটা জানতে হবে। উপটান আপনি নিজেও বানাতে পারেন, আবার রেডি উপটান কিনেও ব্যবহার করতে পারেন।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
২ টেবিল চামচ উপটানের সাথে পরিমাণমতো তরল দুধ মিশিয়ে নিন। দুধের বদলে এখানে টক দইও ব্যবহার করা যাবে। এরপরে পেস্ট বানিয়ে হাতে লাগিয়ে রাখুন সম্পূর্ণ শুকিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত। এরপরে রাব করে তুলে ফেলে ঠান্ডা পানিতে হাত ধুয়ে নিন। একদিন পরপর এটা করতে পারলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
বেসন, আলুর রস ও কাঁচা হলুদ
বেসনের গুঁড়া, আলুর রস ও কাঁচা হলুদ হাত পায়ের ট্যান কাটাতে দারুণভাবে কাজ করে। বেসনে আছে অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল প্রোপার্টিজ, যা স্কিন থেকে ডার্ট ও টক্সিনস বের করে নিয়ে আসে। সেই সাথে স্কিনকে এক্সফোলিয়েট করে এবং সানট্যান কমাতে হেল্প করে। আলুতে আছে স্কিন হোয়াইটেনিং এজেন্ট, যা ট্যান রিমুভ করতে বেশ হেল্পফুল। কাঁচা হলুদে থাকা কারকিউমিন পাওয়ারফুল একটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। স্কিনকে ফ্ললেস করে তুলতে এর জুড়ি নেই। এই ইনগ্রেডিয়েন্টগুলো দিয়ে তৈরি এই প্যাক নিয়মিত লাগালে হাতের ট্যানই শুধু দূর হয় না, হাতের ত্বক হয়ে ওঠে মসৃণ ও কোমল।
যেভাবে বানিয়ে ব্যবহার করবেন
বেসনের প্যাক বানাতে আপনার লাগবে ২ টেবিল চামচ বেসন গুঁড়া, ২ টেবিল চামচ আলুর রস এবং ১ চা চামচ কাঁচা হলুদ। এর সাথে পরিমাণমতো পানি অথবা দুধ মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে হাতে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। এরপরে খুব হালকা গরম পানি দিয়ে রাব করে তুলে ফেলুন। এই প্যাকটা সপ্তাহে ৩ দিন লাগালে ভালো উপকার পাবেন।
এই প্যাকটি চাইলে আরেকভাবেও আপনি বানাতে পারেন। বেসনের সাথে মেশান ১ চামচ মধু এবং ২ চামচ লেবুর রস, সাথে পরিমাণমতো গোলাপজল। একসাথে সবগুলো ইনগ্রেডিয়েন্ট মিশিয়ে নিয়ে ভালো করে প্যাক তৈরি করে দুই হাতে লাগিয়ে নিন। ২০ মিনিট পরে সামান্য পানি লাগিয়ে রাব করে তুলে ফেলুন।
অ্যালোভেরা জেল
ত্বকের পোড়া ভাব দূর করতে অ্যালোভেরা অসাধারণ কাজ করে। এতে aloesin নামে একটি কম্পাউন্ড আছে যা ট্যান কমিয়ে আনতে হেল্প করে। অ্যালোভেরা জেলের সাথে মসুর ডাল মিশিয়ে নিতে পারেন। এটিও ট্যান কমাতে বেশ কার্যকর।
যেভাবে বানিয়ে ব্যবহার করবেন
এই প্যাক বানাতে হলে ২ টেবিল চামচ মসুর ডাল ভিজিয়ে রাখুন ২/৩ ঘণ্টা। এরপরে বেটে নিয়ে এর সাথে মেশান ১ চা চামচ অ্যালোভেরা জেল এবং ২ চামচ টমেটোর রস। ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে দুই হাতে লাগিয়ে রাখুন ২০/২৫ মিনিট। এরপরে হালকাভাবে রাব করে তুলে ফেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন ভালো করে। এই প্যাকটি সপ্তাহে দুইদিন লাগালে ভালো ফলাফল পাবেন।
এই তো জানিয়ে দিলাম হাতের ট্যান দূর করার কার্যকরী কয়েকটি উপায় সম্পর্কে। এবার ঘোরাঘুরি শেষে বাড়ি ফিরে ট্যান হলে আর মন খারাপ করে থাকতে হবে না। আশা করি আর্টিকেলটি হেল্পফুল ছিল। আবারও কথা হবে অন্য কোনো টপিক নিয়ে। অথেনটিক স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার ও মেকআপ প্রোডাক্ট কিনতে পারবেন সাজগোজ থেকে। সাজগোজের কয়েকটি ফিজিক্যাল শপ রয়েছে। শপগুলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ন মল্লিকা, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ার এবং চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার এ অবস্থিত। এই শপগুলোতে ঘুরে নিজের পছন্দমতো অথবা অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন আপনার দরকারি প্রোডাক্টগুলো।
ছবিঃ সাজগোজ