খাদ্য ছাড়া আমাদের জীবনধারণ সম্ভব নয়। দৈনন্দিন কাজকর্ম এবং চলাফেরা করার জন্য সবল, রোগমুক্ত ও সুস্থ শরীর প্রয়োজন। সুস্থ শরীর বজায় রাখার জন্য আমরা যা কিছু খেয়ে থাকি তাই খাদ্য। আমরা সারাদিন অনেক রকমের খাবার খাই, তার সবটুকু আমাদের কাজে লাগে না। খাদ্যের যেটুকু কাজে লাগে সে টুকুই দেহের পুষ্টি সাধন করে। তাই আজ খাদ্যের ৬টি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, বিভিন্ন রূপ এবং এর কাজ নিয়ে আলোচনা করা হল।
খাদ্যের বিভিন্ন কাজ
- শরীর গঠন ও বৃদ্ধিসাধন এবং ক্ষয়পূরণ।
- শরীরে তাপশক্তি ও কর্মক্ষমতা যোগানো।
- শরীর রোগ মুক্ত রাখা।
- অসুস্থ শরীরকে আরোগ্য লাভে সহায়তা করা।
কাজ ভেদে খাদ্যের শ্রেণী বিভাগ
১. শক্তিদায়ক খাদ্য
এসব খাদ্যের প্রধান ভূমিকা হলো, শক্তি ও তাপ উৎপাদন করে শরীরকে সতেজ ও কর্মক্ষম রাখা। শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়া কর্ম যেমন শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়া, হৃৎপিন্ড ও অন্যান্য দেহযন্ত্রের ক্রিয়া, পরিপাক ক্রিয়া, মলমূত্র নিষ্কাষণ ক্রিয়া এবং দৈনন্দিন জীবনে সকল কাজকর্ম সম্পাদনে শক্তি প্রয়োজন। যে সকল খাদ্যসামগ্রী হতে শক্তি পাওয়া যায় তা হলোঃ
- শস্য জাতীয় খাদ্য (যেমন চাল, গম, ভূট্টা, জোয়ার ইত্যাদি)
- মূল জাতীয় খাদ্য (যেমন গোল আলু, মিষ্টি আলু, মেটে আলু, কাসাবা ইত্যাদি)
- তেল বা চর্বি জাতীয় খাদ্য (যেমন সব রকমের তেল, ঘি, মাংসের চর্বি ইত্যাদি)
- চিনি, গুড় ও মিষ্টি জাতীয় খাদ্য
২. শরীর গঠন, বৃদ্ধিসাধন এবং ক্ষয় পূরণকারী খাদ্য
এ সকল খাদ্য মানব দেহে মূলত শরীরের কাঠামো তৈরি বা শরীর গঠন, শরীরের বৃদ্ধি সাধন ও শরীরের ক্ষয়পূরণে কাজ করে থাকে।
উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রাপ্ত খাদ্য
- সব রকমের ডাল
- মটরশুঁটি
- শিমের বিচি, কাঁঠালের বিচি
- বাদাম ইত্যাদি
প্রাণীজ উৎস থেকে প্রাপ্ত খাদ্য
- ডিম
- দুধ
- মাছ
- মাংস
৩. রোগ প্রতিরোধক খাদ্য
এসব খাদ্যের প্রধান ভূমিকা হলো, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, নানা প্রকার রোগ-ব্যাধি কিংবা অসুস্থতা হতে শরীরকে রক্ষা করা। রোগ প্রতিরোধক সস্তা খাদ্যের মধ্যে রয়েছেঃ
- রঙ্গিন শাক-সবজি
- ফলমূল
খাদ্যের ৬টি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান
- শ্বেতসার বা শর্করা ( উৎস – চাল, গম, ভুট্টা, চিড়া, মুড়ি, চিনি, গুড়, আলু ও মূলজাতীয় অন্যান্য খাদ্য)
- আমিষ ( উৎস – মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল, মটরশুঁটি, শিমের বিচি, কাঁঠালের বিচি, বাদাম ইত্যাদি)
- স্নেহ জাতীয় খাদ্য (উৎস -তেল, ঘি, মাখন, চর্বি ইত্যাদি)
- খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন (উৎস – রঙ্গিন শাক-সবজি ও ফল, ডিম, দুধ, কলিজা ইত্যাদি)
- খনিজ লবণ (উৎস – রঙ্গিন শাক-সবজি ও ফল, ডিম, দুধ, কলিজা, মাংস, ছোট মাছ ইত্যাদি)
- নিরাপদ পানি (পানি, ফলের রস, পানীয়)
খাদ্যের কিছু মুখ্য উপাদান
- শ্বেতসার বা শর্করা
- আমিষ
- স্নেহ
খাদ্যের কিছু গৌণ উপাদান
- খাদ্য প্রাণ বা ভিটামিন
- খনিজ লবণ
- নিরাপদ পানি
খাদ্য উপাদানের কাজ, উৎস ও মাথাপিছু দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ
১. শ্বেতসার বা শর্করার কাজ
- শরীরে তাপশক্তি সরবরাহ করে
- তেল/চর্বি জাতীয় পদার্থ দহনে সাহায্য করে
- আমিষের প্রধান কাজ করতে সহায়তা করে
উৎস
- চাল
- গম
- ভুট্টা
- চিনি, গুড়
- আলু
- মিষ্টি আলু
- কচু, ইত্যাদি।
মাথা পিছু দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ (আহারোপযোগী )
- মোট প্রয়োজনীয় খাদ্যশক্তির শতকরা প্রায় ৫০-৬০ভাগ।
২. আমিষ এর কাজ
- দেহের গঠন ও বৃদ্ধিসাধন করে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- শরীরে তাপশক্তি সরবরাহ করে
- শরীরে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে
উৎস
- প্রাণিজ উৎস যেমন মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, কলিজা
- উদ্ভিজ্জ উৎস যেমন সয়াবিন, কাঁঠালের বীচি, সীমের বীচি, ডাল, বাদাম, মটরশুঁটি ইত্যাদি।
মাথা পিছু দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ (আহারোপযোগী)
- প্রতি কেজি শরীরের ওজনের জন্য ১ গ্রাম ( পূর্ণবয়স্কদের জন্য )
- প্রতি কেজি শরীরের ওজনের জন্য ২-৩গ্রাম ( ৪ বছরের শিশুর জন্য )
- প্রতি কেজি শরীরের ওজনের জন্য ১.৭ গ্রাম ( ৪-১৮ বছর বয়স পর্যন্ত )
- প্রতি কেজি শরীরের ওজনের জন্য ১.৫গ্রাম ( গর্ভবতী ও প্রসূতীর জন্য )
৩. স্নেহ এর কাজ
- দেহে শক্তি সরবরাহ করে
- দেহের ত্বককে মসৃণ রাখে
- খাবার সুস্বাদু করে ও তেল বা চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন শরীরে কাজে লাগাতে সাহায্য করে
উৎস
- প্রাণিজ উৎস যেমন ঘি, মাখন, চর্বি ইত্যাদি
- উদ্ভিজ্জ উৎস যেমন সয়াবিন তেল, সরিষার তেল, তিলের তেল, সূর্যমুখীর তেল, বাদাম, ডালডা, নারকেল (শুকনা) ইত্যাদি।
মাথাপিছু দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ (আহারোপযোগী)
- প্রায় ৩৫-৪০গ্রাম (পূর্ণ বয়স্কের জন্য)
আশা করি খাদ্যের ৬টি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, বিভিন্ন রূপ এবং এর কাজ নিয়ে এই লেখাটি আপনাদের উপকারে আসবে।
ছবি- সংগৃহীত: বাওমই.কম, ভিটিভি.ভিএন,পুস্টিবাড়ি.কম,হাউস্ট্রংগার.কম