তারুণ্য ধরে রাখতে কে না চায়! আর এই তারুণ্য ধরে রাখার জন্য সবচেয়ে বেশি যেটা দরকার সেটা হচ্ছে নিজের যত্ন নেয়া, নিজেকে ভালোবাসা এবং নিজের মন ভালো রাখা।
আমার স্কিন যেহেতু ড্রাই, এই যত্নটা আমাকে একটু বেশিই নিতে হয়। রাতের স্কিন কেয়ার টা খুবই জরুরী। কারণ ঘুমোনোর সময় আপনার স্কিনটা রেস্ট করে এবং স্কিনে সবকিছু ভালোভাবে অ্যাবসর্ব হয়। আর সকালে উঠে ফ্রেশ দেখায়। আমি স্কিন কেয়ারের জন্য ন্যাচারাল প্রোডাক্ট ব্যবহার করা বেশি পছন্দ করি। আমি যা যা ব্যবহার করি তার মধ্যে আছে কোকোনাট মিল্ক যাতে থাকা ভিটামিন সি স্কিনের কোলাজেন তৈরিতে সহায়তা করে, স্কিনকে উজ্জ্বল করে তোলে, ডপ নারিশমেন্ট দেয়, সেই সাথে গ্লোয়ি লুক দিতে সাহায্য করে। আরো আছে নারকেল তেল যার ডিপ নারিশমেন্ট আর অ্যান্টি এইজিং এবিলিটির কথা লিখে শেষ করা যাবে না। আছে অ্যালোভেরা জেল যা স্কিনের জন্য ভীষণ উপকারী। আছে গোলাপের পাপড়ি আর চন্দনের গুঁড়ো যা স্কিনকে ব্রাইটেনিং করতে সহায়তা করে। চলুন তাহলে আর দেরি না করে জেনে নেয়া যাক, what’s on my night stand!
[picture]
চেহারা এবং গলার যত্ন
রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে আমি বেসনের সাথে সামান্য নারকেল তেল আর পানি মিশিয়ে পেস্টের মতো তৈরি করে সেটা দিয়ে আস্তে আস্তে পুরো মুখ ম্যাসাজ করতে থাকি। তারপর পানি দিয়ে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে ফেলি। এরপর আধা চা চামচ অ্যাপল সাইডার ভিনেগারের সাথে ১ চা চামচ পানি মিক্স করে তুলোর বলের সাহায্যে পুরো মুখ আর গলা ভালোভাবে মুছে নেই। ৫ মিনিট পর আমি একটা নিজের বানানো অর্গানিক ব্রাইটেনিং নাইট সিরাম ব্যবহার করে পুরো মুখ আর গলা, ঘাড় ভালোভাবে ময়েশ্চারাইজ করে নেই। সিরাম টি বানাতে আমি যা যা ব্যবহার করি তা হলো –
- ১টা গোলাপের সব পাপড়ি
- ১ কাপ ঘন কোকোনাট মিল্ক, (যদি না পান তাহলে কোকোনাট মিল্ক সমৃদ্ধ কোন লোশন ব্যবহার করতে পারেন)। নারকেল কুরিয়ে সামান্য পানি মিশিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে পরিষ্কার কাপড়ে ছেঁকে নিলেই যে দুধের মতো লিকুইডটা পাবেন,সেটাই কোকোনাট মিল্ক (নারকেলের দুধ)
- ১টা ভিটামিন ই ক্যাপসুল
- দুটো কাঠবাদাম
- সামান্য চন্দন গুঁড়ো (সুপারশপে বা বড় বাজারে কিনতে পাওয়া যায়)
এসব কিছু ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিলেই অর্গানিক ব্রাইটেনিং নাইট সিরাম তৈরি। এই পরিমাণ সিরামে আমার ১০-১২ দিন চলে যায়। তারপর আবার নতুন করে বানাই। পুরো মুখে, গলায় আর ঘাড়ে আস্তে আস্তে সার্কুলার মোশনে ম্যাসাজ করে নেই। গলায় একটু বেশি সময় নিয়ে ম্যাসাজ করি, কারণ গলায় সবার আগে বয়সের ছাপ পড়া শুরু হয়। আমরা গলার যত্ন নিতে অনেকেই অবহেলা করি, যেটা ঠিক না। বিশেষ করে ড্রাই স্কিন যাদের তাদের তো আরো বেশি যত্ন নেয়া উচিৎ।
ঠোঁটের যত্ন
ঠোঁটের যত্নের জন্য আমি কোন পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার না। আমি সামান্য কোকোনাট মিল্কের সাথে পিওর আমন্ড অয়েল মিক্স করে ঠোঁটে লাগাই। পরদিন সকালে ব্রাশ করার পর টুথব্রাশ দিয়ে হালকা করে ব্রাশ করলে সব মরা চামড়াগুলো উঠে আসে।
চোখের নিচের ত্বকের যত্ন
চোখের নিচের স্কিন টা কিন্তু ভীষণ সেনসিটিভ। এবং এই সেনসিটিভ স্কিনের এক্সট্রা কেয়ার না নিলে বয়সের ছাপ কিন্তু এখানেও সবার আগে পড়তে শুরু করে, বিশেষ করে আপনার স্কিনটা যদি ড্রাই হয় তাহলে তো কথাই নেই। চোখের নিচে ব্যবহারের জন্য আমি যে আইক্রিম টা ব্যবহার করি সেটা বানাতে আমার যা যা লাগে –
- ১ চা চামচ কোকোনাট মিল্ক
- ১ চা চামচ অ্যালোভেরা জেল
- আধ চা চামচ আমন্ড অয়েল
সবকিছু মিক্স করে আমি ছোট্ট একটা কন্টেইনারে করে ফ্রিজে রেখে দেই। এই পরিমাণ আইক্রিম দিয়ে আমার মোটামুটি ৬-৭ দিন চলে যায়। তারপর আবার নতুন করে বানাই।
হাতের যত্ন
আমার বাকি স্কিনের মতো হাত খুব বেশি ড্রাই না। হাতে ব্যবহার করার জন্য আমি খুব হালকা একটা লোশন বানাই। সেটা বানাতে আমি যা যা ব্যবহার করি –
- ২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল
- সামান্য চন্দন গুঁড়ো
- ১ টেবিল চামচ কোকোনাট মিল্ক
- ১টা ভিটামিন ই ক্যাপসুল
সবকিছু মিক্স করে নিলেই আমার হ্যান্ড লোশন রেডি।
পায়ের যত্ন
যাদের স্কিন ড্রাই থাকে, তাদের পায়ের যে কি ভয়াবহ করুণ দশা হয় তা তো আর নতুন করে বলার কিছু নেই। আমার পা দুটো ও তার ব্যতিক্রম নয়। ডিপ নারিশিং ফুটক্রিম বানাতে আমার যা যা লাগে –
- ২ চা চামচ কোকোনাট মিল্ক
- ১ চা চামচ পিওর কোকোনাট অয়েল
- ২ চা চামচ অ্যালোভেরা জেল
- ১টা যেকোন সাদা রঙের ফুলের পাপড়ি (বেলি/রজনীগন্ধা/গন্ধরাজ)
সবকিছু ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে ডীপ নারিশিং ফুট ক্রিম। আমি পায়ের তলাতেও এই ক্রিমটা ব্যবহার করি, আমার পা ফাটে না।
ফুল বডি
ফুল বডিতে ব্যবহার করার জন্য আমি আর আলাদা করে কিছু তৈরি করি না। আমি এ মুহূর্তে প্যারাস্যুট অ্যাডভান্সড বডি লোশন ব্যবহার করি, যেটার মেইন ইনগ্রিডিয়েন্ট হচ্ছে কোকোনাট মিল্ক। এটা ব্যবহার করে বেশ ভালো লাগছে। রিভিউ নিয়ে আরেকদিন আসব আপনাদের কাছে।
ব্যস! হয়ে গেলো আমার ড্রাই স্কিনের নাইট টাইম রুটিন। যাদের স্বাভাবিক স্কিন তাদের চেয়ে যাদের ড্রাই স্কিন তাদের অনেক বেশি ডিপ নারিশমেন্ট জরুরী। কারণ যদি স্কিনের ঠিক মতো যত্ন না নেয়া হয় তাহলে অকালেই স্কিনে বয়সের ছাপ পড়তে শুরু হবে। আমরা সবাই জানি কোকোনাট অয়েল অনেক বেশি ময়েশ্চারাইজিং এবং নারিশিং। অথচ কোকোনাট মিল্কের গুণের কথা আমরা অনেকেই একটু কম জানি। কোকোনাট মিল্ক শুধু স্কিনকে ডিপলি নারিশ ই করে না, সেই সাথে রোদে পোড়া ভাব দূর করে উজ্জ্বল করে তুলতেও সহায়তা করে।
So Take Care of Yourself, Because You Are Worth It.
লিখেছেন – নন্দিনী