মেকআপের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশন চিনেন না এমন মানুষ আজকাল আর খুঁজে পাওয়া যায় না বললেই চলে। মুখের খুতগুলো ঢেকে ফেলে মুখে একটি সুন্দর বেইজ তৈরি করে ফাউন্ডেশন। মেকআপ প্রেমীরা ফাউন্ডেশন কিনছেন, ব্যবহার করছেন কিন্তু সেক্ষেত্রেও অভিযোগের শেষ নেই। ফাউন্ডেশন দিলে ন্যাচারাল লাগে না, ফাউন্ডেশন ফেটে ফেটে যায়, ফাউন্ডেশন ভেসে থাকে, মুখে ফাউন্ডেশন বসে না ইত্যাদি নানা ধরনের অভিযোগ। কিন্তু আপনি জানেন কি? ফাউন্ডেশন ব্যবহারের জন্য আপনি নিজে চাইলেই এইসব সমস্যার সমাধান করতে পারবেন যদি ফাউন্ডেশন কেনা এবং ব্যবহারে একটু সতর্ক হন। কীভাবে?
ফাউন্ডেশন ব্যবহারের জন্য শেড বাছাই
অনেকেই ফাউন্ডেশন কেনার পরে মুখে ব্যবহারের সময় দেখেন যে, শেইড ম্যাচ করছে না। অথচ দোকানে আপনি ম্যাচ করেই কিনেছেন। কিন্তু কোথায় ম্যাচ করেছেন? হাতে/কবজি তে?? তাহলে তো মুখের সাথে ম্যাচ না করারই কথা। ফাউন্ডেশন কেনার সময় সবসময় আপনার চোয়ালে ফাউন্ডেশন লাগিয়ে দেখবেন। যদি দেখেন ফাউন্ডেশন লাগানোর পর সেটি আর আপনার চোয়ালের স্কিন শেইড একসাথে মিলে গেছে, তাহলে বুঝবেন ওইটাই আপনার পারফেক্ট শেইড। মনে রাখবেন, ফাউন্ডেশন শেইড ম্যাচ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেননা উল্টাপাল্টা শেইড ব্যবহারে আপনাকে কখনোই ন্যাচারাল তো লাগবেই না, বরং বাজে দেখতে লাগবে-
১) আর্টিফিশিয়াল লাইটে ফাউন্ডেশনের শেইড ম্যাচ করা
এই ভুলটা আমরা প্রায় সবাই করে থাকি। দোকান থেকে ফাউন্ডেশন শেইড ম্যাচ করার সময় তা দোকানের আর্টিফিশিয়াল লাইটেই ম্যাচ করি। যার ফলে বাসায় এসে দেখা যায় শেইড মিলছে না। এটা কখনোই করা যাবে না। কারণ, আর্টিফিশিয়াল লাইটে ফাউন্ডেশনের আসল শেইড বোঝা যায় না। তাই সবসময় ফাউন্ডেশন কিনতে তাড়াহুড়ো না করে একটু সময় নিন। ফাউন্ডেশন লাগিয়ে ন্যাচারাল লাইটে এসে দেখবেন। সম্ভব হলে, ওই দিনই ফাউন্ডেশন কেনার দরকার নেই। কারণ, একদিন সময় নিয়ে ফাউন্ডেশনটি লাগিয়ে নিয়ে দেখলেন যে আপনার স্কিন টাইপ অনুযায়ী কেমন স্যুট করে। যদি ফাউন্ডেশনটি আপনাকে ম্যাচ এবং স্যুট করে তাহলে পরদিন সেটি কিনতে পারেন।
২) অনলাইনে ফাউন্ডেশন কেনা
আজকাল আমরা প্রায় সবাই অনলাইনে মেকআপ প্রোডাক্টস কিনে থাকি। কিন্তু অনলাইনে ফাউন্ডেশন কেনাটা একটা চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। এক্ষেত্রে, অনেক রিসার্চের দরকার পড়বে আপনার। নেটে সার্চ করে দেখবেন, যে ফাউন্ডেশনটি কিনতে চাচ্ছেন, সেটি আপনার স্কিন টাইপের জন্য কেমন, এছাড়া শেইড ম্যাচ করা নিয়ে সবাই কনফিউজড হয়ে যাই। নেটে শেইডগুলোর সোয়াচের পিকচার দেয়া থাকে। সেইটা দেখে স্কিনের সাথে ক্লোজ শেইডটি কেনার চেষ্টা করবেন। আমি যেটা করি, শেইড সোয়াচের পিকচারটি সেভ করে নিয়ে, সেটা জুম করে, ন্যাচারাল লাইটে আয়নার সামনে নিজের স্কিনের সাথে মিলিয়ে দেখি। এভাবে আমি আমার পারফেক্ট শেইড খুজে পেয়েছি কয়েকবার।
এই তো গেলো ফাউন্ডেশন ব্যবহারের জন্য শেইড ম্যাচিং-এর কথা। এবার একটু ব্যবহারের দিকে আসি। অনেকের অভিযোগ, ফাউন্ডেশন স্কিনে দিলে তা ফেটে ফেটে যায় কিছুক্ষণ পর। এজন্য, আপনাকে ফাউন্ডেশন ব্যবহারের আগে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে নিতে হবে। তবে আর এই সমস্যাটি হবে না।
ফাউন্ডেশন ব্যবহারের জন্য টিপস
অনেককেই দেখি ময়েশ্চারাইজার এবং প্রাইমার ব্যবহারের সাথে সাথেই ফাউন্ডেশন লাগিয়ে নেয়। এটা করা যাবে না। অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার এবং প্রাইমারটা স্কিনে সেট হতে সময় দিতে হবে। এজন্য ময়েশ্চারাইজার এবং প্রাইমারের ৫-১০ মিনিট সময় পর ফাউন্ডেশন লাগাবেন। চলুন এমন আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস জেনে নেই!
১. ফাউন্ডেশন লাগিয়ে অনেকেই হাত দিয়ে ব্লেন্ড করে ফেলে। যার ফলে ফাউন্ডেশন স্কিনে ভালোভাবে বসে না এবং ভেসে ভেসে থাকে। এটি কখনো করবেন না। সবসময় ফাউন্ডেশন ভেজা বিউটি স্পঞ্জ অথবা ব্রাশের সাহায্যে ব্লেন্ড করবেন। সময় নিয়ে ব্লেন্ড করবেন। যত ব্লেন্ড করবেন ফাউন্ডেশন ততো সুন্দর স্কিনে বসবে।
২. সবসময় ফাউন্ডেশন আগে এবং এর পরে কনসিলার ব্যবহার করবেন। কনসিলার যদি ফাউন্ডেশনের আগে ব্যবহার করেন, তবে ফাউন্ডেশন পুরো মুখে ব্লেন্ড করার সময় কনসিলার সরে যেতে পারে। তাই আগে ফাউন্ডেশন লাগাবেন। যেহেতু ফাউন্ডেশন মুখের দাগ, ছোপ অনেকটাই কভার করে নেয়। তাই ফাউন্ডেশনের পর শুধু যেখানে যেখানে আপনার দাগ দেখা যায় সেখানে সেখানেই কনসিলার ব্যবহার করুন।
৩. অনেককেই দেখা যায়, মেকআপ করার পর মুখ এক রকম গলার জায়গা দেখতে অন্যরকম লাগে। এর কারণ, গলায় ফাউন্ডেশন ব্যবহার না করা। যা দেখতে খুবই অদ্ভুত এবং বাজে লাগে। তাই ফাউন্ডেশন লাগানোর সময়টাতে গলায়ও ভালোমতো ব্লেন্ড করে নিবেন।
৪. অনেকে ভাবেন, মুখে একগাদা ফাউন্ডেশন ব্যবহার করলেই যেন সুন্দর লাগবে। এই ধারণা মন থেকে চিরদিনের মতো বিদায় করে দিন। একগাদা ফাউন্ডেশন ব্যবহারে আপনার মুখ শুধু আনন্যাচারালই না কেকিও লাগবে। তাই মুখে যতটুকু ফাউন্ডেশন প্রয়োজন, ঠিক ততটুকুই ব্যবহার করবেন।
৫. ফাউন্ডেশন ব্যবহারের পর তা পাউডার দিয়ে সেট করে নিবেন। কিন্তু কখনোই পাউডার ঘষে ঘষে ব্যবহার করবেন না। তাহলে, নিচের ফাউন্ডেশন সরে যেতে পারে। পাউডার সবসময় ব্রাশে নিয়ে হালকা চেপে চেপে ব্যবহার করবেন।
৬. দিনশেষে অবশ্যই ফাউন্ডেশন এবং মেকআপ রিমুভ করতে ভুলবেন না। আপনি নিশ্চয়ই পরদিন সকালে মুখ ভর্তি ব্রণ নিয়ে উঠতে চান না। তাই ফাউন্ডেশন তুলতে ভালো মানের মেকআপ রিমুভার ব্যবহার করুন।
ফাউন্ডেশন ব্যবহারের জন্য ভালো মানের ফাউন্ডেশন কোথায় পাবেন? শপ.সাজগোজ.কম-এর রাইফেলস স্কয়ার এবং যমুনা ফিউচার পার্কের ব্রাঞ্চ থেকে আপনি নিজে দেখে কিনতে পারবেন অথবা তাদের ওয়েবসাইট থেকে ঘরে বসে অর্ডার করতে পারবেন।
এই তো ছিলো ফাউন্ডেশন ব্যবহারের জন্য কিছু টিপস। আশা করছি এ থেকে ফাউন্ডেশন সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যার সমাধান আপনারা নিজেরাই করতে পারবেন।
আপনি যদি অথেনটিক ফাউন্ডেশন খুঁজে থাকেন, তবে সাজগোজ হতে পারে আপনার জন্য ভালো একটি অপশন। সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ রিয়েছে যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত স্কয়ারে অবস্থিত। আর অনলাইনে কিনতে চাইলে কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে!
ছবি- সংগৃহীত: ইমেজেসবাজার; উইকিহাউ.কম; পশমার্ট.কম