কলা খুব সহজলভ্য একটি ফল। এটি সারাবছরই আমাদের দেশে পাওয়া যায়। এটি যেমন স্বাস্থ্যকর একটা ফল তেমনি চুলের জন্যও খুবই উপকারি। কলায় প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, পটাশিয়াম, প্রাকৃতিক তেল ও ভিটামিন থাকে যা চুলকে মোলায়েম ও ঝলমলে করে। এটি চুলের খুশকি দূর করার পাশাপাশি রুক্ষতা ও চুল পরা কমায়। ত্বক বা চুলের যত্নে কলার ভূমিকাও অনেক।
রূপচর্চায় কলাকে বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করা যায়। হাতের কাছে পাওয়া সহজলভ্য এই উপাদান কীভাবে চুলের যত্নে অসাধারণ কাজ করে জেনে নিয়ে আপনিও হতে পারেন আকর্ষণীয় চুলের অধিকারিণী। আপনি চাইলে শুধু কলা চটকে নিয়ে চুলে ব্যবহার করতে পারেন তবে এর সাথে যদি অন্য কোন উপাদান মিশিয়ে নেন তাহলে তা ফলদায়ক হবে অধিক পরিমাণে। তাহলে চলুন কলার তৈরি কয়েকটি প্যাক এর কথা জেনে নিই।
[picture]
(১) কলা ও মধুর প্যাক
যাদের চুল রুক্ষ হয়ে গেছে তারা কলা এবং মধুর এই প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন। এতে চুলের হারানো উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে। সেই সাথে চুল হবে মোলায়েম। দুটি ভালো পাকা কলা এবং দুই টেবিল চামচ মধু ব্লেন্ডারে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। এবার এই প্যাকটি পুরো চুলে ব্রাশের সাহায্যে লাগিয়ে নিন। শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন। একঘণ্টা পরে চুল ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন। সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করলেই চুল থাকবে ঝলমলে। এই প্যাকটি চুলের ময়েশ্চারাইজার ধরে রাখে এবং চুল ঘন করে।
(২) কলা এবং অলিভ অয়েল
চুলে অতিরিক্ত রঙ করা কিংবা স্ট্রেইটনার ব্যবহারের কারণে যাদের চুল ভঙ্গুর হয়ে গেছে অথবা চুল পড়া বেড়ে গেছে তারা এই প্যাকটি ব্যবহার করলে উপকার পাবেন। এই প্যাক ব্যবহারে চুল মজবুত হবে এবং মোলায়েম থাকবে। একটি পাকা কলা এবং দুই টেবিল চামচ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন। এরপর পুরো মাথায় প্যাকটি লাগিয়ে রাখুন এবং শাওয়ার ক্যাপ পরে নিন। ২০ মিনিট পরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন। অলিভ অয়েলের বদলে নারিকেল তেলও ব্যবহার করা যাবে।
(৩) কলা ও নারকেলের দুধ
পাকা কলার সঙ্গে নারকেল দুধ যোগ করুন। আপনার চুলের উপর এই প্যাকটি প্রয়োগ করুণ এবং ২০ থেকে ২৫ মিনিটের জন্য লাগিয়ে রাখুন। এই প্যাকটি রুক্ষ চুলের মধ্যে ময়েশ্চারাইজার ফিরিয়ে আনে এবং চুলকে করে তুলে নরম। এইপ্যাকের সঙ্গে কফি পাউডার মিশিয়ে নিতে পারেন এতে চুলের মধ্যে একটা প্রাকৃতিক ব্রাউন রং আসবে।
(৪) কলা ও টকদই
খুশকি দূর করতে অর্ধেকটা পাকা কলা চটকে নিন। এর সাথে তিন টেবিল চামচ টক দই ও এক টেবিল চামচ পাতিলেবুর রস মেশান। মিশ্রণটি চুলের গোড়া ও মাথার ত্বকে লাগান। পুরো চুলে লাগাবেন না। ২০-২৫ পর চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। টকদই চুলকে খুসকিমুক্ত এবং মসৃণ করতে সাহায্য করে।
(৫) কলা, ডিম ও লেবুর রস
অনেকের চুল সহজে লম্বা হতে চায় না। কলা কেবল চুলকে লম্বাই করবে না, একই সাথে করে তুলবে নরম ও মোলায়েম। সপ্তাহে অন্তত দুদিন কলার হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন। দুটি চটকে নেয়া কলা, একটি ডিমের কুসুম ও এক চা চামচ লেবুর রস ভালো করে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন।এই প্যাক ভালো করে মাথার ত্বকে ও চুলে মাখুন। একটি প্লাস্টিক দিয়ে মাথা মুড়ে ফেলুন। তাঁর ওপরে একটি তোয়ালে পেঁচিয়ে দিন। এভাবে রাখুন ১ ঘণ্টা। এরপর ভালো করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
(৬) কলা, পেপে ও মধুর প্যাক
প্রোটিন সমৃদ্ধ এই মাস্ক উজ্জ্বলতা বাড়ানোর পাশাপাশি চুল শক্তিশালী করে। একটি পাকা কলা পিষে সঙ্গে চার-পাঁচ টুকরা পাকাপেঁপের মিশ্রণ যোগ করুন। তারপর দুই চা-চামচ মধু নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। সম্পূর্ণ চুল ও মাথার ত্বকে মিশ্রণটি লাগান। সব চুল উঁচু করে পেঁচিয়ে নিন এবং একটি টুপির সাহায্যে চুল ঢেকে রাখুন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে প্রথমে হালকা গরম পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। তারপর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
রূপচর্চার পাশাপাশি প্রতিদিন একটি করে কলা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি। গবেষণা অনুসারে, কলাতে রয়েছে ট্রিপ্টোফ্যান নামক এক ধরনের প্রোটিন যা মানুষের ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করে। কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম এবং খুব কম পরিমাণে লবন যা ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক। এছাড়াও কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের প্রোডাকশন বাড়িয়ে দেয়।
দেখলেন তো সাধারণ কলার কতো অসাধারণ গুণ? তাই আপনার খাদ্যতালিকায় প্রতিদিন কলা রাখুন এবং এর তৈরি প্যাকগুলো ব্যবহার করে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠুন সবার কাছে।
ছবি – লিভস্ট্রং ডট কম
লিখেছেন – নায়মা আক্তার