পড়ালেখা, চাকরি, ব্যবসা থেকে শুরু করে যে কোনো কাজে আমরা সবাই ভালো ফলাফলেরই প্রত্যাশা করি। সব মানুষের জন্যই প্রতিদিন ২৪ ঘন্টা সময় বরাদ্দ থাকে। একটু খেয়াল করলে দেখবেন, সবাই কিন্তু এক রকমভাবে সফলতা পায় না! একই সময়ে কেউ একজন অনেক বেশি কাজ করে ফেলে, আবার কেউ কেউ কোনো উন্নতিই করতে পারেনা। এর মূল কারণ হলো, প্রোডাক্টিভিটির পার্থক্য। আমাদের আজকের ফিচার কীভাবে আপনারা কর্মক্ষেত্রে প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে পারবেন তার কিছু ইফেকটিভ টিপস অ্যান্ড ট্রিকস নিয়ে।
সারাদিন কাজ করাই কি প্রোডাক্টিভিটি?
সারাদিন ধরে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে অনেক কাজ করার নাম প্রোডাক্টিভিটি নয়। এটি একটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা। মূলত প্রোডাক্টিভিটি হলো, আপনি আপনার সময়কে কীভাবে সর্বোত্তম উপায় কাজে লাগাতে পারবেন তার পরিমাপ। একটি বহু প্রচলিত প্রবাদবাক্য রয়েছে, “ভাবিয়া করিও কাজ,করিয়া ভাবিও না”… এটিই আসলে প্রোডাক্টিভিটির প্রকৃত অর্থ।
আমরা অনেক সময়ই হুটহাট কিছু কাজ করে ফেলি যার কারণে পরে আফসোস হয় যে, আগে থেকেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করলে হয়তো ভালো ফল পাওয়া যেতো। এইযে সবচেয়ে ভালো ফলাফল পেতে কাজের জন্য পরিকল্পনা করে সে অনুযায়ী কাজ করা এটাই মূলত প্রোডাক্টিভিটি।
কর্মক্ষেত্রে প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর কিছু টিপস
এবারে তবে চলুন জেনে নেই, নিজের প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর দারুণ কার্যকরী সেই টিপস অ্যান্ড ট্রিকস গুলো!
মাল্টিটাস্কিং কে না বলা
নিজেকে কর্মক্ষেত্রে প্রোডাক্টিভ করতে হলে আপনার প্রথম যে বিষয়টি মাথায় রাখা জরুরি তা হলো, মাল্টিটাস্কিং বন্ধ করা। মাল্টিটাস্কিং মূলত একই সাথে বিভিন্ন কাজ করার প্রবণতা। সারাদিন আমরা অনেক ধরনেরই কাজ করে থাকি। কিন্তু আমাদের ব্রেইন আর ফিজিক্যাল অ্যাবিলিটি একইসাথে অনেক ধরনের কাজ করতে সক্ষম থাকে না। এ কারণে যখনই একসাথে ৩-৪ টি কাজ করা হয়, তখন কোনো কাজই আপনি সঠিকভাবে করতে পারেন না।
মাল্টিটাস্কিংয়ের কারণে আপনার সময় অপচয় হয় এবং একটি কাজ শেষ করতে প্রয়োজনের চেয়ে দীর্ঘ সময় দিতে হয়। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে যে পরিমাণ কাজ করার কথা ছিলো, সে পরিমাণ কাজ আপনি কোনোভাবেই করতে পারবেন না। তাই প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে যে কাজ করা শুরু করবেন তা আগে সম্পূর্ণ শেষ করুন এবং তারপর অন্য কাজ করা শুরু করুন।
টু ডু লিস্ট বা কাজের তালিকা করা
পরিকল্পিত ভাবে কাজ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি প্রোডাক্টিভ থাকার ক্ষেত্রে। এতে করে যেমন কাজের ট্র্যাক রাখতে সুবিধা হয়, তেমনি দেখা যায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সব কাজ শেষ হয়ে গেছে। এর জন্য প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনি পরের দিনে অফিসে কী কী করবেন তার টু ডু লিস্ট করে নিতে পারেন। এই কাজের তালিকাটি আপনাকে যে কাজগুলো শেষ করতে হবে সে সম্পর্কে ধারণা দেবে। এতে করে আপনি কাজগুলো সুন্দরভাবে ভাগ করে নিতে পারবেন। এর ফলে দেখবেন আপনার অযথা সময় নষ্ট হচ্ছে না এবং প্রতিটা কাজ আপনি সঠিকভাবে মনোযোগের সাথে করতে পারছেন।
কাজ অনুযায়ী সময় ভাগ করে নেওয়া
প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে প্রতিটি কাজ করার জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা একটি কার্যকরী পদ্ধতি। কোনো একটা কাজ আপনি কত সময়ের মধ্যে শেষ করবেন তা নির্ধারণ করে আপনার কাজের সময়কে ভাগ করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে কাজের ধরন অনুযায়ী সময় ভাগ করে নেওয়ার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনি কোন কাজে কতটুকু সময় লাগছে তা ট্র্যাক করতে পারবেন। এই ট্রিকটি ফলো করলে আপনার কাজের জন্য একটা মোটিভেশন তৈরি করবে এবং এই মোটিভেশনই কর্মক্ষেত্রে আপনার প্রোডাক্টিভিটি বাড়াবে।
কাজের মাঝে ব্রেক নেওয়া
বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুযায়ী, একজন মানুষ একটানা প্রায় ২৫-৪০ মিনিট পর্যন্ত কোনো একটি বিষয়ে মনোযোগী থাকতে পারে। এরপর তার মনোযোগ কমে যেতে শুরু করে এবং সে তখন অন্য কিছু করতে চায়। এই বিষয়টিকে বলা হয় “ফোকাস ডেডলাইন”। একটা কাজ লম্বা সময় ধরে করলে, শেষের দিকে আপনার প্রোডাক্টিভিটি কমতে থাকবে। তাই কর্মক্ষেত্রে প্রোডাক্টিভ থাকতে হলে কাজের মধ্যে নিয়মিত বিরতি নেওয়া জরুরি। কোনো কাজ করার মধ্যে প্রতি ২০-৩০ মিনিট পর পর ৫ থেকে ১০ মিনিটের বিরতি নিলে তা মনোযোগের ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। তবে হ্যাঁ, অতিরিক্ত বিরতি নেওয়া যাবে না কারণ তাতে করে কাজের জায়গায় আপনার প্রতি সহকর্মীদের বিরূপ মনোভাব তৈরি হবে।
কাজের রিভিউ করা
নিজের কাজের রিভিউ নিজেই করা খুব জরুরি প্রোডাক্টিভিটি ধরে রাখার ক্ষেত্রে। একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, সেটি হলো আপনি নিজেই আপনার সবচেয়ে বড় সমালোচক। আপনি নিজের ব্যাপারে যেভাবে বিশ্লেষণ করতে পারবেন তা অন্য কেউ কিন্তু পারবে না। তাই আপনি নিজেই আপনার সবচেয়ে বড় বিচারক হয়ে উঠুন। এতে করে যা হবে সেটি হলো, রিভিউয়ের সময় আপনার কাজের মধ্যে কোনো গ্যাপ থেকে থাকলে সেটা আপনি নিজেই খুঁজে বের করে ঠিক করে নিতে পারবেন। যা আপনার কাজের মান বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে। ফলে যেকোনো কাজ করে আপনি সন্তুষ্ট থাকতে পারবেন। তাছাড়াও যখন দেখবেন আপনার কাজের গুণগত মান ভালো হচ্ছে, তখন আপনি একজন দক্ষ কর্মী হয়ে উঠবেন আর সর্বোচ্চ প্রোডাক্টিভিটি নিশ্চিত করতে পারবেন। সুতরাং নিজের কাজের রিভিউ নিজেই করুন। চাইলে জার্নালিং করতে পারেন বা ফোনের নোটপ্যাডে নিজের অগ্রগতি সম্পর্কে লিখতে পারেন।
পর্যাপ্ত ঘুমানোর বিকল্প নেই
প্রোডাক্টিভ থাকতে হলে আপনার ব্রেইন ও মনকে ফ্রেশ রাখা জরুরি। আর এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ঘুমের কোনো বিকল্প নেই! কর্মব্যস্ত দিনের শেষে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান। তবে এই পর্যাপ্ত ঘুমের পরিমাণ নিয়ে নানান ধরনের মতবাদ আছে। কেউ বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৮ ঘণ্টা ঘুম দরকার আবার কেউ বলেন যে ৬ ঘণ্টা ঘুম যথেষ্ট। মূলত শারীরিক পরিশ্রম ভেদে ঘুমের পরিমাণ নির্ধারন করা যেতে পারে। তবে চিকিৎসকরা ৮ ঘণ্টা ঘুমানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
তো এই ছিলো কর্মক্ষেত্রে প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর টিপস সম্পর্কিত আজকের আলোচনা। আলোচিত টিপস অ্যান্ড ট্রিকসগুলো সঠিক ভাবে মেনে চলতে পারলে প্রোডাক্টিভিটি বাড়িয়ে কর্মক্ষেত্রে নিজেকে অন্যতম করে তোলা সম্ভব।
লিখেছেনঃ নূরী শাহারীন
ছবিঃ সাটারস্টক, সাজগোজ