রেমি মার্কেজ, নেপলিয়ন সি কিস আর ড্রিম মোর– এ তিনটি হল আমার জীবনে উপহার পাওয়া ৩টি শ্রেষ্ঠ সুগন্ধি। অসাধারণ সুরভি আর অদ্ভূত সুন্দর বোতল- দু’টোই খুব আকর্ষণীয়! আর সুগন্ধিগুলো ব্যবহারের পরেও বলাই বাহুল্য, একটা অন্যরকম সতেজতা কাজ করে ভেতরে, যার ছাপ পড়ে আমার কাজ-কর্মে এবং পরিবেশেও। কেউ যখন সুগন্ধির খুব প্রশংসা করে, তখন বোঝা যায় সুগন্ধিগুলোর মহিমা! কথা বলব এই সুগন্ধি ব্যবহারের আদবকেতা নিয়ে।
আসলে সুগন্ধি হল ব্যক্তিত্বেরই একটি অংশ। আপনি সুগন্ধি ব্যবহারের আদবকেতা যত ভালো রপ্ত করতে পারবেন, আপনার ব্যক্তিত্বও তত অসাধারণ হয়ে ফুটে উঠবে। আমার মতো অনেকেই হয়তো আছেন, যারা সুগন্ধির খুব বড় ফ্যান। তাদেরকেই বলছি, সুগন্ধি ব্যবহারের আদবকেতা সঠিকভাবে মেনে চলছেন তো? সুগন্ধির ভুলভাল ব্যবহারে অন্যের সামনে অস্বস্তিতে পড়ছেন নাতো আবার? চলুন জেনে নেই পারফিউম ব্যবহারের ৭টি টিপস।
সুগন্ধি ব্যবহারের আদবকেতা
১. নিজের পছন্দেই চলুন
আপনি ব্যক্তিজীবনে যেমন আছেন, সুগন্ধি নির্বাচনের ক্ষেত্রেও সেরকমই প্রাধান্য দিন। যেকোনো সময় ও অভিজ্ঞতায় আপনি আসলে কেমন এবং কী ভালবাসেন, এটা জানা থাকলে মনে আনন্দের সঞ্চার ঘটে। সুগন্ধি নির্বাচনের ক্ষেত্রেও তা ব্যতিক্রম নয়।
নিজেকে প্রশ্ন করুন, “আপনি কি সতেজতা ও নির্মলতা ভালবাসেন?” “আপনি কি মিষ্টি অথবা ফুলেল কোনকিছু ভালবাসেন?” “আপনি কি তীব্র ও ঝাঁঝালো কিছুকে ভালবাসেন?” তাহলে এমন কোন সুগন্ধির ব্র্যান্ডকে বেছে নিন, যা আপনার ব্যক্তিত্বকে জাগিয়ে তুলবে এবং আপনার আশেপাশে থাকা মানুষজনও তার আঁচ পাবে । শুধুমাত্র উপহার হিসেবে পেয়েছেন বলে অথবা বন্ধুকে দেখে উৎসাহিত হয়েই একটি ব্র্যান্ড হুট করে কিনে ফেলবেন না । নিজে যেটা ব্যবহার করে তৃপ্তি পাবেন বলে মনে করেন, সেটিই বেছে নিন।
২. নিজের ওপর পরীক্ষা করুন
সুগন্ধির সর্বশেষ উপাদান হল দৈহিক রসায়ন। অন্য কারো দেহে যে গন্ধ ভাল লাগে, আপনার দেহে তা নাও লাগতে পারে, এমনকি সে আপনার মা কিংবা বোন হলেও। আমাদের প্রত্যেকের দেহই আলাদা আলাদা রসায়নে তৈরি।
আর ঠিক সে কারণেই বিশেষ একটি সুগন্ধি অন্যের দেহে যেভাবে কাজ করে, আপনার দেহে তা সেভাবে করবে না। কাজেই সুগন্ধি কেনার আগে নিজের ত্বকের ওপর পরীক্ষা করুন। অন্তত ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন ফলাফলের জন্যে। ২০ মিনিটের চেয়ে বেশি সময় না লাগলে এটিই আপনার জন্যে পারফেক্ট সুগন্ধি!
৩. চুলে সুগন্ধি লাগাবেন না
সুগন্ধি বিশেষজ্ঞ সারাহ হরোউইটযের মতে, “অনেক সুগন্ধি ব্যবহারকারীরাই চুলে সুগন্ধি মাখেন দীর্ঘসময় ধরে সুগন্ধ পাবার জন্য। এটি করবেন না! কারণ, বাজারের বেশিরভাগ সুগন্ধিতেই অ্যালকোহল থাকে, আর অ্যালকোহল চুলকে শুষ্ক করে তোলে। যদিও চুল আমাদের ত্বকের তুলনায় সুগন্ধি ভাল ধরে রাখতে পারে। কারণ, দৈহিক তাপের কারণে সুগন্ধি আমাদের ত্বকে বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। যদি আপনি চুল থেকেও আপনার প্রিয় সুগন্ধির মতো সৌরভ পেতে চান, তাহলে চুলে ভাল করে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনিং করে নিন। এরপর দু’হাতে সুগন্ধি মেখে তালি দিন, যাতে অ্যালকোহলটুকু হাতের তাপে পুড়ে উধাও হয়ে যায়। এরপর চুলের ভেতর আঙ্গুল চালিয়ে দিন!”
৪. সুগন্ধি কাপড়ে লাগাবেন না
আমরা সাধারণত জামা-কাপড়ের ওপরেই সুগন্ধি লাগিয়ে নিই। আসলে কিন্তু এতে কোন লাভই নেই! কারণ, একটু পরই এ গন্ধ মিলিয়ে যায়, তা সে যত বিখ্যাত ব্র্যান্ডেরই হোক না কেন।
সুগন্ধি মাখার নিয়ম হল, আপনার চারপাশে স্প্রে করে কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে থাকুন, সুরভি আপনার গায়ে মেখে থাকবে। আর তাছাড়া হাতের কবজি, কানের লতি ও ঘাড়েও একটু স্প্রে করে নিতে পারেন। তাহলে গন্ধটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়।
৫. প্রলেপ দিন
দিনভর সুগন্ধ ধরে রাখার সবচেয়ে ভাল উপায় হল প্রলেপন। অর্থাৎ, গোসলে সুগন্ধি বডি ওয়াশ ব্যবহার করুন, বডি লোশান অথবা বডি অয়েল দিন সৌরভ আরেকটু বাড়ানোর জন্য ও সেই সাথে আর্দ্রতার জন্য। এরপর আপনার পালস-পয়েন্টগুলোতেও একটু বডি অয়েল মাখান এবং ফিনিশিং টাচ হিসেবে সুগন্ধি লাগিয়ে নিন। ব্যস, সারাদিনের জন্য আপনি সতেজ, সুরভিত!
৬. অতিরিক্ত সুগন্ধি মাখবেন না
অতিরক্ত সুগন্ধি মাখার অভ্যাস থেকে থাকলে তা এখনই পরিত্যাগ করুন। কারণ, আপনার সুগন্ধির ঝাঁঝ অন্যের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ালে তা আপনার ব্যক্তিত্বের জন্য ক্ষতিকর।
৭. বদলে নিন
আপনি হয়তো সবসময় একই ধরনের সুগন্ধি ব্যবহার করে অভ্যস্ত অথবা আপনার ড্রেসিং টেবিল হয়তো ভরে আছে নানা ধাঁচের সুগন্ধি দিয়ে। যেটাই হোক, এটা খুবই মজার একটি বিষয় এবং এর মাধ্যমেই প্রতিফলন ঘটছে আপনার ব্যক্তিত্বের, আপনার মুডের। সারাহ হরোউইটয পরামর্শ দিয়েছেন হালকা গন্ধের সুগন্ধিগুলোকে দিনের বেলায় এবং কড়া ও ঝাঁঝালো সুগন্ধি রাতে ব্যবহার করতে অথবা বদলে নিতে পারেন ঋতু ও আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথেও। কারণ আপনার সুগন্ধি হল আত্মপ্রকাশের সবচেয়ে শক্তিশালী ও স্মরণীয় মাধ্যম । মুড বুঝে সুগন্ধি ব্যবহার করুন এবং ফলাফলটিও উপভোগ করুন !
আপনার পছন্দের সুগন্ধির ব্র্যান্ড তাহলে কোনটি ? শেয়ার করুন আমাদের সাথে !
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ, সাটারস্টক