হবু মায়ের রূপচর্চা - Shajgoj

হবু মায়ের রূপচর্চা

pregnant woman

মা হওয়ার আনন্দ আশঙ্কা দুইই আছে। অনেকেই এই অবস্থায় এসে নিজেদের রূপচর্চার বিষয়টি ভুলে যান। অনাগত সন্তানের প্রতি তাদের এতটাই দুর্বলতা থাকে যে যিনি রূপচর্চা ও স্বাস্থ্য চর্চার জন্য আগে বিউটি পার্লার ও জিমে যেতেন তাও যেতে চান না। কিন্তু এই সময় থাকতে হবে সদা প্রফুল্ল। রূপের দ্যুতি যেন একটুও না কমে তার খেয়ালও রাখতে হবে। বিশেষ করে যারা চাকরি করেন বা কোনও বিশেষ পেশার সঙ্গে যুক্ত আছেন তাদের তো রোজই বের হতে হয়। তাই রূপচর্চাকে এই সময় মোটেও হেলাফেলা করবেন না।

  • গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট সময় বের করে নিন সম্পূর্ণ রিলাক্স করার জন্য। এতে আপনার রূপ ও লাবণ্য দুইই বাড়বে।
  • চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে সোজা হয়ে বসুন। একটা সুন্দর দৃশ্যের কথা ভাবুন যা অবচেতন মনে আপনাকে শান্তি দেয়। এবার আস্তে আস্তে পা থেকে শুরু করে পেট, পিঠ, ঘাড়, গলা ও মুখের মাসল গুলো শিথিল করে ছেড়ে দিন। শুধু নাক দিয়ে নিঃশ্বাস টানুন আর ছাড়ুন। এভাবে প্রতিদিন ৫-৭ মিনিট করুন।
  • নাক দিয়ে খুব গভীরভাবে ধীরে ধীরে শ্বাস টানুন এবং মনে মনে চার পর্যন্ত গুনুন। এটা ১০ মিনিট করুন। মর্নিং সিকনেস কাটিয়ে উঠতে এটি দারুণ কার্যকর।
  • গর্ভাবস্থায় একটি সমস্যা হল স্ট্রেচ মার্ক। গর্ভস্থ সন্তানের বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তলপেটের ত্বকের ওপর টান পড়ে ও এরকম দাগের সৃষ্টি হয়। এই দাগ সম্পূর্ণ মিলিয়ে যায়না, তবে সন্তান জন্মের পর আস্তে আস্তে দাগ গুলো ফেড হয়ে আসে। তবে ২০ সপ্তাহের পর থেকে গোসলের আগে ও রাতে শুতে যাবার সময় ভিটামিন ই যুক্ত যেকোনো ক্রিম হালকা করে তলপেটে মাসাজ করবেন। এতে পরবর্তীতে জায়গাগুলোতে চুলকাবে না।
  • পিগমেনটেশন এসময়ের আরেকটি সমস্যা। যার ফলে গালে আর কপালে এক ধরনের ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়। শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার কয়েক মাস পরেই এই দাগ চলে যায়। তবে দাগের জন্য কোনোরকম ব্লিচ ব্যবহার না করাই ভালো।
  • এবার আসি মেকাপ প্রসঙ্গে। কী ধরনের কসমেটিকস ব্যবহার করা উচিত না এ বিষয়ে সাজগোজে আগেও বলা হয়েছে। বাইরে বের হওয়ার সময় দিনের বেলা হালকা কমপ্যাক্ট বা ফেস পাউডার বুলিয়ে নিন। দাগ ছোপ ঢেকে নিন কন্সিলার দিয়ে। দিনের বেলা এস পি এফ যুক্ত সানস্ক্রিন লাগাবেন অবশ্যই। কোন দাওয়াতে গেলে হালকা মেকাপ করুন। এই সময়ের স্বাভাবিক সৌন্দর্যটাই ফুটে উঠতে দিন। লাল, কমলা মেরুন এর বদলে বেছে নিন গোলাপি শেডের লিপস্টিক। এড়িয়ে চলুন চড়া মেকাপ, উঁচু হিল।
  • এই সময়ে চুলের বৃদ্ধি অন্য সময়ের তুলনায় বেশি হয় হরমোনের প্রভাবে। তাই ২ মাস অন্তর চুল ত্রিম করিয়ে নিন। যাদের চুলে নিয়মিত তেল দেওয়ার অভ্যাস আছে তারা গোসলের পর বাতাসে চুল শুকিয়ে নিন। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে কারলার, রোলার, আয়রন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। একদিন পর পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন ও সপ্তাহে ২ দিন, না পারলে অন্তত ১ দিন কন্ডিশনার ইউজ করুন।

বিশেষ টিপসঃ

Sale • Bath Time, Day & Night Cream, Day/Night Cream

    এই সময় ঘটা করে রূপচর্চা করার মতো অবস্থা অনেকেরই থাকেনা। তাই নিজে ঘরে স্ক্রাব তৈরি করে নিন আর গোসলের সময় প্রতিদিন ব্যবহার করুন। এই স্ক্রাব এক দেড় মাস পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন। বার বার বানানোর ঝক্কিও সামলাতে হবেনা।

    • মুলতানি মাটি ১/২ কাপ
    • শুকনো কমলা লেবুর খোসার গুঁড়ো ১/২ কাপ
    • চন্দন গুঁড়ো ১/২ কাপ

    এগুলো একসঙ্গে মিশিয়ে ছোট কাঁচের জারে ভরে রেখে দিন। প্রতিদিন এই স্ক্রাব পানির সঙ্গে পেস্ট করে নিয়ে মুখে গলায় ও ঘাড়ে মাখবেন ১৫ মিনিট এর জন্য। এর পর গোসল করে ফেলবেন। আলাদা করে আর কোনও প্যাক লাগানোর প্রয়োজন হবেনা এতে।

    এই সময় শরীর ও ত্বকের  ময়েশ্চার এর ঘাটতি হয়। প্রতিদিন গোসলের পর ও রাতে ঘুমাতে যাবার আগে অবশ্যই মুখে হাতে পায়ে ও পেটে ভালো করে ময়েশারাইজার লাগিয়ে তারপর ঘুমাবেন। শুরু থেকেই এটি করলে ত্বকের কালচে ভাব কমে যাবে অনেকটাই।

    মাসে অন্তত একবার পার্লারে যেতে পারেন ফ্রুট ফেসিয়ালের জন্য। তবে সেখানেও অবলম্বন করতে হবে সাবধানতা। ফেসিয়াল করার সময় ঝুঁকে কখনো স্টিম নেবেন না। হট টাওয়েল দিয়ে স্টিম নিবেন। ক্লান্তি দূর করানর জন্য হাত পা মাসাজ করাতে পারেন। পার্লারে না পারলে বাসাতেই করে নিন ম্যানিকিউর।

    প্রতিদিনের ত্বকের যত্নেঃ

    • একটা ছোট গাজর কুরিয়ে নিন। আধা চামচ মধু মেশান। ১৫ মিনিট এর জন্য মুখে লাগান। গাজরের বিটা ক্যারোটিন আপনার ত্বকে পুষ্টি জোগাবে। প্রতিদিন একটা গাজর খেলেও একই কাজ করবে।
    • ২ টেবিল চামচ শশার রস আর মুলতানি মাটির পেস্ট তৈরি করুন। ত্বকের যেসব জায়গায় কালো ছোপ পড়েছে সেখানে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে এক মগ পানিতে ছোট একটা লেবুর রস চেপে সেই পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
    • সপ্তাহে অন্তত একদিন ভালো করে চুলে অলিভ অয়েল মাসাজ করুন। আরাম পাবেন। চাইলে হট টাওয়েল দিতে পারেন ১০ মিনিট।

    যা যা করবেন নাঃ

    • শরীরের কোন অংশে ব্লিচ ব্যবহার করবেন না। কারণ ব্লিচে যে সল্ট ব্যবহার করা হয় তা থেকে অ্যালার্জি হতে পারে।
    • ভেজ পিল, গ্যালভানিক, ওজোন এসব ট্রিটমেন্ট করা থেকে বিরত থাকুন। যেহেতু এগুলো ইলেকট্রিকে চলে, তাই দুর্ঘটনাবশত শক লেগে গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতি হতে পারে। মোট কথা ইলেকট্রিক মেশিন ব্যবহার করা হয় এমন যেকোনো পার্লার সার্ভিস না নেওয়াই উত্তম।
    • মাথায় মেহেদি দিলে ১ ঘণ্টার বেশি রাখবেন না। লম্বা সময় রাখলে ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে।
    • চুলে কালার করাবেন না। কারণ এতে যে ডেভেলপার ইউজ করা হয় তা মাথার ত্বক ভেদ করে রক্তে মিশে গিয়ে গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতি করতে পারে। একইভাবে চুল রি বন্ড করা থেকেও বিরত থাকুন। এর কড়া কেমিক্যাল শিশুর পক্ষে ক্ষতিকারক।
    • ফুল বডি মাসাজ করাবেন না। অসাবধানতায় পিঠে বা পেটে আঘাত লেগে যেতে পারে। প্রয়োজন মনে হলে শুধু হাত-পা করাবেন।

    এই নিয়মগুলো ঠিক মতো মেনে চললেই আপনি এই সময়টাতেও থাকবেন আত্মবিশ্বাসী, লাবণ্যময়ী আর হয়ে উঠবেন অপরূপ সুন্দরী এক মা।

    লিখেছেনঃ চৌধুরী তাহাসিন জামান

    ছবিঃ দ্যহান্সইন্ডিয়া.কম

    26 I like it
    0 I don't like it
    পরবর্তী পোস্ট লোড করা হচ্ছে...

    escort bayan adapazarı Eskişehir bayan escort