খুশকি ও চুল ঝরে পড়া খুব সাধারণ একটা সমস্যা। কম বেশি সকলেই আমরা এই প্রব্লেম দুটির ভুক্তভোগি। নানান কারণে এই সাধারণ কিন্তু বিরক্তিকর সমস্যার মুখোমুখি হই আমরা। অতিরিক্ত প্রসাধনীর ব্যবহার, স্কাল্পের অতিরিক্ত শুষ্কতা, অতিরিক্ত তৈলাক্ততা, বাহ্যিক দূষণ, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ইত্যাদি নানা কারণেই সমস্যা দুটির উদ্ভব ঘটে। কিন্তু সমস্যা থাকলে তার সমাধান ও থাকবে। ঠিকঠাক মত যত্ন নিলে খুশকি আর চুল পড়া রোধ করা দুটোই সম্ভব। আজ আমরা জানবো খুশকি তাড়াতে ও চুল পড়া রোধে ৭টি কার্যকর ঘরোয়া উপায়। যার যেটা ভালো লাগে সে সেই পদ্ধতি ফলো করে উপকার পাবেন আশা করি। এখানে আরেকটা কথা বলে রাখা ভালো যে, অনেকেরই অনেক জিনিসে অ্যালার্জি থাকে। তাই যেকোন পদ্ধতি ফলো করার আগে দেখে নিবেন যে ওই উপকরণে কোন সমস্যা হতে পারে কিনা। আরো একটা কথা হল, এক সাথে একাধিক পদ্ধতি ফলো না করাই ভালো। যেকোন একটি পদ্ধতিই ধৈর্য্য ধরে অনুসরণ করতে হবে।
খুশকি তাড়াতে ও চুল পড়া রোধে কিছু ঘরোয়া উপায়
১. নিমপাতা
অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদানসমৃদ্ধ নিম পাতা শুধু যে খুশকি দূর করে তাই-ই না এর সাথে এটি মাথার ত্বকের আরো নানা সমস্যার হাত থেকেও রক্ষা করে।যেমন মাথার ত্বকের ফুস্কুড়ি, চুলকানি,ফাঙ্গাস ইনফেকশন, অতিরিক্ত চুল পড়া।
চার কাপ পানিতে এক মুঠো নিম পাতা দিয়ে পানিটুকু ফুটাতে হবে। পানি ফুটে উঠলে নামিয়ে ঠান্ডা করে ছেঁকে নিতে হবে। সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার এই নিমের পানি শ্যাম্পু করার পর মাথায় ঢেলে দিয়ে খানিকক্ষণ পরে মাথা মুছে ফেলতে হবে। যদি এভাবে ভালো না লাগে তাহলে নিম পাতা বেটে মাথায় দেয়া যায়। সেক্ষেত্রে এক ঘণ্টা রেখে মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে।
২. নারিকেল তেল
নারিকেল তেলের মধ্যে থাকা অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান খুশকি তাড়াতে সক্ষম। একই সাথে এটি মাথার শুষ্কতা দূর করে মাথা আর চুল ময়েশ্চারাইজ করে চুল পড়া কমিয়ে দেয়। একটি বাটিতে খানিকটা তেল নিয়ে এতে একটা লেবুর অর্ধেকটা রস মিশাতে হবে। এবার তেলটা ভালো করে মাথায় লাগিয়ে কয়েক মিনিট ম্যাসাজ করতে হবে। আধা ঘণ্টা পর মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার করতে হবে।
আরেকটি উপায়, দুই টেবিল চামচ ভিনেগার নিন। এর সাথে মিশান সম-পরিমান পানি ও ১৫-২০ ফোটা টি ট্রি অয়েল। ভালো করে মিশিয়ে মাথায় লাগিয়ে মিনিট কয়েক পরেই মাথা শ্যাম্পু করে ফেলুন। ন্যাচারাল এই পদ্ধতিটি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ফলো করুন।
৩. সাদা সিরকা
সাদা সিরকা যাকে হোয়াইট ভিনেগারও বলা হয় এটি খুশকি তাড়ানোর অতি কার্যকর ঘরোয়া একটি উপকরণ। দুই কাপ নরমাল পানিতে অর্ধেক কাপ সাদা সিরকা মিশিয়ে এটি শ্যাম্পু করার পর ফাইনাল রিন্স হিসেবে মাথায় ঢেলে দিতে হবে। অথবা অন্যভাবে চাইলে তিনভাগ পানির সাথে দুই ভাগ সাদা সিরকা ও একভাগ অলিভ অয়েল মিশিয়ে এই মিক্সার মাথায় দশ মিনিট ম্যাসাজ করে মাথা মাইল্ড কোন শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে একবার অথবা দুইবার করাই যথেষ্ট।
৪. অলিভ অয়েল
খানিকটা এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল তেল নিয়ে তা সামান্য গরম করে নিন। এবার তেলটা মাথায় দিয়ে ম্যাসাজ করে একটা তোয়ালে গরম পানিতে খানিকক্ষণ ভিজিয়ে সেই তোয়ালে দিয়ে মাথা ও চুল মিনিট কুড়ি মুড়িয়ে রেখে শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে। এটি চুল ও মাথার ত্বক ময়েশ্চারাইজ করে খুশকি দূর করে চুল পড়া কমিয়ে দেয় একদমই। সপ্তাহে কয়েকবার করা যাবে এই পদ্ধতি।
৫. টি ট্রি অয়েল
অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান সমৃদ্ধ এই তেলটি খুশকি দূরীকরণে অত্যন্ত কার্যকর। কয়েক ফোটা তেল গোসল করার সময় রেগুলার শ্যাম্পুর সাথে মিশিয়ে মাথায় লাগিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। এছাড়া, কয়েক ফোটা নারিকেল তেল অথবা অলিভ অয়েল এর সাথে মিশিয়ে মাথায় লাগিয়ে সম্ভব হলে পুরা রাত আর তা না হলে গোসলের আধা ঘণ্টা আগে মাথায় লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার কি দুইবার করুন।
৬. লেবুর রস
লেবুর রস খুশকি দূরীকরণে আরেকটি ইফেক্টিভ উপাদান। এতে থাকা এসিড খুশকি তৈরিকারি ফাঙ্গাসের সাথে লড়ে এবং মাথার প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। ফলে চুল পড়াও কমে যায় উল্লেখযোগ্য হারে। কোয়ার্টার কাপ প্লেইন ইয়োগার্ট এর সাথে আধাটা লেবুর রস মিশিয়ে মিশ্রণটা মাথায় দিয়ে বিশ মিনিট রেখে মাথা শ্যাম্পু করে ফেলুন। খুশকি তো দূর হবেই সাথে সাথে চুল পড়া যেমন কমবে তেমনি চুল হবে ঝলমলে মসৃণ।
৭. মেথি
মেথিতে আছে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ও সুদিং প্রপার্টিজ যা খুশকি কমায় উল্লেখযোগ্যভাবে। দুই বা তিন টেবিল চামচ মেথি সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে সকালে ভালো করে বেটে এর সাথে কয়েক চামচ প্লেইন ইয়োগার্ট মিশিয়ে পুরো মাথায় লাগিয়ে কয়েক ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন। আপনি চাইলে শুধু মেথিও দিতে পারেন। সপ্তাহে একবার কি দুবার করুন।
বিঃ দ্রঃ উপরে উল্লেখিত প্রত্যেকটি উপায়ই ন্যাচারাল পদ্ধতি। তাই এসব পদ্ধতি কাজ করতে একটু সময় নিবে। ধৈর্য্য ধরে নিয়ম করে যে কোন একটা পদ্ধতি ফলো করলেই আপনি আপনার খুশকি তাড়াতে ও চুল পড়া সমস্যার সমাধান করে ফেলতে পারবেন। এছাড়া সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকবেন। ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করবেন ও পানি খাবেন যথেষ্ট পরিমানে। আর চুলের স্টাইলিং প্রোডাক্ট কম ব্যবহার করবেন কারণ এতে চুলের ক্ষতি হয় অনেক।
ছবি – সংগৃহীতঃ সাটারস্টক