সাদা রঙের যেকোনও খাবারই কার্বোহাইড্রেটের উৎস। হয়ত কিছুদিন পর আপনি বিয়ের পিঁড়িতে বসতে যাচ্ছেন বা আপনি স্পেশাল অকেশনের জন্য আপনার শরীরের অতিরিক্ত মেদ দ্রুত ঝরিয়ে ফেলতে চান তাহলে ডানে বামে না তাকিয়ে শুধু ৭ দিনের কার্ব ফ্রি ডায়েট প্ল্যানটি অনুসরণ করুন। কিভাবে কি করবেন এ নিয়েই আজ আপনাদের জানাবো।
৭ দিনের কার্ব ফ্রি ডায়েট প্ল্যান
আপনি যদি দৈনন্দিন খাদ্য তালিকা থেকে সাদা জাতীয় খাবার যেমন ভাত, আটা , ময়দা, চিনি, অতিরিক্ত লবণ ত্যাগ করতে পারেন তবে খুবই কম সময়ের মধ্যে আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌঁছে যেতে পারবেন।
৭ দিনের কার্ব ফ্রি ডায়েট করার উপকারিতা
১. ওজন কমানো– মানুষের শরীরে শক্তি অর্জনের জন্য কার্বোহাইড্রেট বার্ন হয়। কিন্ত যখন আপনি কার্ব ফ্রি ডায়েট শুরু করেন তখন শরীর কার্বোহাইড্রেটের বদলে ফ্যাট বার্ন হয় এনার্জির জন্য।
২. পারফেক্ট শেইপ– যেহেতু কার্বোহাইড্রেটের বদলে ফ্যাট বার্ন হয় সেহেতু আপনি লক্ষ্য করবেন যে আপনার পেট, থাই, কোমর সুন্দর গঠন ধারণ করে। এর সাথে যদি আপনি ব্যায়াম করেন তাহলে আপনার মাসেল সুগঠিত হবে।
৩. সুস্থ সবল দেহ- কার্ব ফ্রি ডায়েটের দরুন আপনি স্বাস্থ্য সম্মত খাবার খাওয়া শুরু করেন। তাই স্বাভাবিকভাবে আপনি পেয়ে যেতে পারেন রোগমুক্ত জীবন।
কার্ব ফ্রি ডায়েট ফুডসের তালিকা
১. মাংস
যেকোনও ধরনের মাংস প্রোটিন, ভিটামিন বি ও আয়রনের উৎস। বেকিং এবং গ্রিলিং, মাংসে থাকা ফ্যাটের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
২. মাছ এবং সি-ফুড
মাছ এই ডায়েটের জন্য একদম পারফেক্ট। প্রোটিন, ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম, ওমেগা -৩ ফ্যাটি এসিড তো আছেই।
৩. ফল এবং সবজি
ওজন কমানোর জন্য ফলমূল, শাক সবজির অবদানের কথা বলে শেষ করা যাবে না। নিয়মিত এগুলো খেলে স্বাস্থ্যটা যেমন আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে তেমনি ত্বক হয়ে উঠবে ঝকঝকে।
৪. ডিম
সেদ্ধ করা ডিম প্রোটিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। কার্ব ফ্রি ডায়েটে প্রতিদিন ২টি ডিম খেতে পারবেন।
৫. বাদাম
কার্ব ফ্রি ডায়েটে এক ঘেয়েমি ভাব দূর করতে বিকালের স্ন্যাক্স হিসেবে মাঝে মাঝে বাদাম খেতে পারেন। আবার সালাদের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন।
৭ দিনের কার্ব ফ্রি ডায়েট চার্ট
১ম দিন
সকাল – ২টি সিদ্ধ ডিম, একটি জাম্বুরার অর্ধেক, বিফ অথবা চিকেন সসেজ, চা অথবা কফি।
দুপুর – মুরগির বুকের মাংস, শশা, টমেটো, লেটুস পাতা দিয়ে বানানো এক বাটি সালাদ, ৮ আউন্স পানি।
রাত – অলিভ অয়েলে স্টার ফ্রাই করা লিন মিট, এক বাটি সালাদ, ১৬ আউন্স পানি।
২য় দিন
সকাল- ২টি সেদ্ধ ডিম, রাজমা অথবা যেকোনও ডাল অল্প তেলে রান্না, চা অথবা কফি, ৮ আউন্স পানি।
দুপুর– আপনার পছন্দ মত যেকোনও মাছ সেদ্ধ খেতে পারলে খুবই ভালো আর তা না পারলে অল্প তেল মশলা দিয়ে পাতলা ঝোল করে নিন, এক বাটি সালাদ, ৮ আউন্স পানি।
রাত– কিছু গ্রিলড সবজি, সবজির সুপ, ১৬ আউন্স পানি।
৩য় দিন
সকাল- টমেটো দিয়ে পালং শাক সেদ্ধ, লো ফ্যাট মিল্ক এক কাপ , চা অথবা কফি।
দুপুর– টাটকা সবজি সেদ্ধ ১ বাটি, ১ পিস গ্রিল চিকেন , ৮ আউন্স পানি।
রাত– চিকেন সুপ, পেট না ভরলে ১ বাটি সালাদ, ১৬ আউন্স পানি, চিনি ছাড়া চা।
৪র্থ দিন
সকাল– ২টি সেদ্ধ ডিম , লো ফ্যাট মিল্ক ১ কাপ।
দুপুর– সেদ্ধ ফিস, চাইনিজ ভেজিটেবল ১ বাটি , ৮ আউন্স পানি।
রাত- অলিভ অয়েলে স্টার ফ্রাই করা বিফ লিন মিট , এক বাটি সালাদ , ১৬ আউন্স পানি।
৫ম দিন
সকাল– সেদ্ধ ডিম ১ টি, টক দই, চা অথবা কফি।
দুপুর– ৩৫০ গ্রাম গ্রিলড বিফ, সালাদ ১ বাটি, ৮ আউন্স পানি
রাত– সবজির সুপ, সেদ্ধ গরুর মাংস ২০০ গ্রাম, ১৬ আউন্স পানি।
৬ষ্ঠ দিন
সকাল– ২টি ডিম ভাজি, অর্ধেক তরমুজ, টক দই, চা অথবা কফি।
দুপুর– ওভেন বেকড চিকেন ৫০০ গ্রাম, এক বাটি সালাদ, ৮ আউন্স পানি।
রাত- অলিভ অয়েলে স্টার ফ্রাই করা বিফ লিন মিট, ছোট এক গ্লাস গাজরের জুস, ২ স্লাইস গাজর, ১৬ আউন্স পানি।
৭ম দিন
সকাল– ২টি ডিম পোচ, এক কাপ কটেজ চীজ বা ঢাকাইয়া পনির, চা অথবা কফি।
দুপুর– গ্রিলড ফিস বা লিন মিট, এক কাপ সবজি সিদ্ধ, টক দই,৮ আউন্স পানি।
রাত- সবজ়ির সুপ বা চিকেন সুপ, ১টি কমলা /আপেল, ১৬ আউন্স পানি।
এই ডায়েটের মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে আপনি ১-১.৫ কেজি পর্যন্ত কমতে পারেন। এভাবে যতদিন পর্যন্ত না আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত ওজনে পৌঁছাবেন ততদিন এই রুটিন ফলো করবেন। তবে মাঝে মাঝে এই ডায়েট থেকে একটু বিরতি নিবেন।
গুরুত্বপূর্ণ টিপস
১. প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একটি লেবুর সম্পূর্ণ রসের সাথে উষ্ণ গরম পানি আর মধু মিশিয়ে খাবেন।
২. যখনই ক্ষুধা লাগবে এক বাটি ফ্রুটস সালাদ নতুবা শসা, গাজর দিয়ে বানানো সালাদ খেয়ে নিবেন।
৩. প্রচুর পরিমাণে পানি খাবেন। চাইলে ফলের জুস খেতে পারেন। কিন্তু ঘরে বানানো জুসের সঙ্গে চিনি মিশাবেন না।
৪. এক নাগাড়ে ৪ সপ্তাহের বেশি এই ডায়েট করবেন না।
কার্ব ফ্রি ডায়েটের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
যেহেতু কার্বোহাইড্রেট আমাদের শরীরের এনার্জির জন্য খুবই জরুরী। তাই কার্ব ফ্রি ডায়েটের কিছু কমন সাইড ইফেক্টের প্রতি আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। প্রথম কয়েকদিন আপনি হয়ত একটু দুর্বল অনুভব করবেন, আবার বমি বমি ভাবও লাগতে পারে। কিন্তু ভয়ের কোন কারণ নেই। ৩/৪ দিন পর আবার এগুলো ঠিক হয়ে যাবে।
ছবি- সংগৃহীত: সাটারস্টক