বেশ কিছুদিন ধরে বাড়তি মেদ কমানোর জন্য ব্যায়াম করা শুরু করেছেন। নিয়ম করে জিমেও যাচ্ছেন। কিন্তু এতকিছু করার পরও ওজনটা খুব বেশি কমানো সম্ভব হচ্ছে না। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? কী কারণে কাঙ্ক্ষিত ওজনে পৌঁছাতে পারছেন না? এইরকম সব প্রশ্নের একটিই উওর হতে পারে তা হলো রাইট। কথাটি শুনে অবাক লাগছে? ভাবছেন রাইট আবার কী? আপনার ফিটনেসের লক্ষ্যে অর্জন করার ক্ষেত্রে রাইট টাইম, রাইট ডায়েট, রাইট রুলসের অনেক বেশি প্রয়োজন। আপনি ডায়েটের ক্ষেত্রে যদি সঠিক সময় এবং সঠিক নিয়ম মেনে না চলেন, তবে সেই ডায়েট থেকে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া সম্ভব নয়। আবার আপনার কিছু বদ অভ্যাস অথবা ভুলের কারণে আপনার এত কষ্ট করে করা ওয়ার্কআউটও কাজ করছে না। এমন ৭টি অভ্যাস নামক ভুল নিয়ে আজকের এই ফিচার। আপনার অজান্তে করা এই ভুলগুলো আপনার সব কষ্ট নষ্ট করে দিচ্ছে। আসুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক ৭টি অভ্যাস যা আপনার ওয়ার্ক আউটকে নষ্ট করে দেয়।
৭টি অভ্যাস যা আপনার ওয়ার্ক আউটকে নষ্ট করে
১) ভুল ব্যায়াম করা
হঠাৎ করে জিমে যাওয়া শুরু করলেন এবং এক্সারসাইজ করা শুরু করলেন। কোচের পরামর্শ ছাড়া হুট করে শুরু করে দেওয়া ব্যায়াম আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এভাবে ভুল নিয়মে ব্যায়াম করা আপনার শরীর এবং মাংসপেশীর জন্য ক্ষতিকর। জিমে যাওয়া শুরু করার আগে সেখানকার কোচের পরামর্শ নিয়ে নিন। কী ধরনের ব্যায়াম করবেন, কোন ব্যায়ামটি আপনার শরীর নিতে পারবে, একটি ব্যায়াম কতক্ষণ করবেন সবকিছু ব্যায়ামাগারের কোচের সাথে পরামর্শ করে নিন।
২) খালি পেটে ব্যায়াম করা
অধিকাংশ বিশেষজ্ঞরা খালি পেটে ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যেকোনো ওয়ার্ক আউট শুরু করার আগে কিছু পরিমাণের গ্লুকোজ গ্রহণ করা উচিত। এটি আপনার দুর্বলতা কমিয়ে দিবে এবং ঘুম ঘুম ভাব দূর করতে সাহায্য করবে। যখন আপনার শরীরের সুগারের পরিমাণ কমে যায় তখন মাংসপেশী থেকে গ্লাইকোজেন বের হয়ে আসে আপনাকে দুর্বল করে থাকে। তাই ব্যায়াম শুরু করার ৪৫ মিনিট আগে কলা কিংবা লো-ক্যালোরির দই খেতে পারেন।
৩) কার্ডিও
অতিরিক্ত ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কার্ডিও ব্যায়াম বেশ কার্যকর। তাই বলে যদি মনে করেন বেশি বেশি কার্ডিও ব্যায়াম করলে ওজনটা দ্রুত কমে যাবে তাহলে আমি ভুল ধারণা নিয়ে আছেন। অতিরিক্ত কার্ডিও এক্সারসাইজ আপনার পেশীশক্তিকে দুর্বল করে দেয়। এছাড়া পেশী টান, পেশী ব্যথাসহ ইত্যদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই অতিরিক্ত কার্ডিও না করে ৩০-৬০ মিনিট কার্ডিও করুন।
৪) ভুল খাদ্যাভ্যাস
অনেকে মনে করেন সকালের নাস্তা কিংবা দুপুরের খাবার খাওয়া বাদ দিলে, দ্রুত ওজন কমে যাবে। কিন্তু এটা তেমন সত্য নয়। ওয়ার্ক আউটের পর আপনাকে অব্যশই খাবার গ্রহণ করতে হবে এবং তা পুষ্টিকর খাবার হতে হবে। সঠিক খাবারের অভাবে আপনার মাংসপেশি ভেঙে পড়তে পারে। ওয়ার্ক আউটের পরে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন। প্রসেসড ফুড বা জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলুন। খেজুর, পিনাট বাটার এবং কলার স্মুদি, আপেল, কাঠবাদাম, কিংবা মিষ্টি আলু খেতে পারেন ওয়ার্ক আউটের পরে। এই খাবারগুলো থেকে প্রয়োজনীয় কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিন পাবেন।
৫) অপর্যাপ্ত ঘুম
সুস্থ থাকার জন্য পরিমাণমতো ঘুমের তুলনা নাই। আপনি ওয়ার্ক আউট করে যাচ্ছেন, ঠিকমত ঘুমাচ্ছেন না। এতে আপনার শরীর এবং মাংসপেশী পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাচ্ছে না যার কারণে আপনার ক্লান্তি কিংবা পেশী ব্যথা কোনটাই কমছে না। ঘুম স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে এবং কোরটিসোলের মাত্রা হ্রাস করে যা টেসটোসটেরন এবং এইচজিএইচ লেভেলে ভারসাম্য বজায় রাখে। বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন সুস্থ মানুষ প্রতিদিন ৬-৮ ঘন্টা ঘুমানো উচিত।
৬) কম প্রোটিনের ডায়েট
ওয়ার্ক আউটের পর পেশী ব্যথা কমানোর জন্য প্রোটিনযুক্ত খাবার খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। প্রোটিনসমৃদ্ধ ডায়েট আপনার মেটাবলিজম বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয় প্রোটিনযুক্ত খাবার দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রেখে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণে বাঁধা প্রদান করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে প্রোটিনযুক্ত খাবার হজম করতে ৩০ পারসেন্ট পর্যন্ত ক্যালোরি বার্ন হয়ে থাকে। তাই খাদ্য তালিকায় প্রচুর পরিমাণে প্রোটিনযুক্ত খাবার রাখুন।
৭) একই রকম ওয়ার্কআউট
এই কথা সত্য, একইরকম ওয়ার্ক আউট করতে করতে ওই ওয়ার্ক আউটে অভ্যস্ত হয়ে যাই আমরা। আর বার বার সেই ওয়ার্ক আউটটি করে থাকি। কিন্তু একই রকম ওয়ার্ক আউট করার কারণে আপনার মাংসপেশী একটি জায়গায় আটকে যাবে এবং একটা সময়ে যেয়ে আপনি তেমন একটা উন্নতি দেখতে পাবেন না। তাই মাঝে মাঝে নতুন ওয়ার্কআউট ট্রাই করা উচিত।
এবার থেকে ওয়ার্ক আউট করার সময় এই ৭টি অভ্যাস লক্ষ্য করে বর্জন করবেন। দেখবেন আপনার ওজন কমে যাচ্ছে আপনার মনের মতো।
ছবি- সংগৃহীত: সাটারস্টক