শীত এসে গেছে। সেই সাথে আমাদের আশেপাশের ফলের বাজার ছোট বড় কমলা লেবুতে ভরে গেছে। এই ছোট্ট ফলটি যেমন খেতে সুস্বাদু, তেমনি এতে রয়েছে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ক্লোরিন, ফসফরাস সহ নানারকম পুষ্টি উপাদান। এসকল উপাদানের কারণে কমলালেবু আমাদের ত্বক, চুল ও স্বাস্থ্য সবকিছুর জন্যই অনেক উপকারী। কমলালেবুর স্বাস্থ্য গুণগুলো এখানে একে একে আলোচনা করা হলঃ
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ
কমলালেবু ভিটামিন সি দিয়ে পরিপূর্ণ। আর আমরা সকলেই জানি যে ভিটামিন সি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কতটা কার্যকর। কমলালেবুতে থাকা ভিটামিন সি রক্তের শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে যা মূলত ক্ষতিকর ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সাথে লড়াই করে।
রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়ঃ
কমলালেবুতে আছে পেকটিন, যা একটি সলিউবল্ ফাইবার। এটি কোলেস্টেরলকে রক্তের মধ্যে মিশে যাবার আগেই শরীর থেকে বের করে দেয়। এছাড়া বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, কমলালেবুতে থাকা ফ্লেভানন রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমানোর সাথে সাথে ব্লাড প্রেশারকেও নিয়ন্ত্রণ করে।
হৃৎপিন্ডকে রক্ষা করেঃ
আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল হৃৎপিন্ড। কমলালেবুতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদানগুলো হৃৎপিন্ডের স্বাস্থ্য রক্ষায় অসাধারণ ভূমিকা রাখে। এগুলো আমাদের ধমনীকে ফ্রি রেডিকেল থেকে বাঁচায়। সেই সাথে কোলেস্টেরলের অক্সিডেশন রোধ করে যা হার্টের জন্য অতি জরুরী।
কিডনীতে পাথর তৈরী হওয়া প্রতিরোধ করেঃ
কিডনী সুস্থ্য রাখতে কমলালেবুতে থাকা ভিটামিন সি অসাধারণ কাজ করে। এটি কিডনীতে এসিড লেভেল কমিয়ে দেয় এবং ক্যালসিয়াম অক্সালেট অর্থাৎ পাথর তৈরি হওয়া কম করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ
কমলালেবুতে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার বিশেষত প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে দারুণ ভূমিকা রাখে। কমলালেবুতে আছে লাইমোনয়েড নামের একটি উপাদান যা পাকস্থলি, কোলন, ত্বক, স্তন, ফুসফুস এবং গালের ভিতর ক্যান্সার কোষ তৈরী হওয়াকে প্রতিরোধ করে। এছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে, বাচ্চাদেরকে যদি প্রথম দুই বছর নিয়মিত কমলার রস খাওয়ানো হয়, তবে শিশুদের মধ্যে লিউকোমিয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। তবে শিশুদেরকে কখনোই অতিরিক্ত কমলার রস খাওয়ানো যাবে না। প্রতিদিন এক গ্লাস কমলার রস যথেষ্ট।
চোখের দৃষ্টি বৃদ্ধি করেঃ
পুষ্টিবিদদের মতে সব রকমের হলুদ ও কমলা রঙের ফল ও সবজি যেমন কমলালেবু চোখের জন্য অত্যন্ত ভালো। কারণ এগুলোতে থাকে বিটা ক্যারোটিন যা চোখের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
অ্যান্টি এজিং ও ত্বকের যত্নঃ
কমলালেবুতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যেমন ত্বককে সুরক্ষা দেয়, তেমনি বয়স ধরে রাখতে সাহায্য করে। এটির নিয়মিত সেবন দেহ থেকে টক্সিন বের করে দেয়, যা সুন্দর স্বাস্থ্য ও ত্বকের জন্য অত্যন্ত জরুরী।
যেকোনো ফলই কোনো রকম প্রসেসিং ছাড়া শুধু খাওয়াই ভালো। এতে ফলে থাকা ফাইবারগুলো নষ্ট হয় না। কমলালেবুর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তবে দিনে একটা কমলালেবু খাওয়াই যথেষ্ট। কারণ কমলালেবুতে থাকা চিনিজাতীয় ও অ্যাসিডিক উপাদান দাঁতের ক্ষতি করতে পারে। আর বাজারে যেসব অরেঞ্জ জুস পাওয়া যায় সেগুলো থেকে দূরে থাকাই ভালো। কারণ এগুলোতে থাকা মিষ্টি উপাদান আর প্রিজারভেটিভ শরীরের উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করে।
লিখেছেনঃ সাদিয়া রিফাত ইসলাম
ছবিঃ ন্যাচারালহেলথচ্যাট.কম