কর্পোরেট জগতে হোক বা ক্লাসে, কোনো বিষয়ে সবার সামনে নিজের ধারণা উপস্থাপন করতে প্রেজেন্টেশন একটা বহুল প্রচলিত মাধ্যম। এই প্রেজেন্টেশনগুলো প্রজেক্টরে দিতে হয় স্লাইড বানিয়ে। বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় প্রেজেন্টেশন ছাড়া শিক্ষাক্রম অচল প্রায়। থিওরি এবং ল্যাব, দুই ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীর যোগ্যতা যাচাইয়ের মানদণ্ড হিসেবে প্রেজেন্টেশনের চাহিদা ব্যাপক। একটা প্রেজেন্টেশন যথাযথ করার কিছু মূল কথা আছে, অতি সাধারণ হওয়া সত্ত্বেও সেসব উপেক্ষা করে যায় অনেকেই। ফলে আশানুরূপ প্রেজেন্টেশন দেয়া হয় না। সেসব কথা নিয়েই লেখাটি সাজানো হলো। সামনের বার কোনো প্রেজেন্টেশন প্রস্তুত করার আগে মিলিয়ে নেবেন এই নিয়মগুলো মানছেন কিনা।
- লেখা কম, কথা বেশি
স্লাইডে লেখা ততটাই থাকবে যতটা না লিখলে নয়। কিছু শব্দমালা থাকবে আপনার প্রেজেন্টেশন স্লাইডে, বাকিটুকু মুখে বর্ণনা করবেন। সংক্ষিপ্ত লেখার বিশদ ব্যাখ্যা হবে কথার মাধ্যমে। রচনা লিখতে কখনোই প্রেজেন্টেশন ভালো ক্ষেত্র নয়, তার জন্য অ্যাসাইনমেন্ট রয়েছে, রিপোর্ট রয়েছে, প্রেজেন্টেশন অবশ্যই সেরকম হবে না। সবচেয়ে ভালো হয়, যদি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কেবল শব্দ রাখা হয় স্লাইডে। বাক্যের বদলে এক-দুইটি শব্দ ব্যবহার করুন। বাক্যটা উপস্থাপন করুন মুখে।
- দেখে দেখে পড়া নয়
প্রেজেন্টেশন রিডিং পড়ার জায়গা নয়। কিছুটা স্লাইড দেখে পড়লেও অনেকটাই নিজে নিজে বলার চর্চা রাখা চাই। যখন স্লাইডে কম কথা রেখে বেশিরভাগটা নিজে বলবেন, তখন এই জিনিষটা এমনিই হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তা না হলে অন্তত এই অভ্যাস করুন যেন দেখে বেশি পড়া না লাগে। স্লাইডে অনুচ্ছেদ দেয়া থাকলে এক-দুই লাইন দেখে পড়ুন আর বাকিটা নিজে বলার চেষ্টা করুন।
[picture]
- নিজে থেকে ধারণা দেয়া চাই
যা স্লাইডে আছে ঠিক তাই বলে যাচ্ছেন, তা যেন না হয়। একটা ভালো স্লাইড তৈরি করলেও যদি নিজে থেকে কিছুই আলাদা না বলেন, তাহলে গোটা প্রেজেন্টেশনটা নষ্ট হয়ে যায়। যে বিষয়ের উপর প্রেজেন্টেশন বানাচ্ছেন, কেবল টুকে না নিয়ে কিছুটা শিখেও নেয়া চাই। না হয় সেই দেখেই পড়ে যেতে হবে।
- বিষয় হোক যথাতথা দেখতে হোক ভালো
হ্যাঁ, এইটাও একটা জরুরী ব্যাপার বটে। বিষয়বস্তু যাই হোক, বা প্রেজেন্টেশন যত সংক্ষিপ্তই হোক না কেন তা সাজানো চাই সুন্দর করে। স্লাইডের রঙ আর ডিজাইন নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে অবশ্যই। খুব ঝলমলে রঙ আর আর অতিরিক্ত ডিজাইন থাকা লে-আউটের স্লাইড বাছাই করাটা বোকামি।
- সময়জ্ঞান হোক সঠিক
প্রেজেন্টেশনের বাঁধাধরা একটা সময় দেয়া থাকে বেশিরভাগ জায়গায়ই। প্রদত্ত সময়ের ভেতর সাধ্যের সবটা উপস্থাপন কীভাবে করবেন, লক্ষ্য হোক সেটা। আপনি অনেক জানেন, সবাইকে তা জানাতে চান, তাই নির্ধারিত সময়ের বাইরে টেনে নিয়ে গেলেন নিজের প্রেজেন্টেশন; এটা করা যাবে না। অল্প কথায় যতটা সম্ভব বিষয়টা বোঝাতে হবে, এটা মাথায় রাখা চাই। অতিরিক্ত সময় আপনাকে দেয়া হবে কিনা বা আপনার নেয়া অতিরিক্ত সময় শ্রোতাদের কাছে কাম্য কিনা, সেসব আপনাকেই খেয়াল করতে হবে।
- ভাবভঙ্গিতে সাবধানতা
বক্তার ভঙ্গিমায় ফর্মাল ভাব রাখতে হয় প্রেজেন্টেশনগুলোতে। হাত যেমন খুশি ছোড়াছুঁড়ি করবেন, অকারণে হাসবেন, আপনার যত্নে বানানো প্রেজেন্টেশন মাঠে মারা যাবে এইটুকুতেই।
- থেমে যাওয়া চলবে না
হতেই পারে একটা কথা আপনার মাথায় এখন নেই, সঠিক শব্দ ব্যবহার করে বিষয়টা বোঝাতে পারছেন না, কিছু আসে-যায় না তাতে। বিশ্বাস রাখুন যে আপনার পরের অংশটা ভালো হবে। সেটার দিকে অগ্রসর হতে হবে, থেমে যাওয়া অংশটাকে দরকারে অসমাপ্ত রেখেই।
ছবি – সাটারস্টক
লিখেছেন – মুমতাহীনা মাহবুব