” অভিনয় মানে অন্য কেউ হয়ে যাওয়া নয় বরং সম্পূর্ণ ভিন্ন কোন চরিত্রে নিজের সাথে সাদৃশ্য খুঁজে নেয়া তারপর নিজেকে সেখানে আবিষ্কার করা।”
– মেরিল স্ট্রিপ, অভিনেত্রী।
অভিনয় একটি সৃজনশীল পেশা। অনেকের কাছে এটি নেশা এবং পেশা দুই-ই। কিন্তু সঠিকভাবে অভিনয়টা আয়ত্ত করতে না পারলে কিছু দূর যাবার পরই ক্যারিয়ার আর আগায় না। যারা প্রথম প্রথম খুব উৎসাহ দেয় তারাই একসময় এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করে। তাই অভিনয়ের শুরুতেই ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে নেয়া ভালো।
যারা অভিনয় শুরু করার কথা ভাবছেন, অভিনয়ের শুরুটা কিভাবে ভালোভাবে করা যায় এই সম্পর্কিত কিছু টিপস নিয়েই আপনাদের জন্য আমার আজকের এই আর্টিকেল।
অভিনয় পেশাটির জন্য কিছু টিপস
১. চারপাশ পর্যবেক্ষণ করা
ভালো অভিনয় শিল্পী হবার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন নিজের চারপাশ, পরিস্থিতি, মানুষজন লক্ষ্য করা। একেক মানুষ একেক অবস্থায় একেক রকম আচরণ করে। এই ব্যাপারগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করতে হবে এবং বোঝার চেষ্টা করতে হবে। কারণ আমাদের আশেপাশেই লুকিয়ে থাকে বিভিন্ন রকম অভিনয়ের উপকরণ এবং চরিত্র।
২. প্রচুর বই পড়তে হবে
যারা ছোটবেলা থেকে বই পড়তে পছন্দ করেন তারা বিভিন্ন রকম চরিত্র ও পরিবেশের সাথে ছোট থেকেই পরিচিত থাকেন। তারা কল্পনা করতে ভালবাসেন, চিন্তা করে অনেক সমস্যার সমাধান দিতে পারেন এবং তাদের জ্ঞানের পরিধি বাকিদের চেয়ে বিস্তৃত হয়ে থাকে। অনেক বইয়েই মূল চরিত্রের চেয়ে ছোট অথবা পার্শ্ব কোন চরিত্র বেশি আকর্ষণীয় হয়। অভিনয়ের জায়গাটা অনেক বেশি থাকে। তাই বই পড়ার মাধ্যমে নিজের অভিনয়ের নেশাটা আরেকটু ঝালিয়ে নেয়া সম্ভব। বিভিন্ন ভাষায় লিখা বাংলায় অনূদিত বইগুলোও কিন্তু পড়তে বেশ দারুণ লাগবে। তাই দৈনিক কিছুটা সময় বের করে কিছু বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
৩. নিজেকে বুঝতে হবে
কেউ অভিনয় করতে চায় শখের বশে, কেউবা খ্যাতির জন্য আবার কেউ শুধুই আনন্দের জন্য। কিন্তু অভিনয় ব্যাপারটাকে যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে না নিলে একে আয়ত্ত করা খুবই কঠিন ব্যাপার। নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে, ভিতর থেকে অভিনয়ের ক্ষুধা জাগিয়ে না উঠলে এই পেশাটা আসলে আপনার জন্য না। তাই সময় থাকতে নিজেকে বারবার প্রশ্ন করুন আসলে আপনি কেন এই পেশায় আসতে চান। টাকা-পয়সা, খ্যাতি, সময় কাটানোর উপকরণ হিসেবে অভিনয়কে না নেয়াই ভালো। কোন কিছুর প্রতি সীমাহীন প্রেম না জন্মালে তা ভবিষ্যতের জন্য তেমন কোন সুফল বয়ে আনতে পারে না।
৪. দেশি–বিদেশি সিনেমা দেখা
অভিনয় সম্পর্কে জানার ও বোঝার জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী উপায় হচ্ছে দেশী-বিদেশী নানা রকম সিনেমা, নাটক দেখা। এসব কাজের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের সংস্কৃতি, অভিনয়ের ধরন, ছোটখাট অনেক বিষয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। পরবর্তীতে কোন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করার ক্ষেত্রে এই অভিজ্ঞতা খুব কাজে দিবে।
৫. ভিত তৈরি করা
যে সময়েই অভিনয় করার পরিকল্পনা করা হোক না কেন তখন থেকেই কোন না কোন থিয়েটার অথবা অভিনয়ের স্কুলে ভর্তি হয়ে যাওয়া ভালো। নিয়মিত প্রশিক্ষণ, ক্লাস, অভিনয়ের মহড়ায় অংশগ্রহণ করলে গোঁড়া থেকেই অভিনয়ে পাকাপোক্ত একটি ভিত তৈরি করা সহজ হয়। যেকোন কিছুতেই পারদর্শী হতে হলে ভিত্তিটা ভালোভাবে গড়ে নিতে হয়। তা না হলে বেশিদূর আগানো সম্ভব হয় না। বড় পর্দায় চেষ্টা করার আগেই ছোট পর্দায় অথবা পথ-নাটকে ছোট-বড় সব চরিত্রে অভিনয় করে নিজের ভিতরের প্রতিভাকে বের করে আনতে হবে।
৬. অনুশীলনের বিকল্প নেই
নিজে কোন চরিত্রে অভিনয় করার আগে অথবা নিজের পছন্দের কোন চরিত্র আয়ত্ত করার জন্য অনুশীলনের বিকল্প নেই। আয়নায় একা এবং নিজের কাছের লোকজনের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের মুখ ও অঙ্গভঙ্গীর অনুশীলন করতে হবে। নিজের ভুলগুলো বের করে তা ঠিক করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে ইউটিউব-এর মতন কিছু মাধ্যম বেশ কাজে লাগে, যেখানে অভিনয়ের খুঁটিনাটি নিয়ে অনেক ভিডিও পাওয়া যাবে।
৭. মাথা ঠান্ডা রেখে ধৈর্য ধারণ করা
কোন কিছুই রাতারাতি পাওয়া যায় না। সবকিছুর জন্যই ধৈর্য ধরা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। প্রথমদিকে হয়ত নিজের পছন্দমত অনেক কিছুই হবে না, কিন্তু তাই বলে হতাশ হওয়া কোন সমাধান নয়। প্রতিটা কাজই বেশ বুদ্ধির সাথে হিসেব করে করাই ভালো একজন অভিনয় শিল্পীর লক্ষণ। মনে রাখবেন, যেকোনো কাজে লেগে থাকাটাই সাফল্যের মূল কারণ।
আজকের এই লিখাটি এই পর্যন্তই। আশা করি ওপরের টিপসগুলো যারা অভিনয় শুরু করতে চাচ্ছেন তাদের কিছু হলেও কাজে লাগবে। পরবর্তী পর্বে আরো কিছু সৃজনশীল পেশায় ভালো করার জন্য যা যা করণীয় তা নিয়ে লিখবো। জানতে চাইলে অবশ্যই সাজগোজের সাথেই থাকুন।
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ; সাটারস্টক