প্রতিটা মানুষই চায় তাদের ঘরটি সুন্দর ও গোছানো থাকুক। আর তাই ঘরের সাজে আমরা কত কিছুই না ব্যবহার করি। বিভিন্ন ধরনের শো পিস, ছোট বড় মূর্তি, ছবির ফ্রেম ইত্যাদি ব্যবহার হয়ে আসছে অনেক কাল ধরে। আবার অনেকেই ঘরের সাজে ভিন্নতা আনতে বিভিন্ন গাছ রাখেন তাদের ঘরে। এটি যেমন ঘরের সৌন্দর্য অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয় তেমনি ইট পাথরের শহরে ঘরে বিরাজ করে একটা প্রাকৃতিক পরিবেশ। তাই চলুন আজ দেখে নেই ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে আপনি কী ধরনের গাছ বাসায় রাখতে পারেন ও কীভাবে রাখবেন। কথা হবে গৃহসজ্জায় বৃক্ষ সমাহার নিয়ে। শহরের বাড়িগুলোতে অনেকেই বারান্দা বা ছাদে টবে গাছ লাগান। তবে ঘরের ভেতর আপনি রাখতে পারেন বিভিন্ন ধরনের ইনডোর প্ল্যান্ট। এতে আপনার মনে আসবে এক ধরনের অপূর্ব প্রশান্তি।
গৃহসজ্জায় বৃক্ষ সমাহার
১) ক্যাকটাস
ইনডোর প্ল্যান্ট এর মধ্যে প্রথমেই আসে ক্যাকটাস এর কথা। ন্যাচারাল লাইটে এটি ভালো থাকে। এই প্ল্যান্টটি খুব একটা যত্ন করতে হয় না ও সহজেই ঘরের কোণে রাখা যায়। ক্যাকটাস এর তেমন একটা পানি দেয়ারও প্রয়োজন পড়ে না- গ্রীষ্মে ১ সপ্তাহ পরপর এবং শীতে ৩ সপ্তাহ পরপর। তাই আপনি চাইলে বিভিন্ন ধরনের ক্যাকটাস দিয়ে খুব সহজেই আপনার ঘরটিকে সাজাতে পারেন।
২) ডেভিল’স আইভি
এটি একটি ন্যাচারাল এয়ার পিউরিফায়ার প্ল্যান্ট। এর তেমন যত্ন করতে হয় না। কিছুটা অযত্নে বেড়ে ওঠাই এর বৈশিষ্ট্য। সামান্য পানি দিলেই হয় মাঝে মাঝে, প্রতিদিন নয়। একে উপর থেকে ঝুলিয়ে দেয়া যায়। লতার মত জড়িয়ে বাড়ে। খুব সুন্দর একটি অরনামেন্টাল প্ল্যান্ট এই ডেভিল’স আইভি।
৩) স্পাইডার প্লান্ট
এই প্ল্যান্টটি ঘরোয়া আলোয় ভালো থাকে। এই গাছটি স্পাইডার প্ল্যান্ট হিসেবে পরিচিত এর চিকন পাতার জন্য এবং এটি গুচ্ছভাবে চারদিকে ছড়িয়ে থাকে তাই একে স্পাইডার প্ল্যান্ট বলা হয়। এই গাছটি আপনি জানালার পাশে বা বারান্দায় রাখতে পারেন। এই গাছটি প্রায় সব নার্সারিতেই সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়। ৫০ ফাঃ একে কম তাপমাত্রায় রাখা যাবে না।
৪) স্নেক প্ল্যান্ট
এটি এক ধরনের পাতাবাহার। এই গাছটিকে স্নেক প্ল্যান্ট বলা হয় কারণ এর আকৃতি দেখতে অনেকটা সাপের চামড়ার মত। অল্প আলোতে এমনকি অন্ধকারেও এই গাছ ভালো হয়। এটি ঘরের পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখে। পাতাগুলো কেটে দিলে এবং অনেক কম পানি দিলে ( শীতকালে পানি দিতে হয় না) এরা বেড়ে ওঠে।
৫) মানি প্ল্যান্ট
মানি প্ল্যান্ট এমন একটা উদ্ভিদ যা পানি ও মাটিতে দুইভাবেই হয়। এটি আপনি ঘরে তো রাখতে পারবেনই, তার সাথে বাথরুম, কিচেন, বেসিন যেখানে খুশি রাখতে পারেন কারণ এটি খুব অন্ধকার যায়গাতেও ভালো হয়। তবে এটি লতানো উদ্ভিদ বলে মাঝে মাঝে এর ডাল ছেটে দিতে হবে এবং পানিতে রাখলে ১৫-২০ দিন পর পর পানি পাল্টে দিতে হবে।
৬) পুদিনা
পুদিনাপাতার স্মেল শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এটি স্মরণশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এর সাথে সাথে ক্ষিদেও বাড়ায় এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। আসলেই এর গুণের শেষ নেই। এই গাছটি আপনি বারান্দা বা জানালার পাশে রাখতে পারেন। খুব একটা যত্ন করতে হয় না বলে এর দেখাশোনা করাও খুব সহজ।
৭) বনসাই
বনসাই একটি জাপানিজ আর্ট ফর্ম- বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করে কন্টেইনারে তৈরি ছোট গাছ। আজকাল ঘর সাজাতে বনসাই-এর ব্যবহার খুব দেখা যাচ্ছে। এর যত্নআত্তি খুব একটা নিতে হয় না কারণ এর নিয়মিত পানির দরকার হয় না। তাই ঘর সাজাতে বনসাই এর কদর বেড়েই চলেছে।
জানলেন গৃহসজ্জায় বৃক্ষ সমাহার নিয়ে। কাজের চাপে এবং বিভিন্ন কৃত্রিমতার ছোঁয়ায় দিনের পর দিন আমরা যন্ত্র এবং আমাদের জীবনটা যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। এই যান্ত্রিক জীবনে যদি একটু প্রকৃতির ছোঁয়া পাওয়া যায় তাহলে ক্ষতি কী! একান্ত ইচ্ছাশক্তি আর চেষ্টা থাকলে সবই সম্ভব। তাই আপনিও আর দেরি না করে আপনার ঘরটিকে সাজিয়ে তুলুন সবুজে। আর হ্যাঁ, শুধু গাছ লাগালেই হবে না, তার সাথে যত্নও করতে হবে কিন্তু।
ছবি- সাটারস্টক