চারপাশের মানুষজন আপনাকে নিয়ে কী ভাবছে! অন্যজনের ধ্যান ধারণা আপনাকে নিয়ে কেমন? ভালো কি মন্দ? আশেপাশের মানুষ আপনাকে নিয়ে কী চিন্তা করে সেটা নিয়ে ভাবা মানব জাতির বৈশিষ্ট্য।
যখন একজন মানুষ সম্পর্কে আরেকজন ভালো মন্তব্য করেন তখন মস্তিস্কের রিওয়ার্ড সেন্টার কাজ করার ফলে এক ধরনের হরমোন নিঃসরণ হয় যা আমাদের ভালো অনুভব করায়। আর এই অনুভবই পরবর্তীতে আমাদের আচার আচরণে প্রভাব ফেলে। তবে এটা তখনই সমস্যার সৃষ্টি করে যখন আমরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগি। কী পরলে, কীভাবে কথা বললে, কোন ক্যারিয়ার বেছে নিলে লোকজন আমার সম্পর্কে ভালো বলবে এবং প্রশংসা করবে। আর এই ভালো লাগার পেছনে ছুটতে গিয়েই আমরা নিজেদের অস্থির করে তুলি।
দুঃখজনক হলেও সত্যি এই স্বভাব থেকে বেরিয়ে আসা অসম্ভব! কিন্তু আপনি চাইলে কিছু ট্রিক্স অ্যাপ্লাই করে মানুষ আপনার সম্পর্কে কী ভাবছে এই দুশ্চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারবেন।
(১) স্পট লাইট জোন থেকে বেরিয়ে আসুন
চারপাশে বড় বড় চোখ আপনার আপাদ-মস্তক ঘুরে ঘুরে দেখছে! কানাঘুষা করছে মেয়েটি কেমন ড্রেস পড়েছে? মেয়েটির চলন বলন কেমন? মেয়েটি একদম কাজ পারে না! আরও অনেক কিছু।এসব নিয়ে চিন্তা করতে করতে অনেক সময় আমরা সাবলীল থাকতেও ভুলে যাই। জড়তা চলে আসে। খুব বেশী ভাবতে ভাবতে নিজেই নিজেকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দেই। ব্যাপারটি আসলে এমনটা নাও হতে পারে।
[picture]
এসবই হয় কারণ আমরা নিজেকে অনেক বেশি প্রাধান্য দেই এবং মনে করতে থাকি সকল ইন্টারেস্টের কেন্দ্রবিন্দু আমি নিজেই। কিন্তু আসলে তা নয়। যারা আপনাকে দেখছে তাদের মাথায় আসলে কী খেলা করছে পজেটিভ/নেগেটিভ তা আপনার পক্ষে রিড করা সম্ভব নয়। এই আমার আমি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কাজেই আমাকে নিয়ে লোকজন কী ভাবছে এমন দুশ্চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে নিজেকে বোঝাতে হবে যে, অন্যরা আসলে আপনাকে নিয়ে ততটা ভাবছে না বা আগ্রহী নয়।
(২) নিজেকে ব্যালেন্সে নিয়ে আসুন
অনেক সময় নিজের রেপুটেশন নিয়ে চিন্তা করতে গিয়েই অন্যদের চিন্তা ভাবনাকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে ফেলি। এটা করা যাবে না। “বেশী”টাকে কমিয়ে মোডারেট অবস্থায় আনতে হবে। না হলে আবার সেই স্পট লাইট জোনে ফেলে দেয়া হবে নিজেকে। পুরো ব্যাপারটি আসলে নিজেকে ব্যালেন্সে নিয়ে আসা। অন্যরা কী ভাবলো তা নিয়ে খুব বেশী মাথা ঘামানো যাবে না!
(৩) চিন্তা ভাবনায় পরিবর্তন আনুন
যদি আপনি হঠাৎ করে পড়ে যান এবং আসেপাশের লোকজন হেসে উঠে। ভাবুন আপনি আসলে কতজনের হাসির কারণ হতে পেরেছেন। দেখবেন পড়ে গিয়ে নিজেকে স্টুপিড ভেবে যতটুকু খারাপ লাগবে চিন্তায় পরিবর্তন আনার ফলে ব্যাপারটি আপনাকে আর হীনমন্যতায় ভুগাবে না। কারণ এমন অ্যাকসিডেন্ট যে কারোই যখন তখন হতে পারে। কে, কী ভাবলো তা না ভেবে একটু অন্যরকম করে ভেবেই দেখুন না!
কাজেই অন্য কারো আচার আচরন আপনাকে ভাবাতে বাধ্য করায় না বরং আপনি কীভাবে ব্যাপারটিকে ইন্টারপ্রেট করছেন তার উপর নির্ভর করে।
(৪) নিজের ধ্যান ধারণাকে নিয়ন্ত্রণ করুন
যা আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করা বন্ধ করুন। দৃঢ় মনোবলের একজন সেসব ব্যাপারে ফোকাস করেন না যা তার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। যেমন মানুষের চিন্তা ভাবনা। নিজের ধ্যান ধারণায় মনোযোগ দিন এবং নিয়ন্ত্রণ করুন। অন্যজনের ধ্যান-ধারণা আপনার পক্ষে পরিবর্তন করা সম্ভব না কাজেই এসব ব্যাপার থেকে নিজেকে আলাদা করে দেখুন প্রফুল্ল এবং আনন্দেই থাকবেন।
(৫) অপর জনের পরিস্থিতি বিবেচনা করুন
নিজেকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে অন্যের সমস্যার কথা বেমালুম ভুলে যাই। এমন কাউকে তার সমস্যা থেকে উঠে আসতে মানসিক বা যে কোন রকম সাহায্যে এগিয়ে আসুন। দেখবেন সব ধরনের স্ট্রেস বাতাসে মিলিয়ে গেছে।
(৬) সবাইকে খুশি করার গুরু দায়িত্ব আপনার একার না
খুব পরিচিত একটি কথা। সবাইকে খুশি করা আপনার একার পক্ষে সম্ভব না। আপনার কোনও না কোনও কর্মকাণ্ডে কেউ খুশি হলে কেউ বেজার হবেই। একজনের কাছে যা ভালো লাগবে তা আরেকজনের কাছে খারাপ লাগতেই পারে। কারণ আমরা প্রত্যেকে ভিন্ন সত্ত্বা। কাজেই সবাইকে খুশি করা একজনের পক্ষে সম্ভব নয়।এটা করার চেষ্টাই আপনাকে সবথেকে বেশী স্ট্রেসের মধ্যে ফেলে দিবে।
(৭) ভিন্ন ভিন্ন মতামতের মানুষের সাথে মিশুন
ওই যে একটু আগেই বললাম আমরা সবাই ভিন্ন সত্ত্বা প্রত্যেকরই রয়েছে ভিন্ন বৈশিষ্ট্য।কোন একটি ঘটনাকে একেকজন একেক রকমভাবে দেখে এবং সেভাবেই সংজ্ঞায়িত করে। কাজেই মানুষের সাথে যত বেশী মিশবেন কথা বলবেন ততই জীবনে দেখার ভঙ্গী পালটাবে। তবে এখানে আপনাকে একটু কৌশলী হতে হবে যাদের চিন্তা ভাবনা পজেটিভ এমন লোকদের সাথে মিশা উচিত।
ছবি – মাইউইশহাব.কম
লিখেছেন – নীলা