একটা গাছ লাগালে তাতে পানি দিতে হয়, সার দিতে হয়, কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়, আগাছা পরিষ্কার করতে হয়, গাছের গোঁড়ার মাটির যত্ন নিতে হয়। তাহলেই সেই গাছটা সুস্থভাবে বেড়ে ওঠে এবং তাতে ফুল-ফল ধরে। একটা ছোট শিশুকেও আদর যত্ন করে, সতর্কতার সাথে লালনপালন করে, খাইয়ে পরিয়ে তবেই ধীরে ধীরে শিশুটি সুস্থ সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠে। তাহলে মাথার চুলের সঠিক যত্ন আর পরিচর্যা না করলে চুলের কি সুস্থ সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠা সম্ভব?
– না।
চুলের যত্নে কিন্তু অনেক টাকা খরচ করার প্রয়োজন নেই। চুল পড়া, খুশকিসহ অন্যান্য অনেক চুলের সমস্যার সমাধান করে আমাদের সবার পরিচিত একটি প্রাকৃতিক উপাদান – মেহেদি (Henna)। মেহেদিতে থাকা প্রোটিন এবং ন্যাচারাল অ্যান্টি অক্সিডেন্টস-
– চুল পড়া কমায়।
– নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
– চুলের প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে।
– স্ক্যাল্পের পি এইচ লেভেল ঠিক রাখতে সহায়তা করে।
– চুলের অকালপক্বতা রোধ করে।
– চুলের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে চুলকে হেলদি আর শাইনি করে তোলে।
[picture]
এখন দেখে নিই , চুলের যত্নে আমরা কীভাবে মেহেদি ব্যবহার করতে পারি –
(১) মেহেদি , টক দই আর ডিম
– দুই টেবিল চামচ মেহেদি বাটা/গুঁড়ো
– এক টেবিল চামচ টক দই
– একটা ডিম
সবগুলো উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। পুরো মাথার চুলে আগাগোড়া ভালোভাবে লাগিয়ে নিয়ে এক ঘণ্টা পর ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। ডিমে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন আর ভিটামিন যা চুলকে গোঁড়া থেকে পুষ্টি যোগায়। টক দই স্ক্যাল্পের পি এইচ লেভেল ঠিক রাখতে সহায়তা করে আর চুলের ন্যাচারাল ডিপ কন্ডিশনিং এর কাজ করে।
(২) মেহেদি আর কলা
– দুই টেবিল চামচ মেহেদি বাটা/গুঁড়ো
– একটা পাকা কলা
কলা সামান্য পানির সাথে ভালোভাবে মিক্স করে নিন। এবার গোসলের সময় আপনার রেগুলার শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধোয়ার পর কন্ডিশনারের পরিবর্তে এই প্যাকটিই পুরো মাথায় আগাগোড়া লাগিয়ে দশ মিনিট অপেক্ষা করুন। ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। কলা যে প্রচুর ভিটামিন সমৃদ্ধ ন্যাচারাল কন্ডিশনার তাতো আমরা জানিই। এই প্যাক টি ব্যবহার করলে সপ্তাহে দুইদিন ব্যবহার করলে চুল হয়ে উঠবে আর বেশি হেলদি, শাইনি আর ম্যানেজেবল।
(৩) মেহেদি, মেথি গুঁড়ো আর নারকেল তেল
– ৩ টেবিল চামচ মেহেদি বাটা/গুঁড়ো
– ১ চা চামচ মেথি গুঁড়ো
– ২ টেবিল চামচ নারকেল তেল
সবগুলো উপকরণ ভালো করে মিশিয়ে পুরো চুলে আগাগোড়া লাগিয়ে নিন। পুরো মাথার চুলে আগাগোড়া ভালোভাবে লাগিয়ে নিয়ে এক ঘণ্টা পর ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। মেথিতে থাকা প্রোটিন, ভিটামিন, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আর লেসিথিন চুল পড়া কমিয়ে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। নারকেল তেলের মনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড চুলের সাথে প্রোটিনের বন্ধনকে দৃঢ় করে তোলে আর চুলকে ভেতর থেকে পুষ্টি জুগিয়ে চুলকে করে তোলে আরও উজ্জ্বল আর প্রাণবন্ত।
(৪) মেহেদি, জবা, লেবুর রস আর নারকেল তেল
– ২ টেবিল চামচ মেহেদি বাটা/গুঁড়ো
– একটি জবা ফুল বাটা
– ২ টেবিল চামচ লেবুর রস
– ২ টেবিল চামচ নারকেল তেল
সব কিছু ভালো করে মিশিয়ে নিন। পুরো মাথার চুলে আগাগোড়া ভালোভাবে লাগিয়ে নিয়ে এক ঘণ্টা পর ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। জবা চুল পড়া কমিয়ে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে, আর সেই সাথে চুলের অকালপক্বতা রোধ করতে সাহায্য করে। লেবুর রস খুশকি দূর করে চুলকে মসৃণ করে তোলে। নারকেল তেল চুলের ন্যাচারাল প্রোটেক্টিভ লেয়ার তৈরি করে চুলকে যাবতীয় তাপ, ধুলোবালি, কেমিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
(৫) মেহেদি আর কফির গুঁড়ো
যাদের একটা দুটো করে চুল পেকে যাচ্ছে, কিন্তু মার্কেট থেকে কেনা হেয়ারকালার দিয়ে চুল রাঙাতে ভয় পাচ্ছেন , তারা কিন্তু অনায়াসেই মেহেদি আর কফির গুঁড়ো মিক্স করে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে চুল রাঙাতে পারেন। চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী মেহেদি বাটা/গুঁড়োর সাথে ১-২ টেবিল চামচ কফির গুঁড়ো মিশিয়ে পুরো মাথায় আগাগোড়া লাগিয়ে ঘণ্টা দুয়েক পর ভালোভাবে ঠাণ্ডা পানি (শ্যাম্পু নয়) দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। ব্যস! হালকা লালচে বাদামী রঙে চুল রাঙানো হয়ে যাবে!
(৬) মেহেদি, মুলতানি মাটি আর নারকেল তেল ( এই প্যাকটা শুধুমাত্র তৈলাক্ত স্ক্যাল্পের অধিকারীদের জন্য )
– ২ টেবিল চামচ মেহেদি বাটা/গুঁড়ো
– ২ টেবিল চামচ মুলতানি মাটি
– ১ টেবিল চামচ নারকেল তেল
সব উপকরণের সাথে পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। পুরো মাথার চুলে আগাগোড়া ভালোভাবে লাগিয়ে নিয়ে এক ঘণ্টা পর ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। চুলের বাড়তি তেল, ধুলোবালি, ময়লা সব দূর হয়ে চুল হয়ে উঠবে ঝরঝরে, সুন্দর, উজ্জ্বল।
(৭) মেহেদি আর নারকেলের দুধ
অর্ধেক কোড়ানো নারকেল ব্লেন্ডারে দিয়ে ব্লেন্ড করে পেস্ট-টা একটা পরিষ্কার কাপড়ে ছেঁকে নিন। নারকেলের দুধ পেয়ে যাবেন। এই নারকেলের দুধের সাথে ২ টেবিল চামচ মেহেদি বাটা/গুঁড়ো মিক্স করে পুরো মাথার চুলে আগাগোড়া ভালোভাবে লাগিয়ে নিয়ে এক ঘণ্টা পর ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। নারকেলের দুধ চুলকে গভীর থেকে পুষ্টি জোগানোর পাশাপাশি প্রাকৃতিকভাবে সোজা হতে সহায়তা করে।
তাছাড়াও আর একটা কাজ করতে পারেন সেটা হলো ২০০ মি.লি. খাঁটি নারকেল তেল একটা পাত্রে নিয়ে চুলায় গরম করতে দিন। এবার তাতে ৫-৭টি কাঁচা মেহেদি পাতা ছেড়ে দিন। এবার মিনিট তিনেক তেল গরম হবার পর নামিয়ে নিন। ঠাণ্ডা হলে একটা পরিষ্কার শুকনো বোতলে সংরক্ষণ করে ব্যবহার করুন। সপ্তাহে কমপক্ষে দুই থেকে তিনদিন এই তেল ব্যবহার করলে চুল পড়া কমবে।
তাহলে আর দেরি না করে আজ থেকেই আপনার চুলের যত্নে মেহেদি ব্যবহার করা শুরু করুন। আর কোন সাইড ইফেক্টের ভয় ছাড়াই সম্পূর্ন প্রাকৃতিকভাবে পান গর্জিয়াস চুল।
Take Care of Yourself. Because You are Worth it.
ছবি – বিউটিহ্যাকস ডট কম , স্টাইলক্রেজ ডট কম , বিউটিহলিক ডট কম
লিখেছেন – ফারহানা প্রীতি