অনেক আগে থেকেই মেকআপ বা ফ্যাশনের জগতে “ন্যুড” শব্দটি ব্যবহার করা হয়ে আসছে। ন্যুড মেকআপ, ন্যুড লিপস্টিক, ন্যুড নেইলপলিশ, ন্যুড আইশ্যাডো ইত্যাদি আমাদের কাছে বহুল পরিচিত শব্দ। ন্যুড শুধুমাত্র একটি কালার নয়। ন্যুডকে বেইজ কালারের ভেরিয়েশন বলা হয়। মেকআপের জগতে ন্যুড মেকআপটি বেশ জনপ্রিয় এবং ট্রেন্ডি। সেটা সেলিব্রেটিদের মেকআপ খেয়াল করলেই বোঝা যায় যে, তাদের মেকআপ লুকগুলো ন্যুড এবং ন্যাচারাল ধরনের। ভালো এবং বড় ব্রান্ডের ফাউন্ডেশন কনসিলারের শেইডগুলো লক্ষ্য করলে দেখা যায় সেখানে প্যালেস্ট পওসিলেন (Palest Porcelain) থেকে শুরু করে ডিপেস্ট মহগানি (Deepest Mahogany) পর্যন্ত শেড রয়েছে। আমাদের প্রত্যেকের স্কিনটোন আলাদা হওয়ার ফলে, প্রত্যেকের জন্য পারফেক্ট ন্যুড কালারও আলাদা। কিন্তু আপনার জন্য পারফেক্ট ন্যুড মেকআপ কী রকম হবে? চলুন জেনে নেই কিভাবে খুঁজে পাবেন, ত্বকের ধরন অনুযায়ী পারফেক্ট ন্যুড মেকআপ।
পারফেক্ট ন্যুড মেকআপ করার পদ্ধতি
১. আপনার সঠিক আন্ডারটোন বুঝুন
পারফেক্ট ন্যুড খুঁজে পাওয়ার জন্য সবার আগে আপনার নিজের আন্ডারটোনটা জানতে হবে। এজন্য, আপনার হাতের কব্জির উল্টা পাশ লক্ষ্য করুন। সেখানে শিরা বা ভেইন (vein) দেখতে পাবেন। আপনার শিরার রঙ যদি হয় সবুজ, তবে আপনার আন্ডারটোন ওয়ার্ম। আপনার শিরার রঙ যদি হয় নীল বা বেগুনী হয় তবে আপনি কুল আন্ডারটোনের। আর যদি আপনি আপনার শিরার রঙ সঠিক ভাবে বুঝতে না পারেন, তবে আপনি নিউট্রাল আন্ডারটোন। আন্ডারটোন জেনে নেওয়া অনেক বেশি ইম্পরট্যান্ট। কারণ, ধরুন আপনার সঠিক আন্ডারটোন ওয়ার্ম। এখন আপনি যদি কুল টোনের ফাউন্ডেশন ব্যবহার করেন, তবে আপনার ফাউন্ডেশন দেখতে গ্রে বা কালচে লাগবে। তাই আগে নিজের সঠিক আন্ডারটোনটা বুঝুন।
২. ফাউন্ডেশন অক্সিডাইজেশনের কথা মাথায় রাখুন
একটা আপেল কেটে রাখলে যেমন কিছুক্ষণ পর দেখা যায় সেটা কালচে হয়ে গিয়েছে। তেমনি, বাজারে এমন কিছু ফাউন্ডেশন রয়েছে যেগুলোর ইনগ্রিডিয়েন্টস আমাদের ফেইসের ন্যাচারাল অয়েলের সাথে বিক্রিয়া করে। যার ফলে, ফাউন্ডেশন অ্যাপ্ল্যাই করার কিছুক্ষণ পর আমাদের ফেইস দেখতে কালচে বা রেড লাগতে পারে। তাই ফাউন্ডেশন কেনার আগে অবশ্যই ইনগ্রিডিয়েন্টস লিস্ট চেক করে দেখবেন টাইটানিয়াম ডাইঅক্সাইড (Titanium Dioxide) ও জিংক অক্সাইড (zinc oxide) এগুলো লিস্টের উপরের দিকে আছে নাকি নিচের দিকে। উপরের দিকে থাকলে ফাউন্ডেশন অক্সিডাইজেশনের সম্ভাবনা বেশি। আর নিচের দিকে থাকলে সম্ভাবনা কম। আর যদি লিস্টের উপরের দিকে আছে এমন ফাউন্ডেশন কিনেন, তবে আপনার স্কিনের থেকে এক শেড লাইট ফাউন্ডেশন নিবেন। এতে করে অক্সিডাইজ হলেও দেখতে অতটা কালচে বা রেড লাগবে না।
৩. পারফেক্ট ন্যুড লিপ শেড হিসেবে ফাউন্ডেশনের ব্যবহার
অনেক সময়ই আমরা আমাদের পারফেক্ট ন্যুড লিপ কালার খুঁজে পাই না। এক্ষেত্রে আপনাকে হেল্প করতে পারে আপনার ফাউন্ডেশন। এজন্য, প্রথমে আপনার ঠোঁটকে লিপলাইনারের সাহায্যে লাইন করে নিন। এবার আপনার স্কিনের সাথে ম্যাচ করে এমন ফাউন্ডেশন ঠোঁটে ড্যাব করে অ্যাপ্লাই করুন। এর উপরে ভালো একটি লিপগ্লস দিয়ে নিলেই ব্যস!! আপনার পারফেক্ট ন্যুড লিপস পেয়ে গেলেন। আর লিপগ্লস ব্যবহারের ফলে লিপস দেখতে অনেক ফুলারও লাগবে।
৪. ন্যাচারাল চিকস কালার খুঁজে নিন
আপনার চিকসের জন্য ন্যুড ব্লাশ ব্যবহারের ক্ষেত্রে এমন কালার বেছে নিন, যেটা আপনার স্কিন টোনের কাছাকাছি। অবশ্যই যেন এতে পিংক বা পিচ কালারের আভা থাকে। সবসময় ব্লাশ ব্যবহার করুন ফাউন্ডেশন অ্যাপ্লাইর পর, পাউডার দিয়ে সেট করার আগেই। অথবা সেটিং স্প্রে অ্যাপ্লাইর পরেও লাগাতে পারেন। মোট কথা, ভেজা স্কিনে ব্লাশ ব্যবহার করবেন। এতে করে ব্লাশ লং লাস্টিং হবে এবং সহজে ফেড হয়ে যাবে না।
৫. পারফেক্ট কনসিলার শেড
আমরা অনেকেই আছি, হাইলাইটিং কনসিলারটি দিয়েই দাগ ঢাকার চেষ্টা করি। আর এই কাজটি করার ফলে আমাদের দাগগুলো আরো বেশি করে ফুটে উঠে এবং দেখতে কালচে লাগে। এজন্য, দাগ ঢাকতে অবশ্যই ফাউন্ডেশন ব্যবহারের আগে ১ শেইড ডার্ক কনসিলার নিয়ে দাগের উপর লাগান এবং ব্লেন্ড করে নিন। এতে করে মেকআপ শেষে পারফেক্ট একটা ন্যুড বেইজ পাবেন।
৬. স্কিনটোন অনুযায়ী ন্যুড লিপস্টিক
স্কিনটোন অনুযায়ী ফাউন্ডেশন সিলেক্ট করা যেমন ইম্পরট্যান্ট, তেমনি লিপস্টিকও। নইলে ঠোঁটে লিপস্টিক লাগানোর পর তা মানাবে না এবং দেখতে ফ্যাকাশে লাগবে। লাইট স্কিনে পিচ-বেইজ শেইড বেশ ভালো মানাবে। কুল টোনের স্কিনে পিংক-ন্যুড টাইপ শেইড ভালো লাগবে। মিডিয়াম ব্রাউন স্কিনে ক্যারামেল, টফি ব্রাউন কালার ভালো মানাবে। ডার্ক ব্রাউন স্কিনে চকলেট, মকা শেইডগুলো ভালো লাগবে।
৭. ন্যুড মেকআপের জন্য এক্সট্রা কিছু টিপস
- ন্যুড মেকআপ সবসময় দেখতে ন্যাচারাল লাগে। তাই বেইজ ও ন্যাচারাল এবং ব্লেন্ডেড হওয়া চাই।
- বেইজ মেকআপের পর একটি বিউটি স্পঞ্জে সেটিং স্প্রে নিয়ে, স্পঞ্জটি দিয়ে পুরো ফেইসে ড্যাব করে নিন। এতে করে একটা ব্লেন্ডিং এবং ন্যাচারাল ইফেক্ট পাবেন।
- ফাউন্ডেশনের সাথে লিকুইড ইল্যুমিনেটর মিক্স করে ফেইসে লাগান। এতে করে বেইজটা গ্লোয়ি এবং ন্যাচারাল লাগবে।
- মেকআপে ক্রিজিং এড়াতে প্রথমে ফেইসের স্মুদ জায়গাগুলোতে ফাউন্ডেশন লাগান। এরপর বাকি অংশে ফাউন্ডেশন ব্লেন্ড করে দিন।
এই তো জেনে নিলেন, ত্বকের ধরন অনুযায়ী পারফেক্ট ন্যুড মেকআপ সম্পর্কে। আশা করছি, ন্যুড মেকআপ বিষয়ে কিছুটা হলেও জানতে পেরেছেন। ভালো থাকুন, সুস্থ্য ও সুন্দর থাকুন।
আপনি চাইলে আপনার পছন্দমতো প্রোডাক্ট কিনতে পারেন অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে। আবার যমুনা ফিউচার পার্ক ও সীমান্ত স্কয়ার এ অবস্থিত সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ থেকেও কিনতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি!
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ; কসমো.পিএইছ