নিশ্চয়ই মনে মনে অলরেডি প্রশ্ন করা শুরু করে দিয়েছেন যে এই হোয়াইট নয়েজ আবার কী, তাই না? বেশ চলুন তবে আরও গভীরে আলোচনা করা যাক।
সেই ছোট্টবেলায় যখন সিনেমা দেখতাম তখন প্রায়ই একটা ব্যাপার অবাক লাগত। দেখা যেত কারো মন খারাপ হলে বা খুব বড় কোনো ঘটনা মেনে নিতে না পারলে সিনেমার ডাক্তাররা বলত-“নিরিবিলি কোথাও গিয়ে ঘুরে আসুন অথবা শহর থেকে দূরে কোথাও গেলে হয়তো পেশ্যান্ট স্বাভাবিক হবে।” এমন দৃশ্য দেখে খুব হাসি পেত। আবার মনের মধ্যে রাজ্যের কৌতূহল উঁকিও দিত বটে! এটা ভুল হলে ডাক্তাররা কিছু বলে না কেন? আসলে এটা পুরোপুরি ভুল না। নিরিবিলি কোথাও বা শহর থেকে দূরে গেলে পরিবেশের অনেক পরিবর্তন ঘটে। এতে মানসিক সুস্থতার কি আছে তাই ভাবছেন তো? অবশ্যই সুস্থতার জন্য প্রাকৃতিক কিছু অণুঘটক থাকে। আর শব্দ সব অণুঘটকগুলোর মধ্যে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে!
আমরা সবাই জানি যে, নয়েজ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর। তাই বলে কি হোয়াইট নয়েজও? উহু! আমাদের ব্যস্ত জীবনের সুস্থতায় এটা এক ধরনের থেরাপি-এর নাম বলতে পারেন। যখন সম-তরঙ্গ বিশিষ্ট শব্দ পুনরাবৃত্ত হয়ে বাহ্যিক কোলাহোল থেকে আপনাকে স্বস্তি দেয়, তাই হলো হোয়াইট নয়েজ। কতগুলো হোয়াইট নয়েজ-এর উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটা আরোও বোধগম্য হবে। যেমন ধরুন ফ্যানের শব্দ, এসির শব্দ, সমুদ্রের শব্দ, মৃদু বাতাসে গাছের পাতার শব্দ- এসবই হলো হোয়াইট নয়েজ। আসুন জেনে নেয়া যাক হোয়াইট নয়েজের উপকারিতা!
হোয়াইট নয়েজ ও এর উপকারিতা
১) মেডিটেশন-এ
মেডিটেশন-এর সময় আমাদের মনোযোগ ধরে রাখতে কিছু মিউজিক ব্যবহার করা হয়। মেডিটেশন সফল হতে সাহায্য করে হোয়াইট নয়েজ। কারণ, হোয়াইট নয়েজ আমাদের প্রাত্যহিক কোলাহোলের দেয়ালস্বরূপ।
২) শিশু নিদ্রায়
অনেক সময় বাচ্চারা ঘুমের সময় প্রচুর কান্না করে থাকে। তখন বাচ্চাদের ঘুম পারাতে হোয়াইট নয়েজ যে কতটা কার্যকর তা বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে ইতিমধ্যেই প্রমানিত হয়েছে।
৩) অনিয়মিত নিদ্রা সমস্যায়
আপনি ঘুম নিয়ে টেনশনে আছেন? যাদের ঘুম নিয়মিত নয় বা যাদের ইনসোমনিয়া রয়েছে তাদের জন্য হোয়াইট নয়েজ ব্যবহার বেশ উপকারি। বলা যায় হোয়াইট নয়েজ হবে আপনার ঘুম পাড়ানি মাসি পিসি!
৪) অতিরিক্ত শব্দ শোনা
অনেকেই আছেন যারা কম নয় একটু বেশিই শোনেন। আসলে এটা কান-দোষ। তারা কান-দোষে অতিরিক্ত শব্দ শোনেন যা কি না সেখানে উপস্থিত অন্যান্যরা শুনতে পায় না। এমন অযাচিত শব্দকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘TINNITUS’ (টিনিটাস)। সাধারণত এগুলো অনেকটা মুখে শীষ বাজানো বা ফিসফিস শব্দের মত হয়। এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় হলো হোয়াইট নয়েজ!
৫) মনোযোগ বৃদ্ধি ও বজায় রাখতে
পড়াশোনায় মনোযোগ বৃদ্ধিতে ও বজায় রাখতে হোয়াইট নয়েজ অনেক কাজে দেয়। তাই কিছুটা অমনোযোগী বাচ্চাদের এমনকি যেসব বাচ্চাদের এডিএইচডি- অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভ ডিজঅর্ডার (ADHD- Attention Deficit Hyperactive Disorder) আছে তাদের পড়ানোর জন্য এই নয়েজ ব্যবহার করা হয়।
৬) আইসিইউ (ICU)-তে
বিভিন্ন হসপিটালে আইসিইউ-তে রোগীদের বাহিরের যান্ত্রিক জীবনের ঝঞ্ঝাট থেকে মুক্ত রাখতে ও রিল্যাক্সেশন-এর জন্য হোয়াইট নয়েজ রয়েছে!
৭) ঘূর্ণিরোগে
ঘূর্ণিরোগ অর্থাৎ ভার্টিগো প্রবলেম (Vertigo problem) যাদের আছে তাদের চিকিৎসায় এই নয়েজ বিশেষ কার্যকরী।
এছাড়াও হোয়াইট নয়েজ ঘুম ঘুম ভাব তাড়াতে, কনফিউশন দূর করতে, মানসিক স্তিথিশীলতা, কাজের চাপে মানসিক অবসাদ দূর করতেও সাহায্য করে। কিভাবে এই ব্যস্ত জীবনে ঘরের কাজ আর চাকরি ফেলে বেড়াতে যাওয়া সম্ভব?
আসলেই অনেক কঠিন ব্যাপারটা! আপনার টাফ লাইফ-এর হাফ ছাড়তে কিন্তু বিভিন্ন ধরনের হোয়াইট নয়েজের ইলেকট্রনিক মেশিনও কিনতে পাওয়া যায়, যা আপনার ঘর ও কাজের জায়গাকে রাখবে দূষণীয় শব্দের আড়ালে! সুতরাং, সমুদ্রের গর্জন আর বাতাসে পাতার আন্দোলনে দিন কাটুক সুস্থ দেহ ও মনে!
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ; ইমেজেসবাজার.কম