বাংলাদেশে প্রচলিত এই বিপুল জনপ্রিয় সবজি কিন্তু মোটেও বাংলাদেশী নয়। লাল লাল লোভনীয় টমেটোর উৎপত্তি মেক্সিকোতে। এটা শীতকালীন সবজি হলেও এখন প্রায় সারা বছরই আমাদের রান্নাঘরের ফ্রিজে শোভা পায়। শুধুমাত্র খাওয়া ছাড়াও টমেটোর রয়েছে আরও সব অসাধারণ গুণাগুন । এটা কোলন ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে ভুমিকা রাখে সেই সাথে উচ্চ রক্তচাপ ও সাধারণ সর্দিতেও ব্যবহার করা হয় । কিন্তু শুধু খাওয়া আর রোগের কথা বাদ দিলে আমাদের ত্বক ও চুলের জন্যও টমেটো ভীষণ উপকারী। রূপচর্চা করেন না এমন মানুষ হয়তো বা খুঁজে পাওয়া যাবে কিন্তু নিজের স্কিন-টা ভালো রাখতে চান না এমন মানুষ পাওয়া ভার। তাই আপনি চাইলে ঘরে বসে শুধু ফ্রিজ খুলেই আপনার ত্বকটিকে বেশ ঝলমলে ও প্রাণবন্ত করে নিতে পারেন। চলুন জেনে নিই কিভাবে রূপচর্চায় টমেটোর ৮টি ব্যবহার জানা থাকলে আপনার ত্বককে সজীব করে নিতে পারবেন।
রূপচর্চায় টমেটোর ৮টি ব্যবহার
০১. রোমকূপ বড় হয়ে গেলে ত্বকে সহজেই ময়লা ও জীবাণু প্রবেশ করে। আর এর থেকে ব্রণসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। এক টেবিল চামচ টমেটোর রস নিন, সাথে ২/৪ ফোটা লেবুর রস নিন। এবার তুলোতে করে মুখে সার্কুলার মোশন-এ ম্যাসাজ করুন। ১৫ মিনিট পরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। রেগ্যুলার এই প্যাক লোমকূপ সঙ্কুচিত করতে সাহায্য করবে।
০২. টমেটোর এসিডিটি (acidity) ব্রণের সংক্রমণ রোধে এবং এটা পরিষ্কারে সাহায্য করে। ব্রণ কমানোর মেডিসিনগুলোতে ভিটামিন এ ও সি থাকে। টমেটো প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি ও কে-তে পরিপূর্ণ। আপনার যদি অল্প ব্রণ থাকে তাহলে একটা টমেটো অর্ধেক করে গালে ঘষুন আর যদি বেশি ব্রণের সমস্যা থাকে তাহলে একটা টমেটো চটকে নিয়ে মুখে মাখুন এবং ১ ঘণ্টা রাখুন, পানি দিয়ে ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার (moisturizer) লাগান। রেগুলার যতবার করা যায় করুন আপনার ব্রণগুলো বাধ্য হবে খুব দ্রুত শুকিয়ে যেতে।
০৩. যদি আপনার ত্বক তৈলাক্ত হয় এবং ত্বকের তেলতেলে ভাব দূর করতে আপনি অনেক চেষ্টা করছেন তাহলে টমেটো আপনাকে এই মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিবে দ্রুত। একটা ফ্রেস টমেটো চটকান এবং এর সাথে শসার রস যোগ করুন। তুলায় করে রোজ মাখুন, এটা আপনার ত্বকের তেল কন্ট্রোল (control) করে অ্যাসট্রিনজেন্ট (astringent)- এর কাজ করবে।
০৪. মিশ্র ত্বকের জন্য টমেটো ও অ্যাভোক্যাডো-এর মিশ্রণ খুব ভালো কাজ করে। কারণ টমেটো অ্যাসট্রিনজেন্ট হিসেবে কাজ করে যা ব্ল্যাক হেডস (black heads) ও ত্বকের তেল কন্ট্রোল এজেন্ট (oil control agent) হিসেবে কাজ করে আর অ্যাভোক্যাডো ত্বকে অ্যান্টিসেপ্টিক ও ময়েশ্চারাইজিং (moisturizing)-এর প্রভাব তৈরী করে। অ্যাভোক্যাডো এখন আগোরা (aagora) -তে সহজলভ্য।
টমেটো ও অ্যাভোক্যাডো-এর ঘন প্যাক তৈরি করে ২০ থেকে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তারপরে ঈষদুষ্ণ পানিতে ধুয়ে ফেলুন। এটা আপনার ত্বককে শীতল ও নরম করবে।
০৫. গরম কাল আসলেই রোদে পোড়া ত্বক একটি কমন সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। যা কিছু লাগিয়েই বাইরে যাই না কেন সূর্যের সরাসরি আলো পড়লে ত্বক পুড়বেই। অর্ধেকটা টমেটো নিন, সাথে ২ টেবিল চামচ টক দই। মুখসহ যেসব স্থান রোদে উন্মুক্ত থাকে সেখানে মাখুন। ২০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। টমেটো আপনার ত্বককে ঠাণ্ডা করবে সেই সাথে দই দিবে পর্যাপ্ত প্রোটিন ও নমনীয়তা।
০৬. উজ্জ্বল ত্বকের জন্য টমেটোর রসের সাথে মধু যোগ করুন এবং ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
০৭. হোম মেইড ক্লিনজার (homemade cleanser) বানাতে পারেন টমেটো দিয়ে। সমপরিমাণ টমেটোর রস ও দুধ একটি বোতলে ভরে ফ্রিজে রাখতে পারেন। প্রতিদিন আঙ্গুল দিয়ে লাগিয়ে ১০ মিনিট রাখলেই পাবেন উজ্জ্বল ত্বক।
০৮. এছাড়া এক্সফোলিয়েটর (Exfoliator) হিসেবেও টমেটো চমৎকার। টমেটো অর্ধেক করে কেটে চিনিতে ডুবিয়ে মুখে ঘষতে হবে ১০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের মরা চামড়া উঠে ত্বক উজ্জ্বল হবে।
রূপচর্চায় টমেটোর ৮টি ব্যবহার নিয়ে এই তো বেশ জেনে ফেললেন। আশা করি সবার ভালো লাগবে লেখাটি। তবে হ্যাঁ, টমেটোতে আপনার আলার্জি আছে কি না, তা কিন্তু টেস্ট করে নিতে ভুলবেন না! প্রাকৃতিক টমেটো কানে লাগিয়ে ৫-১০ মিনিট রাখলে যদি আপনার কোনো ইরিটেশন (irritation) হয় তবে সেক্ষেত্রে আপনার প্রাকৃতিক টমেটো ব্যবহার না করাই ভালো।
ছবিঃ সংগৃহীত – ফোয়ারা ফেরদৌস এবং ইন্টারনেট, সাজগোজ.কম, সাটারস্টক