বর্তমানে অতি প্রয়োজনীয় স্কিন-প্রোডাক্টের একটি হচ্ছে টোনার। আমাদের মধ্যে যারা ত্বক নিয়ে সচেতন তারা কমবেশি সবাই টোনার ব্যবহার করি। কিন্তু অনেকেই টোনার সম্পর্কে এখনও পুরোপুরি জানেন না। ভালো ব্রান্ডের টোনার ব্যবহারে আপনার ত্বকে আসবে সজীবতা আর প্রাণবন্ততা। পাবেন অনেক ধরনের স্কিন সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি।
ত্বকের যত্নে টোনারের আবশ্যিকতা, প্রয়োজনীয়তা আর উপকারীতা সম্পর্কে আজ আলোচনা করা হবে। জানতে পারবেন কেন টোনার ব্যবহার করা অতীব জরুরী।
টোনার নিয়ে প্রাথমিক ধারণাঃ
টোনার মূলত ক্লিনজিং এর পর ব্যবহার করতে হয়। আগে আমরা ত্বক পরিষ্কার করার জন্য যে বার সোপ কিংবা বার ক্লিনজার ব্যবহার করতাম, তাতে স্কিনের পিএইচ লেভেল বেড়ে যেত । স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেড়ে যাওয়া পিএইচ লেভেল ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। এর স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে সাধারণত টোনার ব্যবহার করা হত। কিন্তু নামী-দামি ব্রান্ডের কিনজিং প্রোডাক্ট এ ত্বকের পিএইচ এর মাত্রার কোনো পরিবর্তন হয় না বললেই চলে। মূলত ক্লিনজিং রুটিনে টোনারের ব্যবহার খুব তাড়াতাড়ি আপনাকে ফলাফল দিবে, যা আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।
ত্বকের যত্নে টোনারঃ
সারাবছর জুড়ে আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে সাথে ত্বকের অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন হয়। বাইরের দূষণ, ধূলা-বালি, ময়লা, ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণে টোনারের ভূমিকা অনেক। যাদের তৈলাক্ত ত্বক কিংবা যারা ব্রণের সমস্যায় ভোগেন, টোনার বিশেষত তাদের জন্য প্রয়োজন। অথবা যারা নিয়মিত ভারী মেকাপ বা সানস্ক্রিন এর মত ভারী স্কিন প্রোডাক্ট ব্যবহারে অভ্যস্ত, তাদের ক্লিনজিং রুটিনে টোনার জরুরী।
টোনার ব্যবহারে উপকারিতাঃ
১। ত্বকের পিএইচ এর স্বাভাবিক মাত্রাঃ
প্রাকৃতিক ভাবে আমাদের স্কিন এসিডিক, যেখানে পিএইচ এর মাত্রা ৫ থেকে ৬ এর মাঝে। এলকালাইন জাতীয় সোপ ব্যবহারে অনেক সময় পিএইচ ব্যালেন্স বিঘ্ন হয়। ফলশ্রুতিতে ত্বকে অতিরিক্ত তেল হতে পারে। কিন্তু টোনার এর ব্যবহার খুব দ্রুত পিএইচ এর মাত্রা ব্যালেন্স করে।
২। লোমকূপের আকৃতিঃ
ছোট কটন বলের মাধ্যমে টোনার আস্তে আস্তে স্কিনে লাগানোর পর তা অতিরিক্ত তেল অপসারণ করে, এতে লোমকুপের আকৃতি তুলণামূলক ছোট দেখায়।
৩। ত্বকের আর্দ্রতাঃ
কিছু কিছু টোনার হিউমেকটেন্টস। যার মানে এরা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
৪। ত্বকের সজীবতাঃ
ময়লা আর তৈলাক্ত ত্বকে টোনার সজীবতা ফিরিয়ে আনে।
৫। ত্বকের উপর সুরক্ষা লেয়ারঃ
টোনার ত্বকের উপর সুরক্ষা লেয়ার তৈরি করে। ত্বকের ব্লাড সার্কুলেশন বাড়িয়ে, একে প্রাণবন্ত করে তুলে।
৬। ত্বক পরিষ্কার করার পর টোনার লোমকূপ আর আন্তঃকোষীয় দৃঢ়তা বাড়ায়। এতে করে বাইরের দূষণ থেকে ত্বক রক্ষা পায়। এটি মুখ ধোয়ার পানিতে যে ক্লোরিন আর মিনারেল থাকে তা অপসারণ করে ত্বককে রক্ষা করে।
৭। ত্বকের লালচে ভাব কমায়। নাজুক ত্বকে টোনার ব্যবহারে বেশ আরাম অনুভূত হয়।
৮। অনেকক্ষেত্রে রোদে পোড়া ভাব কমে যায়, ত্বকের বলিরেখাও দূর হয়।
টোনার নির্বাচনের সময় যা দেখবেনঃ
Alcohol-based কিংবা Glycol-based টোনার এর চেয়ে Water-based টোনার আপনার ত্বকের সাথে বেশি মানানসই হবে। কারণ এতে Niacinamide এর মত উপাদান থাকে। যা টোনারের কার্যকারীতা অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। ব্যক্তিগত ভাবে টোনার নির্বাচনের সময় আমি সুগন্ধিযুক্ত টোনার পছন্দের বাইরে রাখি।
যে ধরনের টোনার ব্যবহার করা অনুচিতঃ
Alcohol আর Astringent সমৃদ্ধ টোনার ব্যবহার করা উচিত নয়। কেননা এতে ত্বকে ফ্রি রেডিক্যাল ড্যামেজ হয়, যা ত্বকে কোলাজেন তৈরিতে বাঁধার সৃষ্টি করে। ত্বক নাজুক হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত সুগন্ধযুক্ত টোনার ব্যবহারেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
লিখেছেনঃ নীল
তথ্যসূত্রঃ টুডে.কম
ছবিঃ মেকাপএ্যান্ডবিউটি.কম