ওজন কমাতে বা ফিগার শেইপে রাখতে আমরা সবাই খুব সচেতন সব সময়। সেজন্য শুধু নামমাত্র ডায়েট করলেই হবে না বরং তার পাশাপাশি চাই সচেতনতা এবং ডায়েট চার্টে কোন কোন খাবার রাখা উচিত সে সম্পর্কে ভালো মতো জানা। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে মেটাবোলিজমের সম্পর্কে অবশ্যই ধারনা থাকতে হবে। মেটাবোলিজম হচ্ছে যে হারে আমাদের শরীরের ক্যালরি চর্বিতে পরিনত না হয়ে বার্ন হয়ে যায় সেটি।
তাহলে বুঝতেই পারছেন শরীরের মেটাবোলিজম রেট বেশি থাকলে খুব সহজেই অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে আনা সম্ভব। এখন প্রশ্ন হলো কী করে আমরা শরীরের মেটাবোলিজম বাড়াতে পারি? না, খুব বেশি কিছু করতে হবে না, শুধু আপনার ডায়েট চার্টে এমন সব খাবার যোগ করতে হবে যেগুলো মেটাবোলিজম বাড়াতে সাহায্য করবে। আজকের এই লেখা তাই তেমন কিছু খাবার নিয়ে যেগুলো আমাদের শরীরের মেটাবোলিজমকে বাড়াতে কার্যকর ভুমিকা পালন করে।
মেটাবোলিজম রেট বাড়াতে ৮টি কার্যকর খাবার
১) ব্রোকোলি
দেহের মেটাবোলিজম বাড়িয়ে ওজন কমিয়ে আনতে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন সি এই দুটি জিনিস একসাথে খুব কার্যকর। ব্রোকোলিতে এই দুটি জিনিসই রয়েছে উচ্চমাত্রায়। ক্যালসিয়াম মেটাবোলিজম বাড়িয়ে দেয় আর অন্যদিকে ভিটামিন সি আরও বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম শোষণ করতে সাহায্য করে।
তাই এই দুটি জিনিস শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে খুবই কার্যকর ভুমিকা পালন করে। তাই খাবারের তালিকায় ব্রোকোলি পরিমাণ বাড়িয়ে খুব সহজেই কমিয়ে নিতে পারেন দেহের অতিরিক্ত ওজন।
২) আদা
আদা দেহের মেটাবোলিজম বাড়ানোর সাথে সাথে ব্লাড সার্কুলেশন এবং ডাইজেস্টিভ সিস্টেমও ইম্প্রুভ করতে সাহায্য করে। আদার খোসা ছাড়িয়ে গ্রেট করে সালাদের ড্রেসিং এর সাথে যোগ করতে পারেন অথবা চায়ের সাথে যোগ করতে পারেন আদার রস।
৩) লেবু
লিভার হচ্ছে আমাদের দেহের এমন একটি অংশ যা ফ্যাট বার্ন করতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। লেবুর রসে থাকা এনজাইম, ভিটামিন সি এবং অন্যান্য উপকারী উপাদান লিভারকে ডিটক্সিফাই করে যার ফলে লিভারের কার্যক্ষমতা আরও বেশি বৃদ্ধি পায়। লেবুর রস লিভারকে পরিষ্কার করার মাধ্যমে দেহের মেটাবোলিজম রেট বাড়াতে সাহায্য করে। সকালে এক গ্লাস ঈষদুষ্ণ পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে পারেন, অথবা সালাদ বা সবজির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন লেবুর রস।
৪) পানি
আমাদের দেহের ওজনের দুই তৃতীয়াংশ ওজনই হচ্ছে পানির ওজন। তাহলে বুঝতেই পারছেন দেহের জন্য পানি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাই যখন শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয় তখন শারীরিক বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে। এর ফলে শরীরের মেটাবলিক ফাংশনও ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার মাধ্যমে শরীর হাইড্রেটেড থাকে যার ফলে মেটাবোলিজম বৃদ্ধি পায় এবং ওজন কমাতে সহায়তা করে। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে ৬-৮ গ্লাস পানি পান করুন।
৫) জাম্বুরা
জাম্বুরা দেহের মেটাবোলিজম বাড়াতে খুবই কার্যকর একটি খাবার। এজন্যই বিভিন্ন ডায়েট প্ল্যানে জাম্বুরাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী, প্রতিদিন সকাল, দুপুর এবং রাতের খাবারের পূর্বে অর্ধেক জাম্বুরা অথবা দিনে ৩ বার জাম্বুরার জুস পানের মাধ্যমে ১২ সপ্তাহে ৪ পাওন্ড এর মতো ওজন কমানো সম্ভব। জাম্বুরা শরীরের ক্যালরিকে চর্বিতে রূপান্তরিত করার পরিবর্তে এনার্জীতে রূপান্তর করে । তাই যারা ওজন কমাতে ইচ্ছুক তারা তাদের ডায়েট প্ল্যানে যোগ করে নিতে পারেন এই কার্যকর খাবারটি। তবে যাদের গ্যাস্ট্রিক রয়েছে বা অন্যান্য মেডিকেশনে আছেন তারা অবশ্যই নিজ নিজ ডাক্তারের সাথে কথা বলে নেবেন।
৬) বাঁধাকপি
বাঁধাকপিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি যা শরীরের মেটাবোলিজম বাড়ানোর জন্য প্রাকৃতিক একটি উপাদান হিসেবে বিবেচিত। প্রতিদিনের সবজ়ির তালিকায় অবশ্যই বাঁধাকপি রাখুন। আপনার সালাদের সাথেও যোগ করতে পারেন এই স্বাস্থ্যকর সবজিটি।
৭) ওটমিল
সকালের শুরুটা করুন এক বাটি ওটমিল দিয়ে। এটি ফাইবারে সমৃদ্ধ একটি খাবার যা ক্যালরি বার্ন করতে খুবই উপকারী। ওটমিল কোলেস্টেরল লেভেল কমানোর সাথে সাথে হার্টের রোগের সম্ভাবনাও কমিয়ে দেয় অনেকখানি।
৮) স্যালমন এবং টুনামাছ
শরীরে লেপটিন নামক এক ধরনের হরমোনের পরিমাণ যদি বেড়ে যায় তাহলে মেটাবোলিজম হ্রাস পায় এবং ফলাফল স্বরুপ ওজন বেড়ে যায়। স্যালমন এবং টুনা মাছে এমন এক ধরনের অয়েল রয়েছে যা শরীরের লেপটিনের পরিমাণ কমিয়ে আনতে সাহায্য করে যার ফলে মেটাবোলিজম রেট বাড়ে। তাই আপনার প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় এই সামুদ্রিক মাছগুলো রাখতে ভুলবেন না যেন।
ছবি- সংগৃহীত: সাটারস্টক