বয়স বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই ত্বকে তার ছাপ পড়বে। কিন্তু ছেলে কিংবা মেয়ে কেউই এই বিষয়টাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারে না। সব মানুষই চায় তারুণ্য ধরে রাখতে। আবার অনেক সময় দেখা যায় বয়সের তুলনায় ত্বকের বয়স অনেক বেশি মনে হয় অনেকের। ঠিক একইভাবে অনেক মানুষের মুখ বা শরীরের ত্বক এতো সুন্দর যে অবাক হয়ে যেতে হয়। একটু সচেতন থাকলে ত্বকে বয়সের ছাপ অনেকখানি এড়ানো যায়। একইসাথে বেশ কিছু অভ্যাসের মাধ্যমে ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখা যায়। আজকে সেই বিষয়গুলো নিয়েই কথা বলবো যে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কোন কোন অভ্যাসগুলোর জন্য ত্বকের বয়স বেড়ে যাচ্ছে বা বেশি দেখাচ্ছে।
যেসকল অভ্যাসের কারণে ত্বকের বয়স বাড়ে
১) সানস্ক্রিন সঠিকভাবে ব্যবহার না করা
আমরা অনেকেই মনে করি সান প্রোটেকশন শুধু সাগরে গেলেই নিতে হয়। এছাড়া এর আর কোন দরকার নাই। আবার অনেকের ধারণা এটা শুধুমাত্র মেয়েরাই ব্যবহার করবে, ছেলেদের কোন দরকার নেই। ছেলে কিংবা মেয়ে যারাই সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা এই সময়ে বাইরে রোদের আলোতে থাকে অর্থাৎ কলেজ, ভার্সিটি কিংবা অফিসের কাজে বাইরে ব্যস্ত থাকে, তাদের প্রত্যেকের উচিত সঠিক মাত্রার সানস্ক্রিন ক্রিম-লোশন ব্যবহার করা। একটানা এক ঘণ্টার বেশি রোদে থাকলে ত্বক পরিষ্কার করে আবার সানস্ক্রিন লাগিয়ে নেয়া। এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সানস্ক্রিন কেবল মুখে লাগালেই হয় না। শরীরের যেই যেই অংশ খোলা থাকে যেমন- গলা, ঘাড়, হাত, পা এই সমস্ত জায়গায় সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিতে হবে। কেননা সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি ত্বকে নানাভাবে ক্ষতি করে যার ফলে ত্বকের চামড়া আদ্রতা হারিয়ে শুষ্ক হয়ে যায়, রোদে পোড়া ত্বককে স্বাভাবিকভাবেই বুড়োটে দেখায়।
২) পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব
পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম যে আমাদের শরীরের জন্য কতোটা তা উপকারী তা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। একদিন ঠিকমতো ঘুম না হলেই চোখের নীচে ফোলা ফোলাভাব দেখা যায়, চেহারায় ক্লান্তির ছাপ পড়ে যায়। আবার ঘুমটা যদি ফ্রেশ হয়, তাহলে ঘুম থেকে ওঠার পর শরীর, চেহারা একদম ফ্রেশ হয়ে যায়। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম দেহের ক্লান্তি দূর করে শরীর ও ত্বককে সুন্দর, প্রানবন্ত রাখে।
৩) তাপমাত্রার তারতম্য
তাপমাত্রার তারতম্য ত্বকের বয়স বেড়ে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ। শীতে খুব বেশি হিটে অনেকক্ষণ থাকা অর্থাৎ ঠান্ডার কারণে গরম পানির তাপ বা রুম হিটার ব্যবহার করা এবং একইভাবে গরমে এসির মধ্যে খুব বেশী ঠাণ্ডায় অনেকক্ষণ থাকা আমাদের ত্বকের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এতে ত্বকের স্বাভাবিক তাপমাত্রা নষ্ট হয়ে যায় এবং ত্বকের সৌন্দর্য লোপ পায়।
৪) চোখের নীচ ও ঠোঁটের সঠিক যত্নের অভাব
দেহের ত্বক এমনকি মুখের ত্বকের চেয়েও অনেক বেশী সংবেদনশীল আমাদের ঠোঁট ও চোখের নীচের ত্বক। তাই রাতে ঘুমানোর আগে চোখের নীচে ভালোমানের আন্ডার আই ক্রিম লাগাতে হয়। এতে চোখের পাশে বলিরেখা পড়ে না, চোখের ফোলাভাব কমে যায় এবং ডার্ক সার্কেলও কমে যায়। একইসাথে ঠোঁটে ভেসলিন বা এই জাতীয় কিছু ব্যবহার করে ঘুমালে ঠোঁট ফেটে যায় না এবং ঠোঁটের ত্বক ভালো থাকে। ফলে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে পারে না।
৫) মেকআপ যথাযথভাবে ত্বক থেকে পরিষ্কার না করা
বেশি মেকআপ ব্যবহার করা, সেটা যত বেশি দামের ভালো ব্র্যান্ডেরই হোক না কেন ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। কেননা মেকআপের রাসায়নিক উপাদান ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়। অনেকে আবার মেকআপের ব্যবহার করে সেটা যথাযথভাবে ত্বক থেকে পরিষ্কার করে না, যা ভয়ংকর ক্ষতি করে ত্বকের। আর এর ফলে র্যাশ ওঠা, ত্বকের রঙ নষ্ট হওয়া, বলিরেখাসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় যেগুলো ত্বকে বয়সের ছাপ ফেলে দেয়।
৬) তামাক বা অ্যালকোহল বেশি গ্রহণ
বেশি মাত্রায় তামাক, অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করলে ত্বকের ওপর তার বাজে প্রভাব পড়ে। ফলে ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে তারুণ্য হারিয়ে যায়।
৭) অতিরিক্ত উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা করা
আমাদের সবার জীবনেই কম বেশি সমস্যা থাকে। সেটা নিয়ে চিন্তা না করে বরং ভালো থাকার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। আপনি যদি অনেক বেশি দুশ্চিন্তা করেন, তবে তা আপনার চেহারায় স্পষ্ট ফুটে উঠবে। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, অবসাদগ্রস্ত মানুষকে দেখলেই বোঝা যায়। ত্বকে, চোখে একটা অবসন্ন ভাব, ক্লান্তি ফুটে উঠে। এতে করে আপনার বয়সের চেয়েও অনেক বেশি বয়স্ক দেখায়।
৮) খাদ্যাভ্যাস
আমাদের দৈনন্দিনের ব্যস্ত জীবনে আমরা এমন অনেক খাবার খেয়ে থাকি যেগুলো শুধু ত্বক কেন শরীরের জন্যই প্রচণ্ড ক্ষতিকর। ফাস্ট ফুড, কোল্ড ড্রিঙ্কস, ভাজা পোড়া খাবার এগুলো আমাদের ত্বকে ব্রণ, র্যাশ এ জাতীয় সমস্যার তৈরি করে। তাই এই খাবারগুলোকে যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে। আবার এমন অনেক খাবার আছে যেগুলো ত্বকের জন্য অনেক উপকারী, যা ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বল করে প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। যেমন- বিভিন্ন ধরনের বাদাম, ফল, শাক-সবজি ইত্যাদি।
এই বিষয়গুলো আমরা অনেকেই হয়তো জানি না আবার অনেকে জেনেও ঠিকমতো মানি না। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু বাজে অভ্যাস পরিবর্তন করে, একটু খানি সতর্ক হয়ে চললে খুব সহজেই আমরা পারি ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে। আমাদের ত্বককে বার্ধক্যের হাত থেকে রক্ষা করতে। কেননা দিন শেষে আপনার সৌন্দর্যটা আপনারই থাকবে যা আপনাকে করে তুলবে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী।
ছবি- সংগৃহীত: সাজগোজ