চুলের যত্নে নারকেল তেলের অসাধারণ ব্যবহার যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। এই তেলটির উপকারিতার কথা কারোরই অজানা নয়। এটি যেমন চুলের যত্নে ব্যবহৃত হয়, তেমনি এর আরো অনেক গুণ রয়েছে। নারকেল তেলের রয়েছে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য যা ত্বক, চুল এমনকি দেহের বিভিন্ন উপকার করে থাকে। তাই আজ আপনাদের জন্য থাকলো নারকেল তেলের বিস্ময়কর ৮ টি গুণের কথা যা জানলে আপনি অবাক হবেন। চলুন তাহলে নারকেল তেলের ৮ টি বিস্ময়কর গুণের কথা জেনে নেয়া যাক।
১. ঠোঁটের যত্নে
শীত হোক বা গরম, অনেকেই সারা বছর ঠোঁট ফেটে যাওয়া বা নিষ্প্রাণ ঠোঁটের সমস্যায় ভুগে থাকেন। ঠোঁট দুটোকে সুন্দর রাখতে সারা বছর হিমসিম খেতে হয়। তাদের জন্য নারকেল তেল একটি সুন্দর সমাধান হতে পারে, কারণ এটি আপনার ঠোঁটকে হাইড্রেট করবে এবং সেই সাথে ময়েশ্চারাইজড করে তুলবে এক নিমেষেই। প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক-দুই ফোঁটা নারকেল তেল ঠোঁটে অ্যাপ্লাই করে ঘুমিয়ে পরুন। আর সকালে উঠেই পান সুন্দর, কোমল ঠোঁট।
২. দাঁতের যত্নে
বাসায় হঠাৎ করে টুথপেস্ট শেষ হয়ে গিয়েছে? নতুন পেস্ট টিউব কিনতে যাওয়ার সময় নেই? কোন চিন্তা নেই, বাসায় নারকেল তেল আছে তো, এতেই হবে। অল্প নারকেল তেলের সাথে ১ চা চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে নিন। তারপর এটা দিয়ে দাত ব্রাশ করে ফেলুন। তারপর দেখুন আপনার দাঁত কেমন ঝকঝক করছে। হেলদি গাম, স্ট্রং দাঁত এবং ফ্রেশ নিশ্বাস পাওয়ার জন্য নারকেল তেল খুবই ভালো কাজ করে। এতে থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রোপার্টিজ জীবাণুদের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং দাঁতের মাড়িকে শক্তিশালী করে তোলে। আপনি চাইলে ১ কাপ পানির সাথে ১ চা চামচ নারকেল তেল যোগ করে এটা দিয়ে কয়েক মিনিট গারগল করতে পারেন। এটি আরো ভালো কাজ করে। এটাকে ‘Oil pulling’-ও বলা হয়ে থাকে।
৩. নখের যত্নে
অনেকেই পাতলা এবং ভঙ্গুর নখের সমস্যা ফেইস করেন। কারো কারো নখ একটু বড় হলেই ভেঙে যায় বা নেইল পলিশ বেশিদিন ইউজ করলে নখে ফাঙ্গাল ইনফেকশন দেখা দেয়, তাদের জন্য নারকেল তেল খুব ভালো একটি সমাধান। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনার নখগুলিতে নারকেল তেল ব্যবহার করুন, কারণ সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে এটি সবচেয়ে ভালো সময়। ম্যানিকিওর করার পরেও আপনি এটি ব্যবহার করতে পারেন।
৪. মেকআপ তুলতে
প্রত্যেক রাতে, আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার মেকআপ রিমুভ করার জন্য নারকেল তেল ব্যবহার করি। আমি একটি তুলোর প্যাড-এর উপর একটু নারকেল তেল নিয়ে আস্তে আস্তে মুখে চেপে চেপে মেকআপ তুলে নেই। কোন রকম কষ্ট ছাড়াই খুব সহজেই মেকআপ উঠে আসে। তারপর আমি হালকা গরম পানি এবং ফেইস ওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিই তারপর নরম তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে ময়েশ্চারাইজার ক্রিম লাগিয়ে নেই।
৫. গর্ভাবস্থায় ত্বকের যত্নে
নারকেল তেল গর্ভাবস্থার সময় ত্বক পরিষ্কার করে, ত্বক ময়েশ্চারাইজড করে এবং সাথে সাথে ত্বক প্রসারণের চিহ্নগুলিও রিমুভ করতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় ত্বকের ফাটা দাগগুলো আগে থেকেই ম্যানেজ করতে চাইলে নারকেল তেল ঐ দাগে একবার সকালে এবং রাতে একবার প্রয়োগ করা উচিত।
৬. শেভিং ক্রিম হিসেবে
শেভিং ক্রিম হিসেবে নারকেল তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। টুথপেস্ট-এর মত শেভিং ক্রিমও যদি হঠাৎ শেষ হয়ে যায়, তখন এর বদলে নারকেল তেল মেখে শেভ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে শেভিং এড়িয়া-তে এটি মেখে শেভ করে নিতে হবে এবং শেভ করার পরে দেখতে পাবেন এটি শুষ্ক এবং রুক্ষ ত্বকের পরিবর্তে আপনার ত্বক মসৃণ এবং আর্দ্র করে দিয়েছে।
৭. বডি অয়েল হিসেবে
সত্যি বলতে গেলে, বাজারে বিক্রিত বডি ম্যাসাজ অয়েল-গুলো একটু ব্যয়বহুল হয়। সেক্ষেত্রে আপনি ব্যবহার করতে পারেন নারকেল তেল। কারণ বডি অয়েল এবং কোকোনাট অয়েল-এর কাজ কিন্তু প্রায় একই। এ দুটোই বডি ময়েশ্চারাইজিং-এর কাজ করে থাকে। তাই অযথা ব্যয় করার কি দরকার বলুন?
৮. সানস্ক্রিন হিসেবে
আপনি কি জানেন নারকেল তেলে আছে প্রাকৃতিক এসপিএফ ৪? এটি একটি প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন হিসেবে কাজ করে। আর তাই প্রতিবার গোসল শেষে ত্বক মুছে নিয়ে সাথে সাথে আপনার ত্বকে নারকেল তেল মালিশ করুন। এটি শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বককে হাইড্রেট করে এবং সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করে। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস ত্বককে ভেতর থেকে কোমল করে তোলে এবং ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া ও রিংকেল পড়া থেকে ত্বককে রক্ষা করে।
তাহলে দেখলেনতো, নারকেল তেল শুধুমাত্র চুলের যত্নেই নয় এমনকি ত্বকের যত্নে এবং বিভিন্ন কাজেও ব্যবহার হয়ে থাকে। তাই সম্পূর্ণ দেহের সুরক্ষায় আজ থেকেই নারকেল তেল ব্যবহার করা শুরু করে দিন।
ছবি- ভেরিটার্ম.কম