মেছতা বা মেলাজমা খুব সাধারন একটি স্কিন প্রব্লেম। নারী ও পুরুষ সবাই-ই সমানভাবে এই প্রব্লেমটিতে আক্রান্ত হয়। এই রোগটির কারণে ত্বকের রঙ অসমান হয়ে যায় ও মুখের জায়গায় জায়গায় বাদামি ছোপ পরে যায়। অতিরিক্ত রৌদ্রের তাপে মুখের ত্বকে মাত্রাতিরিক্ত মেলানিন উৎপাদনের মাধ্যমে মুখের ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হবার কারণে মেছতার সৃষ্টি হয়। আরো নানা কারণে মেছতা হতে পারে। যেমন –
- বডির হরমোনাল চেঞ্জ এর কারণে হতে পারে
- অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে
- টক্সিন,থাইরয়েড সমস্যার কারণে
- এমন কি জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের কারণে হতে পারে
[picture]
মেছতা দূর করার জন্যে মার্কেটে অনেক প্রকার ক্রিম পাবেন কিন্তু মনে রাখবেন এসব ক্রিমের নানান ধরনের সাইড এফেক্ট থাকে। তাই অনেকেই চান সহজ ও ন্যাচারাল পদ্ধতি মেছতার হাত থেকে মুক্তি পেতে আর সাইড এফেক্ট মুক্ত থাকতে। এখানে মেছতা দূর করার কিছু ন্যাচারাল পদ্ধতি দেয়া হল। যার যেটা স্যুট করে ধৈর্য্য ধরে সেটাই করবেন কিছু দিনের মধ্যেই ফলাফল পাবেন।
অ্যালোভেরা জেল
একটা ফ্রেশ অ্যালোভেরার পাতা নিন। কেটে এর ভেতর থেকে জেলটুকু বের করে নিন। এবার এই জেলটুকু সারা মুখে লাগিয়ে এক দুই মিনিট ম্যাসাজ করে ১৫ থেকে ২০ মিনিট লাগিয়ে রেখে হালকা গরম পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন দুইবার করে করুন কয়েক সপ্তাহ।
ওটমিল
ওটমিল একটা দারুণ এক্সফলিয়েটিং উপাদান যা ত্বকের ব্রাউন স্পট ও মৃতকোষ সরিয়ে স্কিনকে করে উজ্জ্বল গ্লোয়িং। দুই চা চামচ ওটমিল, দুই চা চামচ দুধ এবং এক চা চামচ মধু মিশিয়ে স্কিনের মেছতা আক্রান্ত জায়গায় লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। এরপর পানি দিয়ে হালকা ঘষে ঘষে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার করুন এক মাস।
লেবুর রস
লেবুর রস একটি ন্যাচারাল স্কিন লাইটেনার। এটি ন্যাচারালি স্কিন ব্লিচ করে থাকে। ফলে স্কিনের পিগমেন্টেড অংশটি হালকা করতে সক্ষম।একটি লেবু কেটে রস বের করে মুখের মেছতা আক্রান্ত স্থানে সরাসরি মাখুন। এরপর ২০মিনিট রেখে হালকা গরম পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন দুই দিন করে টানা তিন সপ্তাহ লাগিয়ে দেখুন মেছতা গায়েব হয়ে যাবে।
অ্যাপল সাইডার ভিনেগার
এর মধ্যে থাকা এসিটিক এসিডের কারণে এটি খুব কার্যকরি একটি স্কিন ব্লিচিং এজেন্ট হিসেবে স্বীকৃত। সমপরিমাণ পানি ও ভিনেগার নিয়ে মিশিয়ে মেছতা আক্রান্তস্থানে লাগান এবং বাতাসে শুকাতে দিন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরে হালকা গরম পানিতে ধুয়ে ফেলে হালকাভাবে মুখ মুছে ফেলুন। প্রতিদিন একবার করে করুন।
হলুদ
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ন্যাচারাল স্কিন লাইটেনার হিসেবে পরিচিত হলুদের মধ্যে থাকা নানা গুণাগুণ ত্বকের মেলানিন কমিয়ে মেছতা হালকা করতে খুবই কার্যকর। এক চা চামচ হলুদের মধ্যে ৫ চা চামচ দুধ দিন। লিকুইড দুধ ব্যবহার করা ভালো। এর মধ্যে দিন দুই চামচ বেসন। এইবার এই ঘন ক্রিমের মত পেস্টটি মেছতা আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। হালকা গরম পানিতে মুখ ধুয়ে মুছে নিন।প্রতিদিন একবার করে করুন।
কাঠ বাদাম
কাঠবাদামের মধ্যে থাকা হাই প্রোটিন ও ভিটামিন সি স্কিন মসৃণ করে, রঙ হালকা করে ও স্কিনে পুষ্টি যুগিয়ে হেলদি গ্লো আনে। এটি মেছতা রিমুভ করতেও সমানভাবে সক্ষম। দুই চামচ বাদাম বাটা অথবা গুড়ার সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে মুখে মেছতার উপর লাগিয়ে রাখুন ৩০ মিনিট। হালকা গরম পানিতে মুখ ধুয়ে মুছে নিন। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন করুন যতক্ষণ না কোন ইম্প্রুভমেন্ট দেখছেন।
অথবা ৬/৭ টি বাদাম সারাদিন কয়েক চা চামচ দুধের ভিতর ভিজিয়ে রাখুন। এরপর বেটে ক্রিমের মত বানান। এবার এই ক্রিমটি আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে রাখুন সারা রাত। প্রতিদিন একবার করে টানা দুই সপ্তাহ লাগান।
পেঁপে
পেঁপের ভিতর থাকা পেপেইন নামক এনজাইমের কারণে এটি ন্যাচারাল এক্সফলিয়েটিং এজেন্ট হিসেবে খুব ভালো কাজ করে। এটি স্কিনের ক্ষতিগ্রস্ত কোষকে সারিয়ে তোলে ও মৃতকোষ দূর করে। আধা কাপ পাকা পেঁপে নিয়ে থেতলে নিন। এবার এতে মিশান দুই টেবিল চামচ মধু। এবার আক্রান্ত স্থানে ২০ মিনিট লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন একবার করে কয়েক মাস লাগাতে হবে।
চন্দন গুড়া
স্কিনের রঙ হালকা কারি উপাদানগুলো মধ্যে খুব ভালো হল চন্দন। এটি স্কিনের যে কোন দাগ সারাতে খুব ভালো কাজে দেয়। মেছতার মত জেদি দাগ সরাতেও এটি কার্যকর। সমপরিমাণ চন্দন গুড়া, দুধ, লেবুর রস আর হলুদ মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে মেছতা আক্রান্ত স্থানে মাখুন। এবার এটাকে শুকাতে দিন। শুকিয়ে গেলে পানির ঝাপটা দিয়ে মাস্কটা নরম করে সার্কুলার মোশনে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন।সপ্তাহে ৩/৪ দিন করে করুন যতদিন না কোন ইম্প্রুভমেন্ট দেখছেন।
এছাড়া উপরোক্ত পদ্ধতিগুলোর সাথে সাথে যথাযথ সান প্রটেকশন ব্যবহার করুন। হেলদি খাবার খান। প্রচুর পানি পান করুন। দেখবেন মেছতা চলে গিয়ে মুখ আবার ফ্রেশ হয়ে গিয়েছে।
ছবি – স্কিনকেয়ারবাইডিজাইন ডট কম
লিখেছেন – সুমনা ফাল্গুনী