আজকাল সবই কম বেশি রূপ সচেতন। বিশেষ করে মেয়েরা কম বেশি প্রতিদিন ক্রিম, ফাউন্ডেশন, লিপস্টিক, নেইলপলিশ লাগায়। আজকাল আবার ক্রিম এর মধ্যে বিভিন্ন রকম ভেদ আছে। যেমন – বলিরাখার ক্রিম, ব্রণ দূর করার ক্রিম, রঙ ফর্সা করার ক্রিম। আর আছে দাঁত সাদা করার পেস্ট, হেয়ার রিমুভাল ক্রিম। কিন্তু আপনি কি জানেন প্রেগনেন্সির সময় এসব বিশেষায়িত কস্মেটিক্স ব্যবহার করলে আপনার অনাগত বাচ্চার উপর কি প্রভাব ফেলবে? একটি জরিপে দেখা গিয়েছে একজন মেয়ে প্রতিদিন ১২ রকমের কস্মেটিকস ব্যবহার করে। প্রেগনেন্সির সময় কিছু কস্মেটিকস পরিহার করা ভালো। আমাদের দেশের ডাক্তাররা এখনও সেইভাবে প্রেগনেন্সিতে নারীকে সতর্ক করে না। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে Retinoids, Lead, Parabens আছে এরকম কস্মেটিকস ব্যবহার করেলে দেহে হরমোনাল পরিবর্তন আসে যা অনগত বাচ্চাকে বিকলাঙ্গ, মানসিক ভাবে ভারসম্যহীন করতে পারে। তাই প্রেগনেন্সিতে নারীদের কিছু প্রসাধনী সামগ্রী পরিহার করা উচিত অথবা সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
[picture]
০১. Parabens:
মোটামুটি বলতে গেলে সকল কস্মেটিকস এ এই উপাদান টি আছে, লোশান, ক্রিম, টোনার, ফাউন্ডেশন। Parabens অনেক ধরেনের হয়, যেমন propyl paraben, methylparaben ইত্যাদি। সকল paraben -ই পরিহার যোগ্য। কস্মেটিকস এর গায়ে উপাদানে paraben লেখা থাকলে সেটা ব্যবহার না করাই ভালো। আমাদের দেশে paraben ছাড়া লোশান, ক্রিম কম -ই দেখা যায়। কিছু আছে যেমন Nivea soft cream, J&j lotion(made in Italy) , lotus herbal cream, Himalaya, Biotique Botanicals ইত্যাদি।
০২. Salicylic Acid( BHA or beta hydroxyl Acid) :
এই উপাদানটি মূলত থাকে ব্রণ নির্মূল ক্রিম , বলিরেখা দূর করার ক্রিমে যা মুখ পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। Asprin এ যেহেতু Salicylic Acid আছে, তাই এইসময় এটা পরিহার করা উচিত। অতিরিক্ত Asprin গ্রহণে অনেক বড় সমস্যা দেখা দিতে পারে। ব্ল্যাকহেডস দূর করার Scrub এ Salicylic Acid থাকে, তাই scrub ব্যবহার না করে ১ চামচ চিনি আর ১ চামচ মধু দিয়ে Scrub বানিয়ে ব্যবহার করুন।
০৩. Retinol:
Retinol হলো একধরনের ভিটামিন এ , যেটা বলিরখা, ব্রণ দূর করে, স্কিন এর কোলাজেন এর সমতা রাখে। অতিরিক্ত ভিটামিন এ গ্রহণ বাচ্চার উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে, তা প্রমানিত হয়েছে। ভিটামিন এ যুক্ত যেকোন ক্রিম পরিহার করা ভালো।
০৪. Phthalates:
এই উপাদানটি ব্যবহার করা হয় নেইলপলিস তৈরীতে। আর ব্যবহার করা হয় পারফিউম, বডি স্প্রে , হেয়ার স্প্রে ইত্যাদিতে। ২০০৫ এর একটি পরীক্ষাতে দেখা গিয়েছে যে Phthalates যারা বেশি গ্রহণ করে, তাদের অনাগত ছেলে সন্তানের জেনিটল এর ক্ষতিকর পরিবর্তন সাধিত হওয়ায় খুব বড় সম্পর্ক পাওয়া গিয়েছে।
(বিঃদ্রঃ Phthalates বাচ্চা জন্মগ্রহণে কোন ক্ষতি সাধন করে না, শুধু ছেলে বাচ্চার জেনিটল ডেভেলপমেন্ট এ বাঁধা সৃষ্টি করে)
০৫. হেয়ার রিমুভাল ক্রিমঃ
প্রেগনেন্সির সময় এমন কিছু কস্মেটিক্স ব্যবহার করা উচিত না যেটা দেহে তাড়াতাড়ি Absorb করে এবং রক্তের সাথে মিশে যায়। প্রেগন্যান্ট নারীদের জন্য বেশি নিরাপদ হলো হেয়ার রিমুভাল ক্রিম, পারফিউম পরিহার করা। অনেক মেয়েদের-ই গায়ে বেশি লোম থাকে, তারা প্রাকৃতিকভাবে ওয়াক্সিং করাতে পারেন।
০৬. হোয়াইটেনিং টুথ ব্রাশঃ
Peroxide হলো দাঁত ফর্সাকারি পেস্ট এর মুল উপাদান। এটা যেহেতু ব্লিচিং প্রসেস তাই এটা পরিহার করাই ভালো। কিন্তু হোয়াইটেনিং টুথ ব্রাশ অনাগত বাচ্চার উপর কতো টুকু বিরূপ প্রভাব ফেলবে সেটা নিয়ে এখনও ডেন্টিস্টরা সন্ধিহান, কিন্তু পরিহার করার পরামর্শই দিয়েছেন। খুব ভালো হয় রেগুলার নরমাল পেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা, আর রেগুলার ডেন্টিস্ট এর সাথে চেক আপ করানো।
০৭. সানস্ক্রিন লোশানঃ
সানস্ক্রিন লোশান এ oxybenzone থাকে। একটি পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে যারা oxybenzone যুক্ত সানস্ক্রিন লোশান মাখে তাদের বাচ্চার ওজন কম হতে পারে। তাছাড়া এই উপাদান প্রেগনেন্সিতে হরমোন কে আরও সেন্সসেটিভ বানাতে পারে নরমাল এর থেকে। সানস্ক্রিন লোশান্ ব্যবহার না করে এমন কাপড় পরিধান করুন যেটা পুরো গা ঢেকে রাখে অথবা সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ২ টা র মধ্যে ঘরের বাইরে যাওয়া পরিহার করুন। যদি যেতে হয় তাহলে zinc oxide এবং titanium dioxide যুক্ত সানস্ক্রিন লোশান্ ব্যবহার করুন, এটি সূর্যের বেগুনী রশ্মি থেকে রক্ষা করবে, আর এই উপাদানটি শরীরে অথবা রক্তে মিশে যায় না।
০৮. Lead:
Lead যেটা লিপস্টিক তৈরীতে ব্যবহার করা হয়। খুব রিসেন্ট পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে Lead দ্বারা cancer, বাচ্চা বিকলাঙ্গ হতে পারে । কিন্তু দুঃখের বিষয় খারাপ থেকে শুরু করে ভালো অনেক লিপস্টিক কোম্পানির লিপস্টিক এ Lead পাওয়া গিয়েছে, কোম্পানি হার ৬১%। Maybelline color sensational range এর pink petal এ সব চাইতে বেশি Lead পাওয়া গিয়েছে, এই লিপস্টিকটি আমাদের দেশে অনেক জনপ্রিয়। কোন লিপস্টিক এ Lead আছে সেটা জানতে হলে , হাতে লিপস্টিক দিয়ে গোল্ডেন কয়েন দিয়ে ঘষে যদি দেখেন লিপস্টিক এর রঙ কালো হয়ে গিয়েছে, তাহলে বুঝবেন এটায় Lead আছে। আমাদের দেশে পাওয়া যায় মোটামুটি সব লিপস্টিক এ Lead আছে, যেমন Revlon, Loreal , Maybelline । একটু দাম দিয়ে কিনতে পারলে MAC লিপস্টিক কেনা ভালো।
প্রেগনেন্সির সময় কস্মেটিক্স ব্যবহার কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। সব প্রোডাক্ট এ খারাপ উপাদান থাকে না, খুব ভালো হয় যদি প্রাকৃতিক উপাদান আছে এমন প্রোডাক্ট ব্যবহার করা, আর নতুন কিছু অথবা কোন কস্মেটিক্স ব্যবহার করার আগে সেই প্রোডাক্ট সম্পর্কে ভালো করে জেনে নেওয়া। Parabens যুক্ত প্রোডাক্ট বানাতে ইউরোপ এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আমাদের দেশের মেয়েরাও অনেক সচেতন হয়েছে এই ব্যাপারে।
কিছু ছোট টিপসঃ
প্রেগনেন্সির সময় হরমোনাল পরিবর্তন আসে, এই কারণে অনেকের মুখে ব্রণ উঠে, তখন Accutane (isotretinoin), Retin-A (tretinoin), and tetracyclines ব্যবহারে বাচ্চার জন্মগত কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই তখন কোন মেডিসিন না খেয়ে ঘরে বসে প্রাকৃতিক ভাবে নিমপাতা, হলুদ বাটা দিতে পারেন। অনেক সময় প্রেগন্যান্ট নারীরা এণ্টি-রিঙ্কেল ক্রিম দিয়ে পেট মালিশ করে, সেটা না করাই ভালো, সেক্ষেত্রে অলিভ অয়েল ব্যবহার অনেক বেশি কাজে দেয়। প্রেগন্যান্ট নারীদের চুলে হাইলাইটস করা থেকে বিরত থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। প্রেগনেন্সির সময় ঘাড় কালো হয়ে গেলে ১ চামচ উপ্টান, ১ চামচ হলুদ বাটা, ১ টা এলাচি গুঁড়ো, ১ চামচ ঘি মিক্সড করে ঘাড়ে লাগান ঠিক হয়ে যাবে। রেগুলার ভিটামিন বি কমপ্লেক্স খাবেন।
একটু সচেতন হলে ক্ষতি কি? আশা করি পোস্ট টি আপনাদের ভালো লাগবে।
লিখেছেনঃ তাপসী
ছবিঃ জাম্পস্ট্রিটমল.কম