ওজন মাপার মেশিনে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে গেলো নীলার, ওজনটা আবার বেড়ে গেলো! বেশ কিছুদিন হলো ওজনটাকে কমানো যাচ্ছে না কিছুতেই। এইবার সিরিয়াসলি ডায়েট শুরু করতে হবে। যেমনি ভাবা তেমনি কাজ। নীলা রাতে ভাতের পরিবর্তে রুটি খাওয়া, জাঙ্ক ফুডের পরিবর্তে ফল খাওয়া শুরু করলো। কিন্তু ডায়েট করতে যেয়ে নীলাকে অনেক পছন্দের খাবার বাদ দিতে হচ্ছে আর অনেক স্বাদহীন খাবার খেতে হচ্ছে। ডায়েট মানে কি, মজার সব খাবার বাদ দিয়ে শুধু মাত্র টেস্টলেস খাবার খাওয়া? একদমই না। নীলা তার ডায়েট চার্টকে টেস্টি করে তুলছে কিছু মজাদার ৮টি খাবার যোগ করে। চাইলে আপনিও আপনার টেস্টলেস ডায়েটকে টেস্টিফুল করে তুলতে পারেন এই ৮টি খাবার যোগ করে। আসুন জেনে নেওয়া যাক কোন ৮টি খাবার আপনার মুখের স্বাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
ওজন কমাতে স্বাদবর্ধক ৮টি খাবার
১) ওটস
স্বাস্থ্য সচেতন অনেকের কাছে ওটস বেশ পরিচিত একটা নাম। সকালের নাস্তায় স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর নাস্তা বলতে ওটসকে বুঝিয়ে থাকে। ওটসে দ্রবণীয় ফাইবার রয়েছে যা দীর্ঘসময় পেট ভরিয়ে রাখে। যার কারণে সকালের নাস্তা এবং দুপুরের খাবারের মাঝে খুব বেশি কিছু খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এই খাবারটি মজাদার করতে এর সাথে কিছু কিসমিস, কাজু বাদাম, পেস্তা বাদাম মিশিয়ে খেতে পারেন। কিন্তু খেয়াল রাখবেন ওটসে যেন চিনি যোগ করা না হয়। তবে স্বাদ বৃদ্ধির জন্য মধু ব্যবহার করতে পারেন।
২) টকদই
ডায়েটের আরেকটি অন্যতম খাবার হলো টকদই। টকদইয়ে প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা পেটের ইনফেকশন দূর করে থাকে। উচ্চ প্রোটিন সম্পূর্ণ টকদই পেটকে দীর্ঘসময় ভরিয়ে রাখে এবং ক্ষুধার সময় সুগার লেভেল অটল রাখে। এতে প্রচুর ক্যালসিয়াম রয়েছে, যা ওজন হ্রাস করতে সাহায্য করে। ২০০৩ সালে টেনেসি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতিদিন ৩ বেলা টকদই পেটের ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে। ফ্রুট সালাদে টকদই দিয়ে খেতে পারেন। এছাড়া চিনি ছাড়া টকদইয়ের সরবরত খেতে পারেন।
৩) এয়ার পপকর্ন
পপকর্ন খবারটি কম বেশি সবার পছন্দ। ডায়েট করতে যেয়ে অনেকেই এই পছন্দের খাবারটি বাদ দিতে হয় । হোমমেইড এয়ার পপকর্ন আপনার পপকর্ন খাওয়ার শখ মেটানোর পাশাপাশি ওজন কমাতে সাহায্য করবে। এয়ার পপকর্নে অল্প পরিমাণের ভিটামিন, মিনারেল, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ভিটামিন এ, জিঙ্ক, আয়রন এবং কপার রয়েছে। তবে চিজ পপকর্ন বা সল্টেড পপকর্ন খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
৪) আপেল
আপেল নিয়ে সবচেয়ে প্রচলিত কথাটি হলো, প্রতিদিন একটি করে আপেল খান আর ডাক্তারকে দূরে রাখুন। ওজন কমানোর জন্য আপেল একটি আর্দশ ফল। আপেলের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান আপনার মেটাবলিজমকে বুস্ট করে, যা শরীরে বাড়তি মেদ ঝড়াতে সাহায্য করে। আপেলে রয়েছে ভিটামিন সি, বি কমপেক্স ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম এবং ফসফরাস। সারাদিনের ছোটখাটো ক্ষুধা দূর করতে আপেলকে খাদ্য তালিকায় প্রথমে রাখুন।
৫) গ্রিন টি
দুধ চা অথবা কফি পানের পরিবর্তে গ্রিন টি পান করুন। এটি আপনার ওজন হ্রাস করতে সাহায্য করবে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে। পেটের বাড়তি মেদ ঝড়াতেও গ্রিন টি বেশ কার্যকর।
৬) কটেজ চিজ
চিজ লাভারদের জন্য সুখবর এইবার ডায়েট করলেও খেতে পারবেন চিজ! কটেজ চিজ আপনার ওজন বৃদ্ধি করবে না বরং ওজন হ্রাস করতে সাহায্য করবে। কটেজ চিজে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে যা মেদ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে রয়েছে ভিটামিন এ, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, সেলিয়াম, জিঙ্ক এবং ফসফরাস। সালাদ, স্যান্ডউইচ কিংবা স্যুপে আপনি কটেজ চিজ ব্যবহার করতে পারেন। এটি আপনার বোরিং খাবারকে করবে আরো বেশি সুস্বাদু এবং মজাদার।
৭) গাজর
চোখের জ্যোতি বাড়াতে গাজরের জুড়ি নেই। শুধু চোখের জ্যোতি নয় ওজন কমাতেও সাহায্য করে গাজর। গাজরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণে বাঁধা প্রদান করে। ২০০৬ সালের বৃটিশ জার্নাল অফ নিউট্রিশন এক গবেষণায় দেখা যায়,গাজর আঁশযুক্ত হওয়ায় এটি শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। সালাদ কিংবা সবজিতে গাজর খেতে পারেন।
৮) কাঠবাদাম
ডায়েট মানে সবধরণের বাদাম খাওয়া নিষেধ এই ধারণাটা একদমই ভুল। কাঠবাদাম আপনার ওজন বৃদ্ধি করবে না, বরং আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে। কাঠবাদাম ফাইবার যুক্ত প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যা আপনার পেট ভরিয়ে রাখে দীর্ঘ সময়। আর কাঠবাদামের ভিটামিন ই হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ক্ষুধা লাগলে এক মুঠো কাঠবাদাম খেয়ে ফেলুন, এটি মুখের স্বাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি পেটকেও ভরিয়ে রাখবে দীর্ঘক্ষণ।
ছবি- সংগৃহীত: সাটারস্টক