“যখন ভুল থাকে খাদ্যাভ্যাসে, ঔষধে হবে না কোন সহযোগীতা
যখন খাবার থাকছে সঠিক, আসবে না ঔষধের কোন প্রয়োজনীয়তা”
ভালো পুষ্টিকর খাবার আমাদের সর্বাঙ্গীণ ভালো থাকায়, স্বাস্থ্যসম্মত শারীরিক কাঠামো ও যথাযথ ওজন বজায় রাখতে; পাশাপাশি বয়সজনিত রোগ প্রতিরোধে অপরিহার্য ভূমিকা রাখে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের দেহের পুষ্টি চাহিদাও পরিবর্তিত হয়।
নিউট্রিশনিস্ট শবনম মোস্তফা এর পক্ষ থেকে সবার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় পুষ্টি টিপস-
[picture]
মনযোগী হন স্বাস্থ্যকর খাবারে
খাদ্যতালিকায় ফলমূল ও শাকসবজি, ভালোমানের গুণগত প্রোটিন বা আমিষ এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকা জরুরী যেটি সাহায্য করে একটি সুনির্দিষ্ট ওজন বজায় রাখতে সেই সাথে কমিয়ে দেয় কিছু নিশ্চিত রোগের ঝুঁকিও।ক্যারোটিনয়েডযুক্ত ফলমূল ও সবজি যেমন টমেটো, গাজর, মিষ্টি আলু, তরমুজ এবং কাঁচামরিচ/গোলমরিচকমাতে পারে আপনার ক্যান্সারের ঝুঁকি। সবুজ পাতাযুক্ত শাকসবজি এবং বিভিন্ন ধরনের শস্যদানা, শিম এবং ডাল জাতীয় খাবার আপনাকে দিনভর সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
- বেশী বেশী আঁশযুক্ত খাবার খেয়ে নিজেকে পরিপূর্ণ রাখুন। ফাইবার বা আঁশজাতীয় খাবার আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে, ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখে এবং প্রতিরোধ করে টাইপ-২ ডায়াবেটিস।
- বয়স্কদের হাড় ঠিক রাখতে প্রয়োজন বেশী করে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি।
- পটাসিয়াম বাড়িয়ে পাশাপাশি সোডিয়াম বা লবন খাওয়া কমিয়ে দিলে উচ্চ রক্ত চাপের ঝুঁকি কমে যায়। পটাশিয়ামের সুষম উৎস হল ফলমূল, শাকসবজি এবং লো-ফ্যাট অথবা ফ্যাট ফ্রি দুধ, ও টকদই। পাশাপাশি লবন বিহীন খাবার নির্বাচন করুন এবং কম লবনযুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন।
- যদি আপনি প্রায়ই কোন কারণ ছাড়াই ক্লান্তিবোধ করেন, তাহলে দেরি না করে আপনার আয়রন লেভেলটি একটি রক্তপরীক্ষার দ্বারা চেক করে নিন।রক্ত শূন্যতা প্রতিরোধে আয়রণ যুক্ত খাবারের কোন বিকল্প নেই। উল্লেখ্য যে আপনার খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সি’যুক্ত খাবার যোগ করুন যেটি আয়রণ শোষণে সাহায্য করে।
কোমল পানীয় এবং বাজারজাতকৃত ফলের জুস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন
অ্যামেরিকার টাফ্ট বিশ্ববিদ্যালয়েরএকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, কোলা জাতীয় পানীয় এমন কি ডায়েট ড্রিঙ্কসেও থাকছে ফসফরিক এসিড যা হাড়ের ঘনত্ব কমিয়ে দেয়।প্রতিদিন তিন ক্যান ডায়েট কোলা আপনার হাড়ের মিনারেল ঘনত্ব ৫.১% কমিয়ে দিতে যথেস্ট।
নজর দিন পরিমান নিয়ন্ত্রনে
একটি খাবার স্বাস্থ্যকর মানে এই না যে সেটি অনেক পরিমানে ইচ্ছেমত খাওয়া যায়।ময়দার পরিবর্তে লাল আটা, চিপ্স এর পরিবর্তে বাদাম, মাখন এর পরিবর্তে অলিভ অয়েল-নিঃসন্দেহে এগুলো সবই একটি স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন। কিন্তু এগুলো লো ক্যালরির বিকল্প নয়; পাশাপাশি প্রোটিন নিয়ন্ত্রনে রাখাও জরুরী।
স্বাস্থ্যকর জীবন-যাপনের অভ্যাস করুন
কম ঘুমানো বিশেষ করে রাতে পাঁচ-ছয় ঘণ্টার কম ঘুম-আমাদের মেটাবলিজম বিলম্বিত করে সেই সাথে আনে কিছু হরমোনাল পরিবর্তন যা আপনার ওজন কমানোর প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটায়। এছাড়া ক্লান্তিবোধ থেকেও আপনি বেশী খেয়ে ফেলতে পারেন। একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, যারা পরিমিত ঘুম থেকে বঞ্চিত তারা প্রতিদিন বিশাল পরিমানে প্রায় পাঁচশোর মত ক্যালরি অতিরিক্ত খেয়ে থাকেন।
বয়স যাই হোক না কেন, স্বাস্থ্যকর খাবারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকলে নিজেকে সকল ক্ষেত্রেই প্রস্ফুটিত করা যায়-যেটি আপনাকে আপনার নিজের প্রতিশ্রুতিতে রাখবে শিখরে পাশাপাশিএকটি সুন্দর জীবন উপভোগের নিশ্চয়তা দেয়।
শুভকামনা।
ছবি – হেলথকেয়ার ডট কম
লিখেছেন – শবনম মোস্তফা, নিউট্রিশন কন্সালটেন্ট